<p>প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন। সন্ধ্যা হলেই হারিকেন জ্বেলে পড়তে যেতাম বিশু স্যারের বাড়ি। হিন্দু পাড়া। ধূপ-ধুনোর গন্ধে মন ভরে যেত। শাঁখের পুঁউ-উ-উ...ধ্বনি চিরতরের জন্য নস্টালজিক এক ছবি এঁকে দিয়েছিল মানসপটে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনাত। দিনের শেষ কর্মচাঞ্চল্যের ভেতর দিয়ে নেমে আসত রাতের অন্ধকার। কিছুক্ষণ পর গোল আয়নার মতো পুর্ণ চাঁদ অন্ধকারকে হটিয়ে গড়ত মায়ময় এক জগৎ। স্যারের বাড়ির সামনের দিকটা বুনো জঙ্গলে ঠাঁসা। ভাট-আশশেওড়ার দঙ্গলে আটকে যেত পলায়নরত অন্ধকার। কিন্তু তাতেও কি রেহায় আছে! জঙ্গলে জমে থাকা অন্ধকারকে হটাতে শুরু হত জোনাকির অভিযান। কাজলা দিদি পড়তাম আর বার বার তাকাতাম ওদিকে। সত্যিই থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলছে! আজ এত বছর পর কখনও ধূপ-ধুনোর গন্ধ পেলে, কিংবা কোথাও শঙ্খধ্বনি কর্ণকুহরে আঘাত হানলে বিদ্যুদ্বেগে ফিরে যাই ছেলেবেলার সেই সপ্নালু সন্ধ্যায়। চোখের সামমে যেন ধীরে ধীরে জমাট বাঁধে সেদিনের সেই অন্ধকার। জোনাকির ঝিকিমিকি কাঁপন তোলে বুকে।</p> <p>জোনাকি নিয়ে অজস্র নস্টালজিক ঘটনা ঘুমিয়ে আছে স্মৃতিকোষে। নিশ্চয়ই আপনাদের স্মৃতিকোষেও এমন অজস্র ঘটনা আছে। কিন্তু আলোহীন জোনাকি কি দেখেছেন?</p> <p>জোনাকি আবা আলোহীন হয় নাকি?</p> <p>হয়। দিনের বেলায়। আসলে অনেকে দিনের বেলায় জোনাকি দেখলে চেনেনই না বেশিরভাগ মানুষ। আমি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই চিনি। কীভাবে চিনতে শিখেচিলাম, তা আজ মনে নেই। তবে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম গাঁয়ের ছোটরা যেমন চেনে না, বড়দের অনেকেও জোনাকি পোকা কেমন বলতে পারেন না।</p> <p>অথচ জোনাকি ওঁরা দেখেন প্রতিদিন। রাতের আঁধারে, নিমগাছের পাতায় পাতায়, সজনে গাছের ডালে ডালে, পুকুর পাড়ে ঝোপে-ঝাড়ে, মানকচুর দঙ্গলে। কিন্তু সবই দূর থেকে দেখা। শুধু আলোটুকু। কাছ থেকে দেখার চেষ্টাও করেননি অনেকে। যারা দিনের বেলা জোনাকি দেখেননি, তারা ওপরের ছবিটা দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন।</p> <p>চাইলে অবশ্য নিজের চোখেই দেখতে পারেন। ঢাকা শহরে জোনাকি খুঁজে পাওয়া দায়। কিন্তু ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন অজস্র জোনাকি। দিনে-রাতে, সবসময়।<br />  </p>
