<p>সৌরজগতের আটটি সদস্য। এদের আমরা ‘গ্রহ’ নামেই চিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট বুধ। বুধের ব্যাস ৩,০৩২ মাইল অর্থাৎ ৪,৮৭৯ কিলোমিটার। সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। সূর্যের নিকটতম গ্রহও বুধ। সূর্যের চারপাশে এটা দ্রুত ছোটে। উদ্ভট এক কক্ষপথ বুধের। <br /> ডিম্বাকার এই কক্ষপথ গ্রহটিকে সূর্যের অনেক কাছে নিয়ে যায়। মাত্র ৪ কোটি ৭০ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব থাকে তখন। এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব সাত কোটি কিলোমিটার। প্রতি সেকেন্ডে ৪৭ কিলোমিটার গতিতে মাত্র ৮৮ দিনে বুধ সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসে। গ্রহটি নিজ অক্ষে অত্যন্ত ধীরে ঘোরে ও প্রতি ৫৮.৭ দিনে একটা ঘূর্ণন পুর্ণ করে। সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে খুবই দ্রুত গতিতে চলে। বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে তখন। </p> <p>সৌরজগতের অনান্য গ্রহ ঘোরার সময় রাত ও দিন সমান হয়—গ্রহের ঘূর্ণন সমানতালে হয় বলে। বুধে তা হয় না। সকালে সূর্য কিছু সময়ের জন্য উদিত হয়, অস্ত যায় এবং আবারও উদিত হয়—এই হলো দিনের হিসাব। রাতের ঘটনাটাও হুবহু এক, তবে বিপরীত। সেজন্য বুধের বর্ষপঞ্জিটা অদ্ভুত। বুধ গ্রহে একদিন (সূর্যোদয় থেকে পরের সূর্যোদয় পর্যন্ত) দুটো মারকুরিয়ান ইয়ার বা বুধ-বর্ষ। যা কি না পৃথিবীর হিসেবে ১৭৬ দিন। </p> <p>বুধে কোনও ঋতু নেই। অবশ্য অসহ্য তাপীয় অবস্থা বিবেচনায় ভয়ানক গ্রীষ্ম ও শীত বলতে পারি। সূর্যের অতি কাছের প্রিয় বলেই এমন। অন্য যেকোনও গ্রহের তুলনায় এই গ্রহের তাপমাত্রা বিষুবরেখায় দুপুরে ৪০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইড)। তবে রাতে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায়। -২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা -৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। মেরু অঞ্চলের কিছু গর্তে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারে না। ফলে সেগুলো অন্ধকার থাকে। সে স্থানগুলোতে জমা হয় বরফ। </p> <p>বুধে গর্তের অভাব নেই। এর পৃষ্ঠে এসব গর্তসহ কঠিন অবস্থা অনেকটা চাঁদের মতোই। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। ঘনত্বের অভাব। সূর্য থেকে পাওয়া গ্যাসীয় পরমাণু দিয়ে বুধের উত্তপ্ত বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ গড়ে ওঠে।  বুধের গর্তগুলো জন্ম থেকে ছিল না। বিভিন্ন গ্রহাণু ও উল্কার আঘাতে গর্তগুলো তৈরি হয়েছে। </p> <p><strong>ইতিহাস</strong><br /> প্রাচীন রোমান দেবতাদের বার্তাবাহকের নামে নামটি রাখা হয়। দ্রুত গতিশীল গ্রহ হিসেবে বুধের বেশ নাম রয়েছে। দিনে যে গরম রাতে সে ভয়ানক ঠান্ডা।</p> <p><strong>গুরুত্বপূর্ণ তথ্য</strong><br /> আর পাঁচটা গ্রহের চেয়ে বুধের কক্ষপথটিও অনন্য। সবচেয়ে ভালো উপবৃত্তাকার এই কক্ষপথ, একইসঙ্গে সূর্যের কাছের সদস্য। তাই মহাকর্ষীয় টানে বিশাল পরিবর্তনও টের পায়। এটি তার যেন নিজের কক্ষপথকে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে নিয়েছে। কক্ষপথটির চালচলন আইজ্যাক নিউটনের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা দিয়ে ঠিকঠাক ব্যাখ্যা করা যায়। বুধ গ্রহের কক্ষপথ পরীক্ষা করেই আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রথমবার প্রমাণিত হয়। বুধ গ্রহের এই কক্ষপথই প্রমাণ করে নিউটনের তত্ত্বের চেয়ে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বেশি গ্রহণযোগ্য। </p> <p><strong>সম্পর্কিত বিষয়</strong><br /> চাঁদ<br /> উপবৃত্ত ও কক্ষপথ<br /> মহাকর্ষ<br /> আপেক্ষিকতা</p> <p><strong>বিজ্ঞানী</strong><br /> <strong>অ্যালবার্ট আইনস্টাইন</strong><br /> ১৮৭৯-১৯৫৫<br /> জার্মান-সুইচ-মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী।</p> <p><strong>বর্ণনায়</strong><br /> পল মারডিন<br />  </p>