<p>গিরগিটি রং পরিবর্তনের ক্ষমতার জন্য পরিচিত একটি প্রাণী। এই ক্ষমতা তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে সাহায্য করে এবং শিকারীদের থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। রং পরিবর্তনের পেছনে একটি জটিল প্রক্রিয়া কাজ করে। এ প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি বায়োলজিক্যাল এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে।</p> <p>গিরগিটির ত্বকে বিশেষ ধরনের কোষ থাকে যা ক্রোমাটোফোর নামে পরিচিত। এই ক্রোমাটোফোর কোষগুলোতে নানা রঙের পিগমেন্ট রঞ্জক পদার্থ থাকে থাকে। প্রধানত তিন ধরনের ক্রোমাটোফোর থাকে—জ্যানথোফোরস, ইরিডোফোরস ও মেলানোফোরস।</p> <p>জ্যানথোফোরস কোষগুলোর মধ্যে হলুদ ও লাল রঞ্জক থাকে। ইরিডোফোরস কোষগুলোর মধ্যে গায়ের রঙের প্রতিফলনকারী ক্রিস্টাল থাকে, যা আলোকে প্রতিফলিত করে এবং রঙের ভিন্নতা তৈরি করে। অন্যদিকে মেলানোফোরস কোষগুলোর মধ্যে কালো ও বাদামী পিগমেন্ট থাকে।</p> <p>এই কোষগুলো বিভিন্ন পিগমেন্টের স্থানান্তর ও ঘনত্ব পরিবর্তন করে গিরগিটির ত্বকের রঙ পরিবর্তন করে। তাপমাত্রা, আলোর পরিমাণ, এবং তাদের মানসিক অবস্থা (যেমন ভয় বা প্রজননের জন্য প্রস্তুতি) এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।</p> <p>গিরগিটির স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন সিস্টেম ক্রোমাটোফোর কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধরা যাক, একটি গিরগিটি একটি শীতল পরিবেশে রয়েছে। তখন এদের স্নায়ুতন্ত্র ইরিডোফোর কোষগুলোর প্রতিফলন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।  ফলে তারা হালকা রং ধারণ করে। অন্যদিকে, যদি গিরিগিটি উষ্ণ পরিবেশে থাকে, তবে মেলানোফোর কোষগুলো সক্রিয় হয় এবং গিরগিটি গাঢ় রং ধারণ করে।</p> <p>গিরগিটির এই রং পরিবর্তন কিন্তু অকারণে নয়। এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। রং পরিবর্তনের ফলে গিরিগিটি নিখুঁত ছদ্মবেশ নিতে পারে। চারপাশের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ফলে শিকারীদের ও শত্রুর চোখে ধুলো দেওয়া সহজ হয়।</p> <p>রং পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্যান্য গিরগিটির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ গিরগিটিগুলো মেয়ে গিরিগিটিদের আকর্ষণ করার জন্য উজ্জ্বল রং ধারণ করে।</p> <p>রং পরিবর্তন গিরগিটিরা তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে। হালকা রং বেশি তাপ প্রতিফলিত করে এবং গাঢ় রং তাপ শোষণ করে। তাই তাপমাত্রার পরিবর্তনে সহজেই গিরগিটিরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।</p> <p>গিরগিটির রঙ পরিবর্তন একটি আশ্চর্যজনক এবং জটিল প্রক্রিয়া। এটা  তাদের জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু প্রাকৃতিক শিকারীদের থেকে বাঁচার কৌশল নয়, বরং তাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার একটি অসাধারণ ক্ষমতা। গিরগিটির এই ক্ষমতা তাদের বেঁচে থাকার এবং প্রজাতি রক্ষার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।</p> <p>সূত্র: বিবিসি</p>