<p>অতি সুখ কপালে সয় না, তাই সুখের উল্লাসটা একটু কম করাই ভালো। সৈয়দ আবদুল হাদি গেয়েছেন, হাসির পরে কান্না আছে/দুঃখের পরে সুখ/আঁধার রাতের শেষে যেমন/দেখিস আলোর মুখ।</p> <p>উত্থান-পতন থাকবেই, দুঃখে ভেঙে পড়ে হার মানলে যেমন চলে না, তেমনি অতি সুখে ভেসে গেলেও পা হড়কানোর ঝুঁকি থাকে। তাই প্রবাদ বাক্যে বলছে : ‘যত হাসি তত কান্না/বলে গেছে রাম সন্না।’ কিন্তু কে এই রাম সন্না? অনলাইন ঘেঁটে খুব বেশি কিছু পাওয়া যাবে না। হয়তো আছে কোনো বইয়ে তার খবর, সেই বইটার খবর তো আগে জানতে হবে? এই লেখকের সেই সৌভাগ্য হয়নি, রাম সন্নাকে নিয়ে লেখা কোনো বইয়ে দেখা পাওয়ার। তবে একেবারে যে কিছু চোখে পড়েনি, সেটা বললেও অন্যায় হবে।</p> <p>নন-ফিকশন না হোক, ফিকশনধর্মী কয়েকটা বই আছে তাতে দেখা মেলে রাম সন্নার। এমনকি তার পরিচয়ের খানিকটা আভাসও মেলে সেসব থেকে। প্রবাদপ্রতিম কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব প্রবাদের পুরোটা ব্যবহার করে তার এক বইয়ের নামকরণ করেছেন ‘যত হাসি তত কান্না বলে গেছে রাম সন্না’। এ বইয়ের ভূমিকায় লেখক এক লাইনে দিয়েছেন রাম সন্নার পরিচয় ‘রাম সন্না’ (সন্ন্যাসী?) নামের কেউ একজন বলে গেছেন ‘যত হাসি তত কান্না’ যত হাসবে ততটাই কাঁদতে হবে। এমনটাই নাকি নিয়ম। তবে প্রচুর হাসতে হাসতে আমাদের চোখে অনেক সময় পানি চলে আসে। কিন্তু রাম সন্না যে সন্নাসী ছিলেন, সেটা কিভাবে আহসান হাবীব জানলেন, সেটা জানতে পারলে এই লেখাটা আরেকটু বিস্তারিত লেখা যেত।</p> <p>বাংলার আরেক বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, যিনি অলীক মানুষ উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত, থ্রিলার ঘরানার লেখাতেও তিনি মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। কর্নেল অর্থাৎ নিলদ্রী সরকার তার জনপ্রিয় থ্রিলার চরিত্র। এই কর্নেলকে নিয়েই তিনি লিখেছেন বিখ্যাত এক বই ‘বলে গেছেন রাম সন্না’। এখানে অবশ্য রাম সন্নার একটু বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ের শুরু দিকের কয়েকটা লাইনে তুলে দিলাম :</p> <p>“ফোঁস করে ফের শ্বাস ছেড়ে কর্নেল বললেন, তুমি কি এই প্রবাদ শুনেছ ডার্লিং? যত হাসি তত কান্না বলে গেছেন রাম সন্না।</p> <p>–শুনেছি। সত্যি তো হাসি ভালো নয়। জগমোহন কেঁদে কূল পাবে না পরে।</p> <p>কর্নেল বললেন, রাম সন্না অর্থাৎ রামশংকর শর্মা ১৮৫৯ সালে ‘আত্মচরিত’ নামে নিজের জীবনী লেখেন। খুব রোমাঞ্চকর তার জীবন। কম বয়সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে জাহাজে সি-বয়ের চাকরিতে ঢোকেন। সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। বৃদ্ধ বয়সে নদীয়ার গ্রামে ফিরে পৈতৃক ভিটেতে প্রকাণ্ড বাড়ি তৈরি করেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ হয়। রামশংকর গোপনে বিদ্রোহীদের অর্থ সাহায্য করতেন। তার ফলে ইংরেজ শাসকদের কোপে পড়েন এবং বিচারে তার ফাঁসি হয়। ফাঁসি সেলে থাকার সময় তিনি ওই আত্মচরিতখানি লিখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর সরকারের অনুমতি নিয়ে তার ভাই শ্যামশংকর বইটি ছেপে বের করেন। বইটি সত্যি মূল্যবান এবং দুষ্প্রাপ্য। জগমোহনকে কিছুদিন ধরে তাগিদ দিচ্ছিলুম, বইটি যদি জোগাড় করতে পারে।”</p> <p>কর্নেলের এই ভাষ্য ফিকশনাল বইয়ের হলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাম সন্নার এ কাহিনিটা লেখকের মনগড়া নয়। কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। সেই ভিত্তিটা যে কী, সেটা জানতে পারলে ভালো হতো।</p>