<p>চাঁদের একটি পিঠই সব সময় পৃথিবীর দিকে ফিরে থাকে। অপর পিঠটি থাকে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে। চাঁদের অপর পিঠকে সাধারণ ভাষায় বলা হয়, ‘ডার্ক সাইড অব দ্য মুন’। কিন্তু কথাটা ঠিক নয়। চাঁদের অপর পিঠেও সূর্যের আলো পড়ে কিন্তু সেটা আমরা পৃথিবী থেকে দেখতে পাই না। সেজন্য চাঁদের অপর পিঠকে ‘ফার সাইড অব মুন’ বলাটাই যুক্তিযুক্ত। </p> <p>এখন থেকে দশ বছর আগে, ২০১৪ সালে চাঁদের ফারসাইডের এই চমৎকার ছবিটি নেয়া হয়েছিলো চাইনিজ চ্যাঙ্গ ৫-টি১ মহাকাশযানের ক্যামেরা দিয়ে। অনেক দূরে আমাদের বাসভূমি পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে। </p> <p>চাঁদ কিন্তু উপগ্রহ হিসেবে নেহাত ছোট নয়। চাঁদ সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। চাঁদের ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। সৌরজগতে পৃথিবীর মতো মাঝারি সাইজের গ্রহের এত বড় উপগ্রহ আর নেই। চাঁদের ওপর যেমন পৃথিবীর প্রবল প্রভাব রয়েছে, পৃথিবীর ওপরেও চাঁদের মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে। চাঁদের আকর্ষণের জন্যই পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়। </p> <p>আসলে সৌরজগতে পৃথিবী এবং চাঁদ খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। চাঁদ যদি না থাকতো তাহলে পৃথিবীর পরিবেশ হতো প্রতিকূল। সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার পরিমাণ দুই তৃতীয়াংশ কমে যেত। উপকূলবর্তী সামুদ্রিক জীবের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তো। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, সমুদ্রের খাদ্য শৃংখল এর ফলে ভেঙে পড়ত। জোয়ার-ভাটা কম হলে সমুদ্র স্রোতের গতিও পরিবর্তিত হতো। এর বিরূপ প্রভাব পড়তো জলবায়ুর উপর। ফলে পৃথিবীর আবহাওয়া হয়ে উঠতো চরম ভাবাপন্ন। জীবজগতের জন্য যেটা মোটেই সুখকর নয়। </p> <p>সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীকে তার কক্ষপথে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রেখেছে। আমরা জানি, পৃথিবী তার কক্ষপথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে রয়েছে, যার ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়। এর পেছনেও কিন্তু চাঁদের মহাকর্ষের ভূমিকা রয়েছে। চাঁদ না থাকলে এই হেলে থাকার পরিমান আরো অনেক কম অথবা অনেক বেশি হতে পারতো। এর ফলে পৃথিবীর আবহাওয়া হয়ে উঠতো চরম বৈরী। মোদ্দা কথা হলো, চাঁদ মামা না থাকলে ধরণী মাতার জীবন হতো ওষ্ঠাগত। </p> <p>কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, চাঁদ পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। নাসার বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, এই সরে যাওয়ার পরিমাণ হলো বছরে ৩.৮ সেন্টিমিটার। এটা অবশ্য বিশাল কোনো দূরত্ব নয়। আমাদের হাতের নখও এই রকম গতিতেই বাড়ে। সুতরাং চাঁদ মামা খুব শীগ্রই আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। চাঁদ পৃথিবীর দোসর হয়ে থাকবে আগামী আরও কয়েক বিলিয়ন বছর। এর মধ্যে খুব শিগগিরই মানুষ চাঁদে গিয়ে বসতি স্থাপন করে ফেলতে পারবে বলে আশা করা যায়। <br />  </p>