<p>‘ভুল’ বলতে বোঝায় কোনো কাজের সঠিক নিয়ম না জেনে কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করা বা সম্পন্ন করা। এ ক্ষেত্রে সাধারণত উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় অসৎ নয়। কর্মপদ্ধতিতে সঠিকতার অভাব ‘ভুল’-এর বৈশিষ্ট্য।</p> <p>পাপ এবং অপরাধ নিয়ে <a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/03/12/1370898"><span style="color:#2980b9;">প্রথম অংশে বেশ কিছু কথা বলেছি</span></a>। তাই এককথায় দুইয়ের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করতে বলা যায়, ‘পাপ’ বলতে ‘ধর্মীয় বা নৈতিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘন’ বোঝায় এবং ‘অপরাধ’ হলো রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন।</p> <p>চলুন গল্পে গল্পে তিনের মাঝে পার্থক্য জেনে নেওয়া যাক। (বোঝার সুবিধার্থে প্রতিটি অধ্যায়ের গল্প কিংবা কেস স্টাডিতে আমি কাল্পনিক নাম ব্যবহার করেছি)।</p> <p>রাগিব ইশরাক একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম নাগরিক। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে পিএইচডি করতে গিয়ে তার পরিচয় ঘটে মেরিলিন নামের এক অস্ট্রেলিয়ান নারীর সাথে। মেরিলিনও রাগিবের সাথে পিএইচডি করছে অপরাধবিজ্ঞানে।</p> <p>মেরিলিনের স্বামী একজন অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ। বিবাহিত হয়েও মেরিলিন রাগিবের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়াল। একদিন ল্যাবওয়ার্ক শেষে নিজের পেপারওয়ার্কে একটি ভুল করায় রাগিবের প্রফেসর দারুণ বকাবকি করে তাকে। দারুণ মন খারাপ হয় রাগিবের। বয়ফ্রেন্ডের মন ভালো করতে তাকে ডিস্কোতে নিয়ে যায় মেরিলিন। ডিস্কোতে মদ্যপ হয়ে ড্যান্স করে তারা। রাগিব মেরিলিনকে নিজের গাড়িতে করে ডর্মিটরিতে ড্রপ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ড্রাইভ করার সময় গাড়িতে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটায় দুজনে।</p> <p>একে তো রক্তে অ্যালকোহল, তার উপর সেই অবস্থায় গাড়ি চালান। পড়বি তো পড় পুলিশের গাড়ির সামনে। পুলিশের গাড়ি রাগিবের গাড়িটিকে থামায়। অফিসার ইন চার্জ আর কেউ নয় বরং মেরিলিনের স্বামী। স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ ডেভিড। স্ত্রীর লিপস্টিক এলোমেলো। স্ত্রীর অবিশ্বস্ততায় খুব কষ্ট পায় বেচারা স্বামী। তবে প্রভাবশালী পুলিশ হলেও পরকীয়ার কারণে স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। রাগিবের রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ পাওয়া যায় ১.৫ শতাংশ।</p> <p>লক্ষ করে দেখুন, এখানে রাগিবের রিসার্চ পেপারে সঠিকতার অভাব হছে ‘ভুল’। পরস্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো একজন মুসলিম হিসেবে তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিতে পাপ। ১.৫ শতাংশ অ্যালকোহল রক্তে থাকা অবস্থায় স্পিডে গাড়ি চালানো অস্ট্রেলিয়াতে DUI (DRIVING UNDER INFLUENCE) আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।</p> <p>তবে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক রাগিবের প্রতি উক্ত পুলিশের যতই বিদ্বেষ থাকুক, অস্ট্রেলিয়াতে পরকীয়া আইনত অপরাধ নয়। তাই ডেভিড পুলিশ হয়েও কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না। আবার রাগিব যদি বাংলাদেশি কোনো বিবাহিত নারীর সাথে বাংলাদেশে অবস্থানকালে পরকীয়া করত, তাহলে ওই নারীর স্বামী রাগিবের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতেন। দেখাই যাচ্ছে, দেশভেদে একই অপরাধের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আইন।</p> <p><strong>লেখক:</strong> চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক<br />  </p>