<p>গোয়েন্দা গল্পে একই রকম মোটিভবিশিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে মানসিক রোগীর মিল আছে। মানসিক রোগের উপবিভাগগুলো অনেকটা আইডেন্টিকাল টুইনের মতো। অথচ তাদের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। বিশেষত পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি সমস্যাযুক্ত। কারণ এগুলোর ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসা পৃথিবীর কঠিনতম চিকিৎসাপদ্ধতির মাঝে একটি।</p> <p>চলুন DSM-5-TR এর অন্তর্ভুক্ত মানসিক রোগগুলোর Major Type (প্রধান শ্রেণিবিভাগ)-এর দিকে চোখ বুলানো যাক। তার আগে দেখে নিই DSM কী। এটা হলো সাইকিয়াট্রিস্টদের বাইবেল হিসেবে খ্যাত DSM-5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fifth Edition)-এ উল্লিখিত সবগুলো মানসিক রোগ। এতে সব ধরনের মানসিক রোগ আর সেগুলোর ধরন অন্তর্ভুক্ত করা আছে।</p> <p>প্রধান শ্রেণিবিভাগের শুরুতেই আছে নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার। এ ক্ষেত্রে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ যখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে, তখন মস্তিষ্কের গঠনের ক্ষেত্রে কোনো বায়োলজিক্যাল অসম্পূর্ণতা বা অসংগতি দেখা দেয়। এর অনেকগুলো উপবিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—অটিজম।</p> <p>এরপর প্রধান শ্রেণিবিভাগ হলো নিউরোটিক টাইপ। হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার (মস্তিষ্কে রাসায়নিক বার্তাবাহক) ইত্যাদির বিপাক এবং ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় কোনো অসংগতি দেখা দিলে নিউরোটিক ডিজঅর্ডার দেখা দেয়, যেমন বিষণ্ণতা ব্যাধি, উদ্বেগজনিত ব্যাধি-অর্থাৎ অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।</p> <p> মানুষ মাত্রই অ্যাংজাইটি থাকবে, ডিপ্রেশন থাকবে। তার মানে আমরা সবাই পাগল? অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশনকে DSM-এ স্থান দেওয়ার মানে কী?</p> <p>সত্যি বলতে- এ কারণেই ‘Insanity’ কিংবা 'পাগল' শব্দগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য জগৎ থেকে উৎখাত করা হয়েছে। অ্যাংজাইটি আর ডিপ্রেশন যে কত বড় মারণঘাতক হতে পারে, তার গুরুত্ব জেনেই বিশেষজ্ঞরা এদের DSM-এ স্থান দিয়েছেন।</p> <p>এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। সেটি হলো—DSM-এ স্থান পাওয়া নিউরোটিক ডিজঅর্ডার—অ্যাংজাইটি আর ডিপ্রেশন কি অপরাধীদের শাস্তি লঘু করে দিচ্ছে না? </p> <p>কল্পনা করুন। একজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ঝন্টু তার প্রফেসরকে খুন করে এসে আদালতে বলল—আমি মারাত্মক ডিপ্রেশনের পেশেন্ট। অমুক স্যারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েছি। আমাকে পাঁচ-পাঁচবার সাপ্লি দিতে হয়েছে। তাই ইঁদুর মারার বিষ খাইয়ে তাকে শেষ করে দিয়েছি।</p> <p>কাজটা তুমি কেন করলে? তুমি বুদ্ধিমান মানুষ। ডাক্তারি পড়ছ। </p> <p>জবাবে ঝন্টু বলল, ঘটনার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি। তখন আমার বিবেকটাই যদি কাজ করত তাহলে আমি এত বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যেতাম না!</p> <p>বিচারক রায় দিলেন, আদালত আসামি ঝন্টুকে ৩০২ ধারা অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করল।<br /> বিস্ফারিত চোখে নিজের উকিলের দিকে তাকিয়ে ঝন্টু চিৎকার করে উঠল—এরা এসব কী বলছে? কানাকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে নাকি! আমি নিজে দেখেছি DSM-এ ‘নিউরোটিক ডিপ্রেশন’ মানসিক রোগ। আমি ‘Mental Disorder Defense’-এ কেন নির্দোষ প্রমাণিত হব না!</p> <p>ঝন্টু এবং আপনাদের মনে উদয় হওয়া প্রশ্নের জবাব মানসিক রোগের পরবর্তী প্রধান বিভাগ ‘সাইকোটিক ডিজঅর্ডার’ সম্পর্কে জানলেই পেয়ে যাবেন।</p> <p>সাইকোটিক ডিজঅর্ডারের মধ্যে আছে— সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগ। আগামীতে এগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।</p> <p>লেখক : চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক</p>