রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাল্যবিয়েবিরোধী সচেতনতা সভা করেছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার বন্ধুরা।
পীরগঞ্জের উপজেলার গাজিখাঁ গ্রামের নুর ইসলাম দিনমজুরির কাজ করেন। অভাব-অনটনে দিন কাটে তার। তিনি ও তার দুই মেয়ে যা আয় করেন দিন শেষে হিসাবের খাতা শূন্যই থাকে।
বিজ্ঞাপন
নুর ইসলাম আফসোস করে বলেন, 'অভাব কিছুটা কমাতে ছোট্ট মেয়েটারে বিয়ে দিছিলাম। জামাই বারবার যৌতুক চায়, মেয়ের ওপর অত্যাচার করে। আমি কই থেকে টাকা-পয়সা দিবো? জামাইয়ের দাবি মেটাতে না পেরে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছি। মেয়েটিও ফিরে এসেছে। আমার এই অসচেতনতায় সংসারের অভাব তো কমলই না, উল্টা বাড়ল। '
শুধু নুর ইসলামই নন, এমন অসংখ্য অভিভাবক সচেতনতার অভাবে তাদের সন্তানদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন। এরপর কী হবে এটা তাদের ধারণায়ই নেই। এমন সব অভিভাবককে সচেতন করতে বার্তা ছড়ালেন পীরগঞ্জ উপজেলা শুভসংঘের বন্ধুরা।
সম্প্রতি পীরগঞ্জের গাজি খাঁ ও রসুলপুর এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষদের সচেতন করতে এ আয়োজন করা হয়। তাদের সচেতনমূলক নানা কথা বুঝিয়ে বলেন শুভসংঘ সদস্যরা। অনেক ধরনের উদাহরণ তাদের সামনে তুলে ধরেন। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন। সব শেষে সবার মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা শাখার সভাপতি আহসান হাবীব, সাধারণ সম্পাদক ফারজুল ইসলাম ও শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক।
আহসান হাবীব বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। করোনা-পরবর্তী সময়ে খেয়াল করলেই দেখতে পাওয়া যায়, বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই অসচেতনতা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটু বেশি। কিছুটা দরিদ্রতার জন্যও ছোট মেয়েকে অনেক মা-বাবা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দিয়ে মেয়েদের বোঝা মনে করেন অনেক অভিভাবক। অথচ তাদের সামান্য মনোযোগেই মেয়েটি পরিবারের জন্য ভরসা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বাল্যবিবাহ না দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনায় এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অভিভাবকের ইচ্ছাতেই বাল্যবিয়ে বেশি হয়। তাই অভিভাবক চাইলেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব। আয়োজনে উপস্থিত সকলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শপথ গ্রহণ করেন।
এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন তানিয়া আক্তার সুমাইয়া ইসলাম, দিলরুবা, সুমাইয়া আক্তার, নরু মুহাম্মদ, সনিয়া আক্তার, রুজবেল আহম্মেদ, সানিয়াতুল বিদা সাদিয়া প্রমুখ।