<p>মহাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে থাকা এসব মেঘে প্রথম পর্যায়ের ফিউশনের পর প্রচুর ডিউটেরিয়াম তৈরি হয়। অর্থাত্ দুটো হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস যোগ হয়ে একটা নিউট্রন বিশিষ্ট হাউড্রোজেন নিউক্লিয়াস তৈরি করে। আর তৈরি হয় একটা করে পজিট্রন আর একটা করে ইলেকট্রন নিউট্রিনো। পজিট্রন আর নিউট্রিনো বেরিয়ে যায় নিউক্লিয়াস ছেড়ে। সবল নিউক্লীয় বলের প্রভাবে একটি নিউট্রন আর একটি প্রোটন বাঁধা পড়ে তৈরি হয় ডিউটেরিয়াম নিউক্লিয়াস। </p> <p>সাধারণ হাইড্রোজেনের পরমাণুর সাথে তখন সেই মেঘের ভেতর ঘুরে বেড়ায় অংসখ্য ডিউটেরিয়াম। তুলণামূলক ভারী পরমাণুর মেঘে পরিণত হয় সেই হাইড্রোজেন মেঘ। তাদের ভেতর ধাক্কাধাক্কি ছোটাছুটি চলতেই থাকে। তাপমাত্রাও বাড়ে সমানে। সাথে সাথে নিউক্লিয়ার ফিউশনের হারও বাড়ে। সাধারণ হাইড্রোজেন-হাইড্রোজেন ফিউশন যেমন চলে, একই সাথে চলে ডিউটেরিয়ামের সাথে সাধারণ হাইড্রোজেনের ফিউশন। </p> <p>আরও পড়ুন: সুপারনোভার জন্মকথা : পর্ব ১</p> <p>এতে উিউটেরিয়ামের নিউক্লিয়াসের সাথে হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে তৈরি দুটি প্রোটন আর একটি নিউট্রনওয়ালা হিলায়াম নিউক্লিয়াস। সেই সাথে উত্পন্ন হয় কিছু শক্তি। সেই শক্তি নিউক্লিয়াস ছেড়ে বেরিয়ে আসে আলোক শক্তি হিসেবে। দুই রকমের হাইড্রোজেন মিলেমিশে তৈরি করে বনে যায় হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে। এভাবেই চলে হাইড্রোজেনের হিলিয়াম গড়ার খেলা। একটা সময় হাইড্রোজেন মেঘ আর আর মেঘ থাকে না। তীব্র মহাকর্ষীয় টানে সেটা একটা গোলকের চেহারা পায়। <br /> নিউক্লিয়ার ফিউশনে যতটুকু তাপশক্তি দরকার হয় তার পুরোটাই কিন্তু কাজে লাগে না। কিছু তাপশক্তি হিলিয়াম তৈরির পরও অবশিষ্ট রয়ে যায়। হাইড্রোজেন পরমাণুর সংঘর্ষ আর ফিউশন থেকে তৈরি হওয়া তাপশক্তি আরও উত্তপ্ত করে তোলে গোলকটাকে। সেই গোলকই তখন হয়ে ওঠে তাপ আলোক শক্তির বিরাট আধার। বলার অপেক্ষা রাখে না, উত্তপ্ত সেই অগ্নিগোলকই একেকটা নক্ষত্র। বড়-মাঝারি-ছোট—কত রকম নক্ষত্র ছড়িয়ে আছে মহাকাশে। আমাদের সূর্যও একটা নক্ষত্র।<br /> একটা নক্ষত্র কতকাল জ্বলবে, তা নির্ভর করে নক্ষত্রের ভেতরকার হাইড্রোজেনের মোট পরিমাণের ওপর। শুধু হাইড্রোজেনই নক্ষত্রের জন্মকালের সঙ্গী। যে নক্ষত্রের ভেতর হাইড্রোজেন যত বেশি, তার ভরও তত বেশি। নক্ষত্রের ভরের ওপর নির্ভর করে সে কতকাল জ্বলবে। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, কোনো নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভরের তিন গুণ হয়, তাহলে সেই নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন মাত্র দুই কোটি বছরেই ফুরিয়ে যাবে। <br /> কারণ, ভর বেশি হলে মহাকর্ষীয় শক্তিও বেড়ে যায়। ফলে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেনের ওপর আরও বেশি মাত্রায় চাপ পড়ে। তাই হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসগুলো দ্রুত পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়। সেই অনুপাতে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায় প্রচণ্ডভাবে। সে কারণে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের দহন চলে খুবই দ্রুত তালে। ফলে দ্রুত ভেতরের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে আসে। বাড়তে থাকে হিলিয়াম পরমাণুর সংখ্যা। কিন্তু সূর্যের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটা অত দ্রুত নয়। <br /> বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, সূর্যের জন্মকালে যে পরিমাণ হাইড্রোজেন এর ভেতর জড়ো হয়েছিল, স্বাভাবিকভাবে সেটা নিঃশেষ হতে এক হাজার কোটি বছর সময় লাগবে। তারপর? এখন সূর্যের বয়স প্রায় ৫০০ কোটি বছর। মোট আয়ুর মধ্যগগনে। তার মানে আরও ৫০০ কোটি বছর হাতে আছে সূর্যের।<br /> সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে চলছে হাইড্রোজেনের নিউক্লীয় বিক্রিয়া। হাইড্রোজেন পুড়ছে। তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম। একদিন সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন প্রায় ফুরিয়ে আসবে। একসময় নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া করার মতো হাইড্রোজেন তেমন থাকবে না। বাড়বে হিলিয়ামের ঘনত্ব। সেসব হিলিয়াম মহাকর্ষীয় টানে পরস্পরের কাছে আসতে চাইবে। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হবে, তৈরি হবে বিপুল পরিমাণ তাপ। <br /> কিন্তু সেই তাপ কাজে লাগিয়ে হিলিয়ামের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটবে খুব কম। বিশাল পরিমাণ তাপশক্তি তাই জমা হবে সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে। কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কেন্দ্রে থাকবে অবশিষ্ট হাইড্রোজেন আর বাইরে হিলিয়ামের স্তর। প্রচ্ল সংকোচনের দরুন কেন্দ্রীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে সেটা অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপের প্রভাবে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বহিরাবরণটা প্রসারিত হতে থাকে। প্রসারণের কারণে কমতে থাকবে তাপমাত্রাও। আবার ইচ্ছা করলেই সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটা তো আর দেখতে পাই না। দেখতে পাই বাইরের পৃষ্ঠটা। যেহেতু তাপমাত্রা অনেকটাই খুইয়ে ফেলেছে, তাই এর উজ্জ্বলতা হয়ে গেছে অনেকটাই ফিকে। তাই সূর্যটাকে আর উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো দেখাবে না। দেখাবে টকটকে লাল একটা গোলকের মতো।<br />  </p>