<p>ধরুন, রিনি নামের এক অসাধারণ সুন্দরী কিশোরী ঢাকায় থাকে। সে বিখ্যাত নায়ক টম ক্রুজের ভক্ত। প্রিয় নায়কের জন্য ভালোবাসা কয়েক বছর পর গেল অবসেশনের দিকে। সারাক্ষণ টম ক্রুজের জীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে জানতে গিয়ে রিনির ব্যক্তিগত জীবনের প্রাত্যহিক কাজ যেমন খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখার ক্ষতি হতে লাগল। অবসেশন পর্যন্ত রিনির মানসিক রোগ <a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/03/28/1375402">নিউরোটিক টাইপের অন্তর্ভুক্ত ছিল</a>।কিন্তু অবসেশনের মাত্রা ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে রিনির মাঝে সাইকোসিস দেখা দিলো।</p> <p>রিনি ভাবতে শুরু করল টম ক্রুজ তাকে বিয়ে করেছে। প্রতদিন টম ক্রুজের জন্য রান্না করে থালা সাজিয়ে রাখতে লাগল। টম ক্রুজের একটা মূর্তি বানিয়ে নিজের বেডরুমে রাখল। ধারণা হলো মূর্তিটিই রক্ত মাংসের টম। এরপর একদিন মূর্তির গলা থেকে আওয়াজ শুনতে পেল। রিনি পুরোপুরি সাইকোসিসের রোগীতে পরিণত হলো।</p> <p>সে নিশ্চিত, টম ক্রুজ তার স্বামী। কারণ টম তার সাথে গল্প করছে, তার রান্না করা খাবার খাচ্ছে। এক রাতে নিজের গায়ে টমের স্পর্শও পেল রিনি। কিছুদিন পর তার বমি বমি ভাব হওয়ায় সে ঘোষণা দিল, ‘আমি টম ক্রুজের বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি।’ বাবা মা বন্ধুবান্ধব প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে বাড়াবাড়ি অবসেশন ভাবলেও পরবর্তীতে ঘাবড়ে গেল। একজন হাতুড়ে ডাক্তার পরামর্শ দিল, ‘মেয়ের বিয়ে দেন, ঠিক হয়ে যাবে।’</p> <p>বাবা মা সেই পরামর্শ মত জোর করে রিনিকে ধরে নিজেদের পারিবারিক বন্ধুর ছেলে জয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। জয় ছোটবেলা থেকেই রিনিকে খুব ভালবাসত। খুবই সুন্দরী ছিল রিনি, যে কেউই ওকে পছন্দ করবে। তাই টম ক্রুজকে নিয়ে রিনির অবসেশন জেনেও জয় খুব একটা পাত্তা দিল না। স্বামীকে বাসর রাত থেকেই সহ্য করতে পারতনা রিনি। আগন্তুকের মতো ব্যবহার করত। ধমকাধমকি করত। কিন্তু স্বামী ভাবল, ‘আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে ভালো করে দেব। ভালোবাসার শক্তি পর্বতকে টলাতে পারে।’ রিনিকে ডাক্তার দেখালেও খুব একটা লাভ হচ্ছিল না। ঠিকঠাক ওষুধ খাওয়ানো যেত না তাকে। দিনে দিনে রিনির পাগলামি চরমে পৌঁছে গেল। একদিন রাগের মাথায় জয় রিনির সামনেই টম ক্রুজের মূর্তি ধরে জোরে আছাড় মারলো। মূর্তি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেল। সাইকোসিস আর সিজফ্রেনিয়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেল রিনি। ডিলিউশনের সাথে সাথে ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন হচ্ছিল ওই উত্তেজনাদায়ক মুহূর্তে। চোখের সামনে দাঁড়ানো স্বামীর জায়গায় দেখতে পাচ্ছিল ধারালো দাঁত বিশিষ্ট এক রাক্ষসকে।</p> <p>আর টম ক্রুজের মূর্তি ভেঙে যাওয়াকে নিছক এক মূর্তি ভেঙে যাওয়া হিসেবে দেখল না রিনি। কারণ সে সিভিয়ার সাইকোটিক রোগী। ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন তাকে দেখতে বাধ্য করল, তার প্রাণপ্রিয় স্বামী টম ক্রুজকে এক রাক্ষস আক্রমণ করে মেরে ফেলেছে। মূর্তির গলা থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনল রিনি- যা অডিটরি হ্যালুসিনেশন।</p> <p>কল্পনার জগৎকে নিজের আসল জগৎ মনে করে বসবাস করা রিনি স্বামী টম ক্রুজের হত্যাকারী দাঁতালো রাক্ষসকে দেখে আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারল না। রান্নাঘর থেকে ধারালো বটি এনে রাক্ষস ওরফে নিজের আসল স্বামী জয়ের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দিলো।<br /> আপনাদের মাঝে যারা ভালোবেসে ভালো করে দেওয়ার তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তাঁরা এ মনোভাব থেকে এখনি সরে আসুন।<br /> জয়ের পরিবার রিনিকে ফাঁসির কাষ্ঠে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে রিনি সিভিয়ার সাইকোটিক সিজোফ্রেনিক রোগী। জেলের বদলে তাকে পাঠানো হলো পাবনার মানসিক হাসপাতালে।</p> <p>এখন আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন,<a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/03/24/1374243"> ঝন্টুকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল</a>। আরও বুঝতে পারছেন, নিউরোটিক রোগী কেন আদালতের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য পাগল সাজার অভিনয় করে মোদ্দা কথা হলো, আপনার, আমার কিংবা পাশের বাসার আন্টি বা রাস্তায় ডাব বিক্রি করা আনিস ভাইয়ের কাছে যা ‘পাগল’ বা ‘পাগলামি’, বিশেষজ্ঞদের মতে তা-ই সাইকোটিক ডিজঅর্ডার। </p> <p>লেখক: চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক</p>