<p>শুধু বব লেজার: এরিয়া ফিফটি ওয়ান অ্যান্ড ফ্লাইং সসার সিনেমাই নয়, এর আগে এরিয়া ফিফটি ওয়ানকে ঘিরে এমন সব সিনেমা আর টিভি সিরিজ তৈরি হয়েছে যেগুলো এর গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে। যেমন ১৯৯৬ সালে তৈরি বিখ্যাত সিনেমা ইনডিপেনডেন্স ডে। ওই সিনেমার মূল কাহিনি ছিল ভিনগ্রহের এলিয়েনদের পৃথিবী আক্রমণ। তারা এসেছে বিশাল আকারের এক ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট, উড়ন্ত সসার, উড়ন্তচাকি ইত্যাদি নামে ডাকা হয়)-তে চড়ে।</p> <p>প্রথম দিকে ভিনগ্রহীদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। পরে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের গবেষকেরা একটা উন্নত প্রযুক্তির মিসাইল তৈরি করেন। তার সাহায্যে ধ্বংস করা হয় এলিয়েনদের ফ্লাইং সসার। এই প্রযুক্তি তাঁরা পেয়েছেন বিখ্যাত রসওয়েল দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার করা ইউএফও থেকে। রসওয়েল দুর্ঘটনাও একটি গুজব। হ্যাঙ্গার ৫১ আরেকটি বিখ্যাত সিনেমা আছে এরিয়া ফিফটি ওয়ানকে নিয়ে। বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল সেভেন ডে, ভিডিও গেম এরিয়া ফিফটি ওয়ানেরও মূল ভিত্তি এরিয়া ফিফটি ওয়ানের রহস্য।</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/07/10/1405189"><span style="color:#c0392b"> আরও পড়ুন: এরিয়া ফিফটি ওয়ান: কেন এত রাখঢাক: পর্ব ২</span></a></p> <p><br /> এত্ত এত্ত গল্প, কাহিনি, গুজবের শিকড় আসলে যুক্তরাষ্ট্রের রাখঢাক নীতির কারণেই। কিন্তু কেন এত রাখঢাক? যুক্তরাষ্ট্র যে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বরাজনীতিতে, সমরে, অর্থনীতিতে সুপারপাওয়ার হিসেবে টিকে রয়েছে, এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী গোপনীয়তা নীতি। তেমনি অন্যদের গোপন তথ্য হাত করাতে তাঁদের মুনশিয়ানা বিস্ময়কর। সেই কাজটি করতেই আসলে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের সূচনা হয়েছে।</p> <p>এরিয়া ফিফটি ওয়ান আসলে নেভাডা অঙ্গরাজ্যের গ্রুম লেক ও এর আশপাশে লবণ সমতল ও মরুভূমি নিয়ে ৩০ লাখ একরের বিশাল অঞ্চল। এ অঞ্চল জনসাধারণের জন্য একেবারে নিশ্ছিদ্র। কোথাও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে, কোথাও বেড়া ছাড়াই। এমনকি এর আকাশসীমাও নিষিদ্ধ- বিদেশি বিমানের জন্য তো বটেই, খোদ মার্কিন বেসামরিক বিমানও এর ওপর ওপর দিয়ে চলতে পারে না। রাডার, সিসি ক্যামেরা ছাড়া মার্কিন এক দল প্রশিক্ষিত প্রহরী। তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা মানে নিশ্চিত মৃত্যু।</p> <p>১৯৪২ সালে মার্কিন নেভি সেখানে প্রথম একটি এয়ার বেস তৈরি করে। লবণ সমতলে নির্মাণ করে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এক কাঁচা রানওয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এয়ার বেসটি পরিত্যক্ত হয়। এর আগে ১৮৬০-এর দশকে ওই অঞ্চলে খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রুম লেক মাইনিং কোম্পানি রুপা ও সিসা উত্তোলন শুরু করে। একসময় সেই খনি পরিত্যক্ত হয়। গ্রুম লেক অঞ্চল পরিণত হয় বিরানভূমিতে।</p> <p>রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধ যখন চরমে ওঠে, তখন যুক্তরাষ্ট্র নতুন একধরনের গোয়েন্দা বিমান তৈরির কথা ভাবে। তখন তাদের হাতে যেসব বিমান ছিল, খুব বেশি উঁচুতে উড়তে পারত না। খুব বেশি ওপরে উঠতে না পারলে প্রতিদ্বন্দ্বীর আকাশসীমায় গিয়ে রাডার ফাঁকি দিয়ে নজরদারি করা সহজ হতো না। মার্কিনরা এমন একটা বিমান চায়, যেটা উঁচুতে ওঠার পাশাপাশি রাডারও ফাঁকি দিতে সক্ষম হবে।</p> <p>লকহিড এয়ারক্রাফট করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন বিমান তৈরি করতে। কিংবদন্তি বিমান ডিজাইনার কেলি জনশন হলেন এটির নকশাকার। তিনি একটি বিমানের নকশা তৈরি করেন, যেটা ৭০ হাজার উঁচুতে উড্ডয়নে সক্ষম। তৈরি হয় ইউ ২ (U 2) সিরিজের বিমান। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মালবাহী বিমানগুলোর ইউ সিরিজের। ইউ ২ নাম দেওয়া হলো কারণ, শত্রুরা যদি দেখেও ফেলে বা এটি বিধ্বস্ত হয়, অন্যেরা সেটা দেখে যেন মনে করে এটা সাধারণ মালবাহী বিমান।</p> <p>বিমান তৈরি হয়, কিন্তু সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বাঁধে ঝামেলা। একে তো গোয়েন্দা বিমান, তাছাড়া এত উঁচুতে উড়বে, সেই জিনিসের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নির্জন অথচ বিশাল বিরানভূমি চাই। একে একে ৫০টা এলাকা বাছা হলো, কিন্তু কোনোটাই জুতসই হলো না। শেষমেশ ওই গ্রুম লেক অঞ্চলে পাওয়া গেল চাহিদামতো জায়গা। এটা ছিল টেস্টের জন্য নির্বাচন করা একান্নতম জায়গা, তাই এর নাম হয়ে গেল এরিয়া ফিফটি ওয়ান। নামটা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি সিআইএ দিয়েছিল। তারাই এরিয়া ফিফটি ওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এখন পর্যন্ত তাঁদের হাতেই আছে নিয়ন্ত্রণভার।</p> <p>চলবে...</p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম<br />  </p>