<p>ইলিশ মাছকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। বাঙাল সবার জীবনে ইলিশ নিয়ে খুব ছোট্ট হলেও গল্প আছে। আছে স্বামী বিবেকানন্দেরও।<br /> ১৮৯৯ সালের দিকে স্বামীজি পদ্মার পার ধরে ভ্রমণ করছিলেন। একজন জেলে ১ টাকা দিয়ে ষোলটা সদ্য ধরা তাজা ইলিশ মাছ দিলেন। মাছ কেনার পর স্বামীজি এইবার পুঁইশাকের খোঁজে তীরে নেমে পড়লেন। ওঁর শাক ইলিশ খাওয়ার শখ হয়েছিল, কিন্তু অনেক খুঁজেও কোথাও পুঁইশাকের হদিশ পাওয়া গেল না। শেষে এক গেরস্থের বাড়িতে পাওয়া গেল পুঁইশাক, কিন্তু ঐ লোকের একটাই শর্ত স্বামীজি আগে ওকে ওঁর শিষ্য করবেন তবেই সে পুঁইশাক দেবে। স্বামীজি শেষে নাকি ইলিশের জন্যেই ওই গেরস্থকে শিষ্য করে নেন। রামকৃষ্ণদেবের গল্প আছে কিনা মনে করতে পারছি না।</p> <p>দুই বাংলায় ইলিশ নিয়ে বেশ ঘ্যামচক্করও আছে। দুই জায়গারই বাঙালীর কাছে অন্য জন ঘটি। ঢাকাইয়ার কাছে কলকাতার বাবুরা ঘটি আবার কোলকাতার বাঙালীর কাছে বাংলাদেশী বাঙাল হচ্ছে ঘটি। কলকাতার লোকেরা গঙ্গার ইলিশকে এগিয়ে রাখেন আর এপারে সবাই এগিয়ে রাখে পদ্মার ইলিশকে। ওইদিন আমার বন্ধু ফাহাদের শেয়ার করা ছবিতে দেখলাম কানাডায় ইলিশ প্লাষ্টিকের মোড়কে মুড়ে উপরে ‘পদ্মার ইলিশ’ স্টিকার মেরে বিক্রি হয়।</p> <p>শুধু বাঙালী নয় বৃটিশরাও ইলিশ মাছের প্রেমে পড়েছিলেন। কাঁটা বেছে খাওয়া বেশ কঠিন কাজ। তাই তারা নিলেন অন্য রাস্তা। উনারা দেখলেন ইলিশ মাছকে যদি কোনও টক জাতীয় জিনিস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা হয় তাহলে কাঁটা গলে যায়। তাই আবিস্কার হলো ইলিশ মাছ দিয়ে তেঁতুলের আচারের (Tamarind Pickled Hilsa) রেসিপি। ইলিশ রান্নায় আরেকটা সমস্যা হচ্ছে চুলায় বেশি সময় রাখা যায় না, টুকরো ভাঙে, আবার ইলিশের প্রয়োজনীয় সুবাসটাও হারায়। রান্নাতেও দুই রকমের প্রিপারেশন আছে। পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া এবং সহ।</p> <p>দিল্লীর এক ডাক্তারকে কোনভাবেই ইলিশের মাহাত্ম্য বোঝাতে না পেরে পোনা সাইজের ইলিশ হাজার খানেক টাকায় কিনে আমার অতি অপক্ক হাতে রান্না করে খাইয়েছিলাম। ব্যাটা আমাকে একপিস দিয়ে গোটাটা সাবড়ে দিয়েছিল। ঘটনাস্থল মালদ্বীপ।</p> <p>আজ বাসায় এসে শুনি রান্না হয়েছে ইলিশ চালতা। খাইনি কখনো, শুনলাম দিদিমার রেসিপি। অবাক হয়েছি কারণ দিদিমার সমস্ত রেসিপিই খাওয়া হয়েছে মনে করেছিলাম, এখন কোন ঝুলির ভেতর থেকে এগুলো বেরুচ্ছে, কে জানে!</p> <p>সারাদিন ভাত খাইনি। বেদম দৌড়ের উপর যাচ্ছে দিনকাল। বাসায় এসে পেটের ভেতর হাতি হজমের অবস্থা ছিল। চুলা থেকে মাত্র নামানো ভাত! গরম ভাতের সুবাসটা আমার খুব পছন্দ। নাকে এলেই মনে হয় বসে পড়ি খেতে। সেটা যদি লাকড়ির চুলোয় রান্না হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সেই ভাতের মোহিনী সুবাসের সাথে ইলিশ চালতা।</p> <p>পাতে নিয়ে আগে একগ্রাস সাদা ভাত চালান করে দিলাম। গরম ভাত জিভে ছ্যাঁকা দিয়ে মনে হলো জিভকে রেডি করে নিলো। পাতলা ঝোলের চালতা ইলিশ পাতে। ঝোল দিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে নিতেই আনমনা। ইলিশের সুবাস...! ভাতটা চালতার কারনে সামান্য টকে গেল। ইলিশের মোলায়েম টুকরোয় হাত বুলিয়ে খুব প্রেম নিয়ে ভেঙে চালান করে দিলাম। ইলিশ যখন ভাঙে তখনও প্রতিটা অংশের আলাদা অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। ইলিশের পেটির টুকরোয় একটা মজা আছে। খয়েরী অংশটার এক স্বাদ, মেরুদন্ডের কাছটায় এক স্বাদ, একটু তেলতেলে আর বাকী অংশের স্বাদ আলাদা।</p> <p>দু টুকরো মাছ, চামচ -চামচ ঝোল আর ফালি করে কাটা চালতা দিয়ে গামলা খানেক ভাত কোন ফাঁকে যে শেষ হয়ে গেলো!<br /> বাঙালের ইলিশ,<br /> ইলিশের বাঙাল!</p>
