<p>অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক ম্যাটারের জনক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর নাম ফ্রিৎস জুইকি। ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করে নাম দিয়েছিলেন। জুইকির জন্ম বুলগেরিয়ায়। তাঁর বাবা সুইস নাগরিক হলেও মা ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের নাগরিক। জুইকি জুরিখের বিখ্যাত Eidgenössische Technische Hochschule (সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি)-এ পড়াশোনো করেন। এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উচ্চশিক্ষালয়। জীবনের প্রায় পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন।</p> <p>ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক) ছিল তাঁর কর্মক্ষেত্র। জুইকি ছিলেন ক্যালটেক প্রথম জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী। এক অর্থে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জুইকি ছিলেন চটপটে নিখাঁদ চিন্তার এক বিজ্ঞানী। তবুও তাঁর শুরুর দিকের ধারণা ও তত্ত্বগুলো সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের উপহাস করতেন। পরে অবশ্য ডার্ক ম্যাটার, নিউট্রন নক্ষত্র, মহাকর্ষীয় লেন্স এবং সুপারনোভার মতো বিষয়গুলো তখন থেকেই সবাই গ্রহণ করে নিয়েছেন। নিন্দুকরা চুপ হয়ে গিয়েছেন। এর পাশাপাশি জুইকি নিউক্লিয়ার গবলিন, সৌর ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং কৃত্রিম উল্কার উৎপাদন সমন্ধে নিজের চিন্তার কথা বলে গিয়েছেন। যেগুলো আজকালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বা গবেষণার রসদ। জুইকির অন্য আরেকটি অবদানের কথা বলা যাক এবার। তিনি গ্যালাক্সি শ্রেণিকরণে ছয় খণ্ডের তালিকা তৈরি করেন। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেট রকেট পরিচালনার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। </p> <p>বাকি সবাই যেখানে বাক্সের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে বলেন, জুইকি সেখানে নিজেই নিজের বাক্স তৈরি করে নিয়েছিলেন। যা ছিল তার মরফোলজিক্যাল বিশ্লেষণ (এমএ)। আকার, আকৃতি, গঠন নিয়ে আলোচনাই হলো মরফোলজি। এই বিশ্লেষণ মূলত একটা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানী সরঞ্জামের শুদ্ধতা, যা গোয়েথ কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। সব উপাত্ত জড়ো করে কাজ এগোয়। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এদের মাঝে সম্পর্কের বালাই দেখা যায় না। ম্যাট্রিক্সে থাকা উপাত্তগুলো সমস্যার সব সম্ভাব্য ফল এবং চমকপ্রদ উত্তরও দেখায়।   </p> <p>জুইকি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে অসাধারণ খ্যাতিমান একজন মানুষ ছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি সহকর্মী ও নিজের শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ সেই সুনামের কিছু ম্লান করে দিয়েছে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, যোগাযোগে তিনি ছিলেন বেশ দুর্বল। কারো মূর্খতা সহ্য করতে পারতেন না। কারণ তিনি নিজেকে সর্বদা সঠিক, জ্ঞানী ভাবতেই পছন্দ করতেন। ভাবতেন তিনি ছাড়া সবাই বোকা, এমনকি রবার্ট ওপেনহেইমারও। শিক্ষার্থীদের সাথে মনোমালিন্যের বিষয়টি জীবনসায়াহ্নেও স্থায়ী ছিল। এমনকি ১৯৭১ সালের ‘ক্যাটালগ অব সিলেক্টেড কম্প্যাক্ট গ্যালাক্সিস’ বইয়ে নিজেকে একটা নিঃসঙ্গ বীর নেকড়ে বলে দাবি করেছিলেন এবং বাকিদের দুর্বল ও অক্ষম গণ্য করেছেন।</p> <p><strong>জীবনপঞ্জি</strong><br /> <strong>১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮</strong><br /> বারনা, বুলগেরিয়ায় জন্ম।<br /> <strong>১৯০৪</strong><br /> পড়াশোনো করতে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান। জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন।<br /> <strong>১৯২৫</strong><br /> মার্কিন দেশে চলে আসেন। ফেলো হিসেবে ক্যালটেকে যোগ দেন।<br /> <strong>১৯৩৩</strong><br /> ডার্ক ম্যাটার সমন্ধে অনুমান করেন। <br /> <strong>১৯৩৪</strong><br /> সুপারনোভার দেখা পান। এবং ওয়ালটার ব্যাডের সঙ্গে ‘কসমিক রেস ফ্রম সুপারনোভা’ বই লেখেন।<br /> <strong>১৯৩৫</strong><br /> শ্মিট টেলিস্কোপ ব্যবহারের পথপ্রদর্শক। <br /> <strong>১৯৩৭</strong><br /> আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বুঝে পেলেন—গ্যালাক্সিগুচ্ছ এবং নীহারিকা মহাকর্ষীয় লেন্স হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। <br /> <strong>১৯৪২</strong><br /> ক্যালটেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।<br /> <strong>১৯৪৩-১৯৬১</strong><br /> অ্যারোজেট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে গবেষণা পরামর্শক/পরিচালক।<br /> <strong>১৯৪৯</strong><br /> রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা পদক অর্জন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রকেট প্রপালশন কাজের জন্য।<br /> <strong>১৯৬১-১৯৬৮</strong><br /> সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ছয় খণ্ডের ‘ক্যাটালগ অব গ্যালাক্সিস অ্যান্ড ক্লাস্টার্স অব গ্যালাক্সিস’ প্রণয়ন করেন।<br /> <strong>১৯৬৮</strong><br /> ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে ক্যালটেকে যোগদান।<br /> <strong>১৯৬৯</strong><br /> প্রকাশিত হয় ‘ডিসকোভারি, ইনোভেশন, রিসার্চ থ্রু মরফোলজিক্যাল অ্যানালিসিস’।<br /> <strong>১৯৭১</strong><br /> নিজ প্রকাশনায় প্রকাশিত ‘ক্যাটালগ অব সিলেক্টেড কম্প্যাক্ট গ্যাক্সিস’।<br /> <strong>১৯৭২</strong><br /> রয়াল অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির স্বর্ণপদক অর্জন।<br /> <strong>৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪</strong><br /> পাসাডেনায় মৃত্যুবরণ করেন। সুইজারল্যান্ডের মলিসে সমাহিত হন।<br />  </p>