<p>ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত মশাবাহিত রোগ। সাধারণত এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস নামের দুই প্রকার মশার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। এই মশা দিনের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে এবং পরিষ্কার পানি জমে থাকলে সেখানে ডিম পাড়ে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর ৪-১০ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা জীবনহানিকরও হতে পারে। সঠিক জ্ঞান ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা এই রোগ থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে পারি।</p> <p><strong>ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর বিস্তারিত বিবরণ</strong><br /> ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর কাছাকাছি থাকে। তীব্র মাথা ব্যথা হয়। মাথার সামনের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। চোখের পেছনে পেছনে তীব্র ব্যথা হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পিঠে, কোমরে এবং পায়ের পেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। প্রচণ্ড বমি বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে বমিও হতে পারে।  ২-৫ দিনের মধ্যে ত্বকের ওপরে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।</p> <p><strong>ডেঙ্গুর মারাত্মক পর্যায়</strong><br /> ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হিসেবে পরিচিত। এটা জীবননাশক হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো :<br /> <strong>রক্তক্ষরণ : </strong>নাক, মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাঁধা।<br /> <strong>শরীরের পানি জমা : </strong>প্লাজমা লিকেজের কারণে তীব্র পানি জমে যাওয়া, যা অ্যাবডোমেন ও ফুসফুসের চারপাশে হতে পারে।<br /> <strong>শক সিনড্রোম : </strong>রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে, যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের গুরুতর ক্ষতি করে।</p> <p><strong>ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিস্তারিত পদক্ষেপ</strong><br /> মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা সব পানি নিয়মিত অপসারণ করুন। বিশেষ করে ফুলের টব, পুরনো টায়ার, প্লাস্টিকের কনটেইনার, ছাদে জমে থাকা পানি, বাথরুমের বালতি, এবং অন্যান্য যেকোনো পাত্র যেখানে পানি জমে থাকতে পারে। পানির পাত্র, যেমন পানির ট্যাংক, বালতি ইত্যাদি ঢেকে রাখুন যাতে মশা সেখানে ডিম পাড়তে না পারে। বৃষ্টির পানি যাতে জমে না থাকে তা নিশ্চিত করুন। বিশেষ করে ছাদ, বারান্দা এবং বাগানে।</p> <p>মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি নেওয়া যাতে পারে। দিন ও রাতের বেলায় বাইরে যাওয়ার সময় মশারোধী ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। ঘুমানোর সময়ও মশারোধী ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো। ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরুন, যাতে ত্বক মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য রাতে মশারি ব্যবহার করা জরুরি। দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। জানালা ও দরজায় মশারোধী জাল লাগিয়ে রাখুন, যাতে মশা ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।</p> <p>পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মাধ্যমে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুন এবং ময়লা ফেলে দিন। পানি জমার সম্ভাবনা থাকে এমন স্থান পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। বাড়ির আশপাশে জঙ্গল বা ঘন ঝোপঝাড় থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলুন। কারণ এসব স্থানে মশার প্রজনন হতে পারে।</p> <p><strong>ডেঙ্গু হলে কী করবেন?</strong><br /> ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শরীরের পানির অভাব পূরণের জন্য প্রচুর পানি পান করুন। ডেঙ্গুতে শরীরের পানি দ্রুত কমে যেতে পারে, তাই হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করবেন না। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সাধারণত ব্যবহৃত হয়, তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক ডোজে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।</p> <p><strong>সচেতনতা প্রচার এবং সামাজিক উদ্যোগ</strong><br /> ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আপনার এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। ডেঙ্গুর উপসর্গ এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ে প্রচারণা চালান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করুন এবং মানুষকে সচেতন করুন।</p> <p>ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মশার কামড় থেকে সুরক্ষা এবং সামাজিক পর্যায়ে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব। সচেতন থাকুন, সতর্ক থাকুন এবং ডেঙ্গুমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলুন।</p> <p>সূত্র : হেলথ টুডে</p>