<p>বাংলা দেশে কটা শিয়াকুল গাছ আছে, আঙুল ধরে ধরে সেগুলোর সংখ্যা গোণা যাবে। তাই কুল বা বরই প্রজাতির ক্ষুদ্রতম এই সদস্যকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের কাতারে ফেলতে পারেন।</p> <p>একটা ভুল ধারণা ছিল। সাধারণ এক জাতের বুনো কুলকে এতোদিন শিয়াকুল বলে মনে করতাম। বছর পনেরো আগে জানতে পারলাম আমাদের গাঁয়ের কুদ্দুস পার্কে ডালপালা মেলে বেড়ে উঠেছে একটা শিয়াকুল গাছ। সেই গাছটা দেখতে গিয়েই আমার বহুদিনের ভুলটা ভাঙল।</p> <p>শিয়াকুল ঝোপ জাতীয় বহুবর্ষজীবী গুল্ম বা বৃক্ষ। সাধারণ কুলগাছেরও একটু ঝোপালো বেশিষ্ট্য আছে। কিন্তু শিয়াকুল পুরোটাই ঝোপালো। একেবারে নতুন জন্ম নেয়া চারাও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হেলে পড়ে। চারাগাছের একেবারে গোড়া থেকেই ডালপালা গজায়। ডাল ছাঁটলেও কাণ্ড ওপরের দিকে উঠতে চায় না। শিয়াকুলের ঝোপ ৮-১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।</p> <p>ঝোপ হলেও তো কাণ্ড থাকে। শিয়াকুলেরও আছে। এর কাণ্ড ধূসর রংয়ের। কাণ্ড চার-পাঁচ ফুট লম্বা হয়। তবে কাণ্ড সোজা হয় না। সাপের মতো আকাবাঁকা। কাণ্ড অত্যন্ত শক্ত হয়—প্রায় বাবলা কাঠের মতো।</p> <p>শিয়াকুলের পাতার রং গাঢ় সবুজ। সাধারণ কুলের পাতা গোল। কিন্তু শিয়াকুলের পাতা ডিম্বাকৃতির অথবা বর্শার ফলার মতো। পাতা একপক্ষল। পাতার দের্ঘ্য ১-১.৫ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। প্রস্থ সর্বোচ্চ এক ইঞ্চি। সাধারণত পাতা মৃসণ নয়, তবে খুব বেশি খসখসেও নয়। পাতা নরম এবং পাতলা। প্রতিটা পাতার গোড়ায় ছোট্ট ছোট্ট কাঁটা থাকে। কাঁটার আগাটা বরশির মতো বাঁকানো।</p> <p>শিয়াকুলের প্রান্তিক ডালের গায়ে প্রতিটা পাতা আর কাঁটার গোড়ায় ৫-১০টা করে ফুলের কুঁড়ি বের হয়। ফুটন্ত ফুল দেখতে মহিলাদের নাকফুলের মতো। প্রতিটা ফুলে পাঁচটা ছোট এবং পাঁচটা বড় পাঁড়ড়ি থাকে।</p> <p>একটা ছোট পাঁপড়ির পর একটা বড় পাঁপড়ি—এবাবে সাজানো থাকে।পাঁপড়ির রং সাদাটে সবুজ। ফুলের ব্যাস .৫ সেমি করে হতে পারে। পাপঁড়িগুলোর মাঝখান থেকে সবুজ রংয়ের লিম্বাটে ফল গজিয়ে ওঠে। হেমন্তে শুরুতেই শিয়াকুলে মুকুল আসে। শেষের দিকে ফল গজায়।<br /> ফল দেখতে কুলের মতো হলেও দেশি কুলের চেয়ে অনেক ছোট। বরং বৈঁচি ফলের সাথে এর অনেক মিল। ফলের আকার একটা মটর দানার মতো। কাঁচা ফলের রং গাঢ় সবুজ। ডাসতে শুরু করলে সামান্য হলদে ভাব দেখা দেয়। পাকা ফল কালচে সবুজ। পাকা ফলের স্বাদ সামান্য টক। দেশি কুলে যেমন টক-মিষ্টি স্বাদের মিশেল থাকে, শিয়াকুলের স্বাদে কোনো মিষ্টিভাব থাকে না। বরং কাঁচা পেয়ারার স্বাদের সাথে সামান্য টকাভাব যোগ করলে যেমন হতে পারে পাকা শিয়াকুলের স্বাদটাও তেমন। </p> <p>ফলের ভেতর গোল-দ্বিবীজপত্রী শক্ত-অথচ ভঙ্গুর বিঁচি থাকে। বর্ষাকালে শিয়াকুলের বীজ থেকে চারা গজায়। শিয়াকুলের বৈজ্ঞানিক নাম : Ziziphus oenoplia.<br />  </p>