<p>জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে মহাকাশবিজ্ঞানীরা একটি বিশাল ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই ব্ল্যাকহোলটি তার মাতৃগ্যালাক্সিকে ধ্বংস করছে। তারা লক্ষ্য করেছেন, এই বিশাল ব্ল্যাকহোল তার আশেপাশের গ্যাস শোষণ করে গ্যালাক্সির তারকা জন্মের প্রক্রিয়া থামিয়ে দিচ্ছে। এই ধ্বংস প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ঘটছে কারণ ব্ল্যাকহোলটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ লাখ মাইল বেগে গ্যাসের ঝড় তৈরি করেছে।</p> <p>গ্যালাক্সিগুলোকে তখনই মৃত বা শান্ত বলা হয়, যখন তাদের তারকা তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত তারকা তৈরি হয় ঘন মেঘ এবং ধূলিকণার সাহায্যে। যখন এই গ্যাস ও ধূলিকণা শেষ হয়ে যায়, তখন তারকা জন্ম আর সম্ভব হয় না। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে সন্দেহ করছিলেন যে, গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলই তাদের গ্যাস ও ধূলিকণা শোষণ করে গ্যালাক্সিকে মেরে ফেলে।</p> <p>জেমস ওয়েবের এই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের সেই ধারণার প্রথম নিশ্চিত প্রমাণ। এই  গবেষণা ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা পরিচালনা করেছেন। তারা গ্যালাক্সির নাম দিয়েছেন GS-10578, তবে এর ডাকনাম পাবলো’স গ্যালাক্সি। পাবলো’স গ্যালাক্সি প্রায় সূর্য ১১০৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। </p> <p>কেমব্রিজের কেভলি ইনস্টিটিউটের গবেষক ফ্রান্সেস্কো ডি’ইউজেনিও জানান, ‘আগের পর্যবেক্ষণগুলো থেকে আমরা জানতাম যে গ্যালাক্সিটি একটি 'কোয়েন্সড' অবস্থায় আছে। তার আকার অনুযায়ী খুব কম তারকা তৈরি হচ্ছে। আমরা আশা করি যে ব্ল্যাকহোল এবং তারকা গঠনের শেষ হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশে স্থাপন করার আগে আমরা এই গ্যালাক্সিকে যথেষ্ট বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি।’</p> <p>এই গ্যালাক্সিটি প্রায় ২০০ বিলিয়ন সূর্যের সমান ভর ধারণ করে, যা বেশ অস্বাভাবিক। সাধারণত, প্রাচীন মহাবিশ্বে বেশিরভাগ গ্যালাক্সি তারকা তৈরি করতে থাকে, তাই এ ধরনের বিশাল এবং মৃত গ্যালাক্সি দেখা একটি বিরল ঘটনা। গবেষক দলের আরেক সদস্য রবার্তো মাইওলিনো বলেছেন, ‘এই সময়ে এমন একটি বিশাল মৃত গ্যালাক্সি দেখা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি এত বড় হওয়ার পর, তারকা তৈরি প্রক্রিয়াটি সম্ভবত খুব দ্রুত থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে, গবেষণা দলটি জানতে পেরেছে যে পাবলো'স গ্যালাক্সির কেন্দ্রে আছে অতিকায় এক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। সেটি ঘণ্টায় ২.২ মিলিয়ন মাইল গতিতে দূরে ঠেলে দিচ্ছে আশাপাশের ধুলিকণা ও গ্যাসকে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে। </p> <p>এই গ্যাসের গতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এত দ্রুত যে গ্যালাক্সির মহাকর্ষের প্রভাবকে অতিক্রম করে গ্যালাক্সির বাইরে চলে যেতে পারে। অনেক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের চারপাশে এমন গ্যাসের প্রবাহ দেখা যায়, তবে সাধারণত এই প্রবাহ খুবই কম ঘনত্বের হয়ে থাকে। কিন্তু JWST এমন একটি গ্যাস প্রবাহ শনাক্ত করেছে যা অন্য টেলিস্কোপগুলি লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই গ্যাসের প্রবাহের ঠান্ডা এবং ঘন হওয়ায় এটি খুব কম আলো নির্গত করে। ফলে অন্য টেলিস্কোপগুলো এটিকে দেখা যায়নি। তবে JWST-এর সংবেদনশীলতা এতই উন্নত যে এটি এই গ্যাসের প্রবাহকে শনাক্ত করতে পেরেছে, কারণ এটি পেছনের গ্যালাক্সির আলোকে বাধা দিচ্ছিল।</p> <p>গবেষণা দলটি দেখেছে, যে এই গ্যাস প্রবাহের ভর নতুন তারকা গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে পাবলো’স গ্যালাক্সির ব্ল্যাকহোল নতুন তারকা জন্মানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।</p> <p>ফ্রান্সেস্কো ডি'ইউজেনিও বলেন, ‘আমরা আসল অপরাধীকে খুঁজে পেয়েছি। এই ব্ল্যাকহোল গ্যালাক্সিটিকে 'মেরে ফেলছে' এবং তারকাদের গঠন বন্ধ করে দিয়েছে।’</p> <p>JWST এর এই পর্যবেক্ষণ গ্যালাক্সির বিবর্তন ও ব্ল্যাকহোলের ভূমিকা সম্পর্কে আগের ধারণাগুলোকে নিশ্চিত করেছে। তবে কিছু চমকও দিয়েছে। আগের তত্ত্বগুলো বলেছিল যে তারকা গঠনের শেষ হওয়ার প্রক্রিয়াটি গ্যালাক্সির আকার বিকৃত করতে পারে। কিন্তু পাবলো’স গ্যালাক্সির তারকারা এখনও সুশৃঙ্খলভাবে চলছে।</p> <p>গবেষক দলটি এখন জেমস ওয়েবের পর্যবেক্ষণের পর আলমা (Atacama Large Millimeter-Submillimeter Array) টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পাবলো’স গ্যালাক্সির চারপাশের ঠান্ডা, ঘন গ্যাসের উপস্থিতি ও ব্ল্যাকহোলের প্রভাব অনুসন্ধান করবে।</p> <p>এ বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে Nature Astronomy জার্নালে প্রকাশিত হয়।</p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম<br />  </p>