<p>আপনার বন্ধু একটা টেনিস বল ছুড়ে মারল আপনার দিকে৷ কিন্তু ব্যাপার কেমন হবে, যদি বলটা বন্ধু ছোড়ার আগেই আপনার হাতে পৌঁছে যায়৷ ব্যাপারটা আপনার কাছে অলীক মনে হচ্ছে?</p> <p>কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জগতে সময় এমন আচরণ করতেই পারে।</p> <p>সময়ের তীর একদিকে যেমন সময়কে সুস্থিতি দিয়েছে, তেমনি অতীতে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করেছে। তাই আমরা সময়ের সঙ্গে শুধু ভবিষ্যতের দিকেই ধাবিত হতে পারি, অতীতে যেতেপারি না। ঠিক একই কারণে আমরা ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারি না। কিন্তু কোয়ান্টাম বিলবিদ্যা উল্টো কথা বলে। অর্থাৎ কোয়ান্টাম জগতে কণিকরা সময়ের পেছন দিকেও চলতে পারে না। এ নিয়ে আমরা আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।</p> <p>আমরা বলেছিলাম, সময়ের একটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশন থাকতে পারে। সেটা কেমন তা নিয়ে একটা আলোচনা করতে পারি। এ বিষয়ে ১৯৮৩ সালে কানাডার আলবার্টা বিশ্বদ্যিলয়ের গবেষক ডন পেজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটের উউলিয়ামস কলেজের গবেষক উইলিয়াম উটার্স একটি ধারণা প্রস্তাব করেন।</p> <p>ধরা যাক, একটা সিস্টেম বিভিন্ন কোয়ান্টাম অবস্থায় রয়েছে। এসব অবস্থার যে কোনো দুটিকে নিয়ে একটি করে নতুন অবস্থা তৈরি করা যেতে পারে। নতুন এই দুটি অবস্থা মিলে সিস্টেমটির একটা সুপারপজিশন তৈরি হবে। উদাহরণ হিসেবে একটা ইলেকট্রনকে বিবেচনা করতে পারি। এর স্পিন ঘড়ির কাঁটার দিকেও হতে পারে, উল্টো দিকেও হতে পারে। অর্থাৎ ইলেকট্রনটি এই দুই অবস্থার সুপারপজিশনে থাকতে পারে। এর আগে আমরা দেখেছি ইলেকট্রনেরা কণা ও তরঙ্গের সুপারপজিশনে থাকতে পারে আবার অবস্থান ও ভরবেগের সুপারপজিশনেও থাকতে পারে।</p> <p>সময়ের সুপারপজিশন পাওয়ার জন্য চলুন, আমরা একটা কোয়ান্টাম সিস্টেম তৈরি করি। ধরা যাক, এটি দুটি সাবসিস্টেম নিয়ে তৈরি। এ দুটির একটা হলো ঘড়ি, অরেকটা হলো অন্যসবকিছু। অর্থাৎ পুরো পরিবেশ, পৃথিবী, মহাবিশ্ব। </p> <p>ধরা যাক, ঘড়িটি প্রতিটা মুহূর্তকে আলাদা আলাদাভাবে পড়তে পারে। আপনি এবার এক সেকেন্ড পর পর ঘড়িকে একটা পাঠ নিতে বলুন। ধরুন দশ মিনিট ধরে,  এক সেকেন্ড পর পর একটা করে পাঠ নিয়েছেন। প্রতিটা পাঠের জন্য মহাবিশ্বের একটা করে অবস্থা ছিল। যখন আপনি ঘড়ির পাঠ নিচ্ছেন নিশ্চিতভাবে, ঠিক সেই মহূর্তের সিস্টেমটির বাকি অবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটা মুহর্তে আপনি ঘড়ির পাঠ যখন সুপষ্ট, ঠিক সেই মহূর্তে গোটা মহাবিশ্বের অবস্থা আপনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।</p> <p>আসলে সেই স্থির মহূর্তে মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোনো ধারণাই আমরা পাচ্ছি না। কোনো ঘটনা কি ঘটছে তখন? মূহর্তগুলোকে আলাদা আলাদা করে ছবির মতো করে দেখলে আসলে সেটা বোঝা অসম্ভব। কিন্তু আপনি যদি সবগুলো পাঠ পরপর যুক্ত করেন, তাহলে দেখবেন ঘড়ির বাইরে অর্থাৎ মহাবিশ্বেও ঘটনার একটি ক্রম তৈরি হয়েছে। এখানে সময়ের একটা সুপারপজিশন তৈরি হয়েছে।</p> <p>এখানে আসলে দ্বৈততা তৈরি হয়ছে গোটা সিস্টেমে। একটা হলো নির্দিষ্টি একটা ঘড়ির নির্দিষ্ট একটা পাঠ আরেকটা হলো সবকিছুর নির্দিষ্ট কনফিগারেশন। আমরা যে সিস্টেমটার কথা বলছি, সেটা একটা কোয়ান্টাম সিস্টেম। আর ঘড়িটা নিজেও সেই সিস্টেমের সঙ্গে এন্টেঙ্গেলড হয়ে আছে। যখন আমরা নির্দিষ্ট একটা সময়ে ঘড়ির পাঠ নিতে যাচ্ছি নির্দিষ্ট করে, তখন পুরো সিস্টেমটিই অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সময়কে মহাবিশ্বের একটি কোয়ান্টাম অবস্থার ভেতরে পাওয়া যেতে পারে, যেটা আমারা আগের অধ্যায়ের শেষে বলেছিলাম। এখানে মূল চাবিকাঠিটা হলো কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট।</p> <p>আমরা এখনো অধ্যায়ের শুরুতে করা প্রশ্নের জবাব পাইনি —আপনার বন্ধু বল ছুড়ে মারার আগেই কীভাবে সেটা আপনার হাতে পৌছে যাবে —কীভাবে। এর উত্তর আগামী পর্বে পাওয়া যাবে।</p> <p>সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট এসেনশিয়াল গাইড নং ১৯</p> <p><strong>হোয়াট ইজ টাইম </strong>সিরিজের আরো লেখা :</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/21/1328922"><span style="color:#c0392b;">১. সময় আসলে কী–বাস্তব নাকি প্রহেলিকা?</span></a></p> <p><span style="color:#c0392b;">২. </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/26/1330432"><span style="color:#c0392b;">সময়কে ধীর করে দিয়েছিলেন আইনস্টাইন?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/31/1331895"><span style="color:#c0392b;">৩. মহাকর্ষ বল কি সময়কে ধীর করে দেয়?</span></a></p> <p><span style="color:#c0392b;">৪. </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/11/14/1336132"><span style="color:#c0392b;">আমরা কিভাবে সময় অনুভব করি?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/05/1342747"><span style="color:#c0392b;">৫. পাহাড়ের চেয়ে সমতলে সময় ধীরে চলে!</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/14/1345524"><span style="color:#c0392b;">৬. আমরা কেন ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারি না?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/21/1347594"><span style="color:#c0392b;">৭. এনট্রপি কী? এটা কেন এত রহস্যময়?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/22/1347892"><span style="color:#c0392b;">৮. মহাবিশ্বের তাপীয়-মৃত্যু ও কালের কফিন</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/29/1350110"><span style="color:#c0392b;">৯. যেখানে সময় পিছিয়ে যায়</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/01/02/1351301"><span style="color:#c0392b;">১০. বর্তমান বলে কিছু নেই, আমরা কি অতীতে বাস করি?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/07/1361514"><span style="color:#c0392b;">১১. সময় কেন দ্রুত বয়, অপেক্ষার প্রহর কেন দীর্ঘ হয়?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/02/17/1364390"><span style="color:#c0392b;">১২. ব্লক ইউনিভার্স : অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ যেখানে একসঙ্গে থাকে</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/03/21/1373448"><span style="color:#c0392b;">১৩. চতুর্থ মাত্রা যেভাবে এলো</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/03/12/1370930"><span style="color:#c0392b;">১৪. কালের কোয়ান্টাম দশা</span></a><span style="color:#c0392b;"> </span></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/05/09/1386321"><span style="color:#c0392b;">১৫. আলোক শঙ্কু ও সময়</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/05/26/1391572"><span style="color:#c0392b;">১৬. বিশ্বরেখা : স্থান ও কাল যেখানে একটি রেখায় মিলেছে</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/06/06/1395146"><span style="color:#c0392b;">১৭. কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও স্থানকাল</span></a></p>