যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে আজ (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ২২তম কমনওয়েলথ গেমস। এই আসরকে ঘিরে বার্মিংহামে বইছে উৎসবের আমেজ। যদিও উৎসবটা মূলত সিটি সেন্টারের আশপাশে। বার্মিংহাম শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার।
বিজ্ঞাপন
গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ হলেও ময়দানের লড়াই শুরু হবে আগামীকাল (শুক্রবার)। একযোগে ১১ ডিসিপ্লিন মাঠে গড়াবে প্রথম দিন। যেখানে চার ডিসিপ্লিনে লড়াই করবেন বাংলাদেশের ১২ অ্যাথলেট। এরমধ্যে সম্ভাবনাময় জিমন্যাস্টিকে প্রথম দিনেই দুই ইভেন্টে রিংয়ে নামবে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কমনওয়েলথ গেমস বাংলাদেশকে দিয়েছে অন্যরকম পরিচিতি। যদিও সেটা এসেছে শুটারদের কল্যাণে। এই আসরে এ পর্যন্ত পাওয়া আটটি পদকের সবকয়টিই এনে দিয়েছেন শুটাররা। ১৯৯০ অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে দুই শুটার আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনি ১০ মিটার এয়ার পিস্তল দ্বৈত ইভেন্টের ফাইনালে ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ান জুটিকে হারিয়ে রীতিমতো বিখ্যাত বনে যান। কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে প্রথম পদকের দেখা পায় বাংলাদেশ। আতিক-নিনির সোনায় মোড়ানো সাফল্য সাহস দিয়েছিল অনুজদের।
এরপর থেকে তাদের পথ অনুসরণ করেন শুটাররা। ব্যতিক্রম কেবল এবার। নিরাপত্তা ভাবনায় এবার শ্যুটিং রাখেননি আয়োজকরা। বাংলাদেশের আরেক সম্ভাবনাময় খেলা আরচারি জায়গা পায়নি ১৯টি ডিসিপ্লিনের তালিকায়। নারী ক্রিকেটের স্বপ্ন বাছাইয়েই সমাধি হয়ে গেছে। খুব জোর গলায় না হলেও ব্যক্তিগত কিছু ইভেন্টে ভালো কিছুর প্রত্যাশা আছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে জিমন্যাস্ট আলী কাদের হক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুরকে নিয়ে আশা দেখছেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্তারা। এছাড়া হাই জাম্পে মাহফুজুর রহমান ও উম্মে হাফসারাও আশাবাদী করছেন।
১৯ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা এবার অংশ নেবেন সাতটিতে। অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার ছাড়াও ভারোত্তোলন, জিমন্যাস্টিকস, কুস্তি, বক্সিং ও টেবিল টেনিসে থাকবে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব। এই সাত ডিসিপ্লিনের মধ্যে কাল চারটিতে নামছে বাংলাদেশ। বক্সিয়ে মোঃ হোসেন আলী, সুরু কৃষ্ণ চাকমা ও সেলিম হোসেন রিংয়ে দাঁড়াবেন। এদের মধ্যে হোসেন আলী ৬৩.৫-৬৭ কেজি ওজন শ্রেণিতে, সুরু কৃষ্ণ ৬০-৬৩ কেজিতে এবং ৫৪-৫৭ সেলিম হোসেন লড়াই করবেন।
এনইসি হলের চার নম্বর ফ্লোরে হবে বক্সিং। বাস্তবতার নিরিক্ষে বক্সার সুরু কৃষ্ণ চাকমা বলেন,'বৈশ্বিক এসব আসরে ভালো করতে হলে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দরকার তার ধারে কাছে নেই আমরা। সত্যি বলতে আমরা এটাকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ হিসেবে ধরে নিয়ে রিংয়ে দাঁড়াবো। চেষ্টা করবো নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ার। এরপর যদি কিছু হয়। '
গেমসের মূল ভেন্যু বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে সকালেই অনুশীলন সেরেছেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। সকালে অনুশীলনের ভেন্যু থেকে আক্ষেপ করে ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলেন,'গোলকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে আমি ষষ্ঠ হয়েছিলাম। এবার তার চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা কম। আমরা মাত্র চার মাসের অনুশীলনে এখানে খেলতে এসেছি। অন্য যারা প্রতিযোগী আছে তারা চার বছর প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে পারবো?' আগামী ১লা আগস্ট ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে লড়াই করবেন মাবিয়া।
এর আগে আজ সুর কৃষ্ণদের সঙ্গে প্রথম দিনেই জিমন্যাস্টিকে পুরুষ দলগত ইভেন্টে রিংয়ে নামবে বাংলাদেশ দল। যেখানে শিশির আহমেদ, আবু সাইদ রাফির সঙ্গে থাকছেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের হক। দলগত ইভেন্টের পাশে আলী কাদের লড়াই করবেন ফ্লোর এক্সারসাইজ ও ভল্টিং টেবিলে। এই আসরে তার এই দুই ইভেন্টের দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ। যদিও আলী কাদের নিজে খুব একটা আশা দেখাচ্ছেন না। বাংলাদেশের এই জিমন্যাস্ট বলেন,'আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আসর এটি। চেষ্টা করবো ভালো কিছু করার। '
এছাড়া পুরুষ টেবিল টেনিসে দলগত ইভেন্টে কাল টেবিলের লড়াই শুরু করবেন মোহতাসিন আহমেদ, রামহীম লিয়ন বর্ম, রিফাত মাহমুদ ও মুফরাদুল কায়ের হামজা। সাঁতারে প্রথম দিনে ৫০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে মাহমুদুন নবী নাহিদ ও ৫০ মিটার ব্রেস্টস্টোকে পুলে নামবেন মরিয়ম আক্তার।