<p>নিজের ছোটবেলার কথা ভাবুন। তখন সময় কত ধীরে চলত। বয়স যত বাড়ছে, সময়ের গতি যেন ধীর হয়ে গেছে। তারপর ধরুন কোনো অনুষ্ঠানে আছেন, কিংবা দিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা; কখন যে কয়েকঘণ্টা পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারলেন না। আপনার মনে হলো মাত্র কয়েক মিনিট আগে এসেছেন। কিন্তু যদি কারও জন্য অপেক্ষা করেন, কিংবা ভালো কিছুর জন্য ক্ষণ গোনেন, তাহলে মনে হবে সময় যেন কচ্ছপের মতো ধীর হয়ে গেছে। </p> <p>মানুুষের সময়কাল একটাই। সেটা হলো তার ফেলা আসা পুরো জীবন। যখন সে ছোট থাকে, সেই অল্প সময়টাই তার জন্য অনেক বড় মনে হয়। ধরা যাক, দশ বছরের একটা শিশুর কথা। পাঁচ বছর তাঁর জন্য অনেক বড়। তার গোটা জীবনের অর্ধেক। তার কাছে এক বছরও অনেক লম্বা। কিন্তু মধ্যবয়সী একজন মানুষ, যার বয়স হয়তো চল্লিশ বছর, তাঁর কাছে পাঁচ বছর মানে গোটা জীবনের আটভাগের একভাগ মাত্র। এক বছর তাঁর কাছে খুব কম সময়।</p> <p>বয়সভেদের সময়ের গতি ধীর ও দ্রুত মনে হওয়ার পেছনে রয়েছে জটিল জৈবরাসায়নিক কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারেলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আদ্রিয়ান বেজান বিখ্যাত ইংরেজি বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’কে বলেছেন, মানুষের যখন বয়স বেড়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের প্রসেসিং ক্ষমতা অনেক কমে যায়। তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে, সিগনালগুলোতে ডিটেলিং কম থাকে।</p> <p>ধরা যাক, একটা টাইম ল্যাপস ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করার তোলার মতো। </p> <p>ধরা যাক, আধঘণ্টা ধরে চলা একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিডিও করবেন। দুটো ক্যামেরা দিয়ে। একটা স্বাভাবিক স্পিডে আরকেটা টাইম ল্যাপসে। টাইম ল্যাপস ক্যামেরায় আপনি ল্যাপস টাইম পাঁচ সেকেন্ড  ঠিক করলেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ সেকেন্ড পর পর ক্যমেরা একটা করে ফ্রেম ক্যাপচার করবে। অর্ধাৎ মিনিটে ১২টা, আর আধঘণ্টায় মোট ৩৬০ টা ফ্রেম ক্যাপচার করবে ক্যামেরাটা।</p> <p>অন্যদিকে ধরা যাক, স্বাভাবিক গতির ক্যামেরাটা সেকেন্ডে ৬০টা ফ্রেম ক্যাপচার করে। তাহলে মিনিটে ৩৬০টা এবং আধঘণ্টায়  ১,০৮,০০০ ফ্রেম ধারণ করতে পারে। </p> <p>ভিডিও রেকর্ড করার পর এবার দুটো ভিডিও চালু করার পালা। ধরা যাক, ভিডিও হিসেবে দুটোই একই গতিতে চলবে। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ৬০টা করে ফ্রেম চলবে। এই গতিতে চললে টাইম ল্যাপসের ৩৬০টি ফ্রেম মাত্র ছয় সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে স্বাভাবিক ভিডিওটি চলবে আধঘণ্টা ধরে। অথচ আমরা দেখছিলাম, দুটো ক্যামেরাতেই আধঘণ্টা ধরে চলা একটা ঘটনা ধারণ করা হয়েছে। </p> <p>টাইম ল্যাপস ক্যামেরায় তোলা ভিডিওকে আমরা বৃদ্ধ মানুষের সময় আর আর স্বাভাবিক ক্যামেরায় তোলা ভিডিওকে আমরা শিশু বা তরুণদের সময়ের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ক্যামেরায় যেমন এসডি কার্ডে ভিডিও সেভ থাকে, মানুষের মস্তিষ্কে ঘটনার স্মৃতি জমা থাকে মস্তিষ্কের স্মৃতি কোষে। ক্যামেরার ভিডিও চালিয়ে যেমন ঘটনাটা আবার দেখা যায়, মানুষ তেমন স্মৃতি রোমান্থন করে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করতে পারে।</p> <p>বৃদ্ধ মানুষের স্মৃতি কোষে ঘটনার ডিটেইলিং কম থাকে, অন্যদিকে শিশু বা তরুণদের স্মৃতিতে ঘটনার ডিটেলিং অনেক বেশি থাকে। তাই কোনো বৃদ্ধ মানুষ যখন স্মৃতি রোমান্থন করেন, তাঁর কাছে তথ্য কম থাকে বলে ঘটনার সময় অনেকে কম মনে হয়। অন্যদিকে কমবয়সীদের স্মৃতিতে ডিটেইলিং অনেক বেশি থাকে, তাই ঘটনার সময় অনেক দীর্ঘ মনে হয়। </p> <p>কথা হচ্ছে, সময় যে বয়ে যাচ্ছে, আমরা যে সময় অনুভব করছি। এটা শরীর অনুধাবন করছে কীভাবে?</p> <p>শরীরে সময় অনুভবের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন হৃৎস্পন্দন, ক্ষুধার উপলব্ধি, এসব থেকেও আমরা সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারি।<br /> কিন্তু সময়ের এই অনুভূতি কোথায় তৈরি হয়?</p> <p>মস্তিষ্কে ইনসুলা নামে একটা অঞ্চল আছে—ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোবের মাঝখানে—এই অঞ্চলেই আমাদের সচেতনতা বোধ, আত্মচেতনা বোধ তৈরি করে। এর মধ্যে অবশ্যই সময় সচেতনতার অনুভূতিও রয়েছে।</p> <p>এ নিয়ে পরীক্ষাও হয়েছে। জার্মানির ফেরিবার্গের ইনস্টিটিউট ফর ফ্রন্টিয়ার এরিয়া ইন সাইকোলজি অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের গবেষক মার্ক উইটম্যান একটা পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কে এফএমআরআই স্ক্যান করে তাঁদের স্নায়ুতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই পরীক্ষা থেকে কিছু বিশেষ তথ্য পান উইটম্যান। ইনসুলায় এমন কিছু সংকেত দেখতে পান তিনি, যা দেখে মনে হয় এই এ সংকেতগুলি ব্যবহার করে মস্তিষ্ক সময় পরিমাপের চেষ্টা করছে।<br /> এছাড়া উইটম্যান বেশ কিছু পরীক্ষা করে একটা সিদ্ধান্তে আসেন। যেমন কোনো ঘটনার ওপর আমাদের মস্তিষ্ক যখন খুব বেশি মনোযোগ দেয়, তখন ঘটনার ডিটেলিং অনেক বেশি করে ধরা পড়ে মস্তিষ্কে, সময় তত ধীর মনে হয়। কিন্তু মন যদি বিক্ষপ্ত থাকে, তাহলে ঘটনার দিকে পরিপূর্ণ মনযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না, সময় তখন কোন দিক দিয়ে চলে যায় বোঝায় যায় না—বক্তব্য উইটম্যানের।</p> <p>সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট</p> <p><strong>হোয়াট ইজ টাইম </strong>সিরিজের আরও লেখা:</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/21/1328922"><span style="color:#3498db;">১. সময় আসলে কী–বাস্তব নাকি প্রহেলিকা?</span></a></p> <p><span style="color:#3498db;">২. </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/26/1330432"><span style="color:#3498db;">সময়কে ধীর করে দিয়েছিলেন আইনস্টাইন?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/31/1331895"><span style="color:#3498db;">৩. মহাকর্ষ বল কি সময়কে ধীর করে দেয়?</span></a></p> <p><span style="color:#3498db;">৪. </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/11/14/1336132"><span style="color:#3498db;">আমরা কিভাবে সময় অনুভব করি?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/05/1342747"><span style="color:#3498db;">৫. পাহাড়ের চেয়ে সমতলে সময় ধীরে চলে!</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/14/1345524"><span style="color:#3498db;">৬. আমরা কেন ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারি না?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/21/1347594"><span style="color:#3498db;">৭. এনট্রপি কী? এটা কেন এত রহস্যময়?</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/22/1347892"><span style="color:#3498db;">৮. মহাবিশ্বের তাপীয়-মৃত্যু ও কালের কফিন</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/29/1350110"><span style="color:#3498db;">৯. যেখানে সময় পিছিয়ে যায়</span></a></p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/01/02/1351301"><span style="color:#3498db;">১০. বর্তমান বলে কিছু নেই, আমরা কি অতীতে বাস করি?</span></a></p>