<p>মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, সমাজসংস্কারক এবং মুক্তচিন্তাবিদ, যিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলার মুসলিম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি 'সওগাত' নামক একটি বিখ্যাত সাহিত্য ও সমাজ-চেতনামূলক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, যা বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল।</p> <p>মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৮৮৮ সালে চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, ব্যক্তিগত পড়াশোনা তাঁকে ক্ষুরধার লেখক ও বুদ্ধিজীবীতে পরিণত করেছিল।</p> <p>প্রথম জীবনে একটি ইনস্যুরেন্স কম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর কলকাতায় চলে যান এবং সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নেন। ১৯১৮ সালে বিখ্যাত সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা ‘সওগাত’ প্রকাশ করেন। ‘সওগাত’ মুসলিম সমাজের নারীশিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ-রীতিনীতি ও রাজনীতির বিষয়াদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।</p> <p>নাসিরউদ্দীন মুসলিম নারীর অধিকার ও শিক্ষার জন্য কাজ করেন। ‘সওগাত’-এর মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষা, সমাজে সমান অধিকার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিধবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।</p> <p>নাসিরউদ্দীন সমাজের কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তিনি জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, বহুবিবাহ, শিশুবিবাহ, পণপ্রথা, জাদু-টোনা, ভূত-প্রেত ও কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করেন সওগাতের মাধ্যমে।</p> <p>বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় নাসিরউদ্দীন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ‘সওগাত’-এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল হাসেম, আহসান হাবীব, শওকত ওসমান, সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়ার মতো লেখকদের লেখা প্রকাশিত হতো নিয়মিত।</p> <p>১৯৯৪ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।<br />  </p>