<p>যেকোনো উপন্যাস, চলচ্চিত্রের মূলভাব বোঝার আগে অনেক ঔপন্যাসিক তার পাঠকদের জন্য কিংবা নির্মাতা তার দর্শকদের জন্য প্রিকুয়েলের ব্যবস্থা করেন। আমি ছোট্ট পরিসরে অধ্যায় এক এবং দুইয়ে আপনাদের সবার জন্য তেমনিভাবে প্রিকুয়েলের ব্যবস্থা করেছি। এই অধ্যায় থেকে আমি মূল বিষয়ে প্রবেশ করতে চলেছি।</p> <p>বিগত অধ্যায়ের টেবিল-১-এর নিচের দিকে লক্ষ করুন। 'Personality Disorder' বা ব্যক্তিত্বের ব্যাধি নামে একটি প্রধান বিভাগ দেখতে পাবেন।</p> <p>ব্যক্তিত্বের ব্যাধি বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট মানসিক ব্যাধির ধরন যেখানে কিছু বেদনাদায়ক উপসর্গের উপস্থিতি দেখা যায়। নিজের ব্যবহার, চিন্তা করার ক্ষমতা, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ এবং সেই শিক্ষাকে ভবিষ্যতের জন্য ব্যবহার করার ক্ষমতার ক্ষেত্রে অপারগতা দেখা যায়।</p> <p>ব্যক্তিত্বের ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনমনীয়। অপরের অধিকার, আবেগ-অনুভূতি এবং আইনের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র পরোয়া নেই। সাধারণ মানুষের সাথে তাদের ব্যক্তিত্বের এই অসংগতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মুখোমুখি হতে হয় নানামুখী চ্যালেঞ্জের।</p> <p>একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে অপরাধ করার পর মুক্তি পাবে নাকি আদালতে শাস্তি পাবে তা বের করার জন্য শুধু দুটি বিষয় মাথায় রাখবেন—<br /> ১. অপরাধ যখন হচ্ছিল তখন অপরাধী ঠিক আর ভুলের পার্থক্য জানত কি না।</p> <p>২. অপরাধী অপরাধ সংঘটনের সময় বাস্তব জগতে না থেকে কোনো কাল্পনিক জগতে থাকত কি না।'</p> <p>এই দুই শর্তের মাধ্যমেই নিরূপণ করা হয় একজন ব্যক্তির মানসিক অসুস্থতার অজুহাতকে বাতিল করে কাঠগড়ায় তোলা সম্ভব কিনা।</p> <p>এবার ভেবে বলুন তো, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার বা ব্যাক্তিত্বের ব্যাধিগ্রস্তরা অপরাধ করলে শাস্তির মুখোমুখি হবে কি না!</p> <p>আমি জানি আপনারা সবাই উত্তরটি জানেন। কেন হবে না? অবশ্যই হবে। পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের রোগীদের রোগী বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে দীর্ঘদিন তর্ক-বিতর্ক চলেছে। মস্তিষ্কের গঠন, ক্রমোসোমের অন্তর্গত নির্দিষ্ট জিনের গঠন এবং পরিবেশ-এ তিনের জটিল মিথস্ক্রিয়ায় পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার গড়ে ওঠে।</p> <p>যেহেতু মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চল আর জিন কোনো ব্যক্তির সমস্যাপ্রদ ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে—বাধ্য হয়ে নিউরো- ডেভেলপন্টাল এবং জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞরা একে DSM-5 এ রাখতে বাধ্য হয়।</p> <p>DSM 5 এ পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার বা ব্যক্তিত্ব ব্যাধিকে ক্ল্যাস্টার A, B, C উপভাগে ভাগ করা হয়েছে। চলুন, উদাহরণসহ এই বিভিন্ন উপবিভাগের জগৎ থেকে ঘুরে আসা যাক।</p> <p><strong>ক্ল্যাস্টার পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার : </strong>এ ধরনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে বলে অদ্ভুত এবং বেখাপ্পা ধরনের ব্যাধি। এই ক্যাটাগরিতে তিন ধরনের ডিজঅর্ডার রয়েছে। আগামী পর্বে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে।</p> <p>লেখক: চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক<br />  </p>