<p>নিজেকে যে বড় বল, বড় সে নয়, লোকে বড় বলে সে-ই সত্যিকারের বড়। কবি ইশ্বর গুপ্ত ‘গায়ে মানে না, তুমি মোড়ল’দের জন্য এই ‘বড় কে’ কবিতা লিখেছিলেন নাকি, শিশু-কিশোরদের উপদেশ দিতে? বড়রা এ কবিতা পড়ে কিনা সন্দেহ। কিন্তু সত্যিকারের যারা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেই শিশুরা এ কবিতা পড়ে, পাঠ্য বইয়ে পড়ানো হয়। কিছুটা ভাবনার স্রোত ওঠে ওদের মগজের নিউরনে।</p> <p>কিন্তু আমাদের অসীম মহাকাশ, যাঁর বুকে ফুটে আছে কোটি কোটি নক্ষত্রের ফুল, সেখানে বড়-ছোটর মারামারি চলে না। কেউ দাবি করে না আমি বড় তুমি ছোট। নক্ষত্র জীবন্ত প্রাণী হলে কী হতো কে জানে, আমরা এই পৃথিবী নামের গ্রহবাসীরা ঠিকই বিজ্ঞানের কষ্ঠিপাথরে ফেলে, গণিতের নিক্তিতে মেপে দূর দিগন্তের এপার থেকেও বলে দিতে পারি, আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর মধ্যে কে বড়, কে ছোট। </p> <p>আট গ্রহের এক নক্ষত্র। আছে প্লুটোসহ অসংখ্য গ্রহাণুসহ ধূমকেতু, পরিযায়ী পাথর। আর সবই ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সবার আকার সমান নয়, এখানে কেউ বড় মিয়া, কেউ পিচ্চি শিশু। এদের কে কত বড়, সেটা যেমন সংখ্যার পর সংখ্যা বসিয়ে, তেমনি পৃথিবী নামের বাটখারায় মেপে তাদের বিশালাত্ব বা ক্ষুদ্রত্ব বুঝে নিতে পারবেন। সেই চেষ্টাই আমরা করব এই লেখায়।</p> <p>পৃথিবী অনেক বড়। কিন্তু কত বড়? নিশ্চয়ই অসীম নয়। কিন্তু অন্ধাকার রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমাদের পূর্ব পুরষরা এক সময় মনে করতেন, পৃথিবীই বুঝি রাজা-মহারাজা, বিন্দুর মতো গ্রহ-নক্ষত্রগুলো তার শিষ্য। একথা এখনকার শিশুরাও ভাবে না। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রসারের আগে খালি চোখে দেখা, গ্রহ-নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর তুলনায় ছোটই তো দেখা।</p> <p>কিন্তু মানুষ দ্রুতই বুঝতে শেখে, দূর থেকে দেখলেই সবকিছু ছোট হয়ে যায় না। গণিত আর জ্যামিতি ব্যবহার করে, মানুষ প্রাচীনকালেই মাপতে শিখেছিল দূরের বস্তুর আকার-আকৃতি। তারপর যে ফল পান প্রাচীন কালের বিজ্ঞানীরা, তাতে চোখ কপালে উঠে যায়। খোদ সৌরজগতের কয়েকটি গ্রহ এত বড়, যে ওগুলোর তুলনায় পৃথিবী নেহাৎ শিশু ছাড়া কিছু নয়।</p> <p>আমাদের বাস্তুগ্রহ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬ হাজার ৩৭১ কিলোমিটার। পৃথিবীর ক্ষেত্রফল, যেটাকে আমরা আয়তন বলে ভুল করি, সেটা ৫১ কোটি ৭২ লক্ষ কিলোমিটার। কত বড় ভাবা যায়! আমাদের বাংলাদেশটা যত ছোটই হোক,  এর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গাড়ি নিয়ে যেতে প্রায় ১ দিন লেগে যায়। অথচ বাংলাদেশের এরিয়া মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীর তুলনায় বাংলাদেশ নিতান্তই ছোট এক দ্বীপ ছাড়া কিছু নয়। এসব থেকেই পৃথিবীর আকার-আকৃতি আর বিশালত্বের একটা ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু এই পৃথিবীটাই অন্য গ্রহগুলোর তুলনায় কত বড় বা ছোট সেটা নিয়ে একচোট গল্প হয়ে যেতে পারে।</p> <p>বুধ সূর্যের নিকটতম গ্রহ বুধ, কিন্ত গায়ে-গতরে বেশি বড় নয়। সৌর জগেতর ক্ষুদ্রতম এই গ্রহের গড় ব্যাসার্ধ মাত্র ২ হাজার ৪৩৯ কিলোমিটার। পৃথিবী ব্যাসের চার ভাগের একভাগ মাত্র। কিন্তু পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল অবশ্য পৃথবীর তুলনায় নিতান্তই কম—মাত্র ৭৪ লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার। পৃথিবীর প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবী নামের গোলকের ভেতর ১৮টা বুধ এঁটে যাবে। তাহলে সূর্যের ভেতর কয়টা বুধ আঁটবে ভেবে দেখুন! </p> <p>সকালে শুকতারা আর সন্ধ্যায় সন্ধ্যা তারা হিসেব যে তারাটািকে আকাশে সেটাই বেশ বড় বড়-সড় দেখায়। এর কারণ পৃথিবীর সঙ্গে এর দূরত্ব। পৃথিবীর নিকটতম এই গ্রহ শুক্র আকারে পৃিথবীর কাছাকািছ। এর গড় ব্যাসার্ধ ৬ হাজার ৫১ কিলোমিটার। তারমানে, পৃথবী থেকে এর গড় ব্যাসার্ধ মাত্র ৩২০ কিলোমিটার কম। এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলও পৃথিবরী খুব কাছাকাছি—৪৬ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার। সূর্যের ভেতর ১৫ লাখ বুধ গ্রহ অনায়াশে জায়গা করে নিতে পারবে।<br /> মঙ্গল নাম থেকেই বোঝা যায়, পৃথিবীর জন্য এটা পয়া গ্রহ। অন্তত জ্যোতিষিবদ্যার চর্চা যারা করেন বা আগে করতেন, তারা এমনটাই ভাবেন বা ভাবতেন। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যায় এমন কোনো প্রমাণ আজও মেলেনি। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে মঙ্গলকে মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। চলছে মঙ্গলে মানব কলোনী বানানোর চেষ্টা। কিন্তু এত গ্রহ থাকতে মঙ্গল কেন? কারণ মঙ্গলের আবহাওয়া, পরিবেশ—পৃথিবীর সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে। মঙ্গলের গড় ব্যাসার্ধ ৩ হাজার ৩৮৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর অর্ধেকর চেয়ে কিছুটা বেশি। এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ। তবে পৃথিবীর ভেতর ৭টা মঙ্গল গ্রহ সহেজই এঁটে যাবে। আর সূর্যের ভেতর আঁটবে ৮০ লাখের বেশি মঙ্গল।</p> <p>বৃহস্পতি মহা গ্যাসদানব। আকারে শনি গ্রহের সঙ্গে এর যোজন যোজন ব্যবধান। ৬৯ হাজার ৯১১ কিলোমিটার গড়  ব্যাসার্ধ্যের এই গ্রহটির পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ৬.১৪১৯×১০<sup>১০</sup> বর্গকিলোমিটার। এমন একটা দানবের তুলনায় পৃথিবী কত ক্ষুদ্র সেটা যেমন ছবি দেখে অনুভব করতে পারবেন, আরও বেশি অনুভব করতে পারবেন সংখ্যা দেখে। প্রায় ১৩ শ পৃথিবী এঁটে যাবে বৃহস্পতির বুকে। </p> <p>শনির দশা বলে একটা কথা প্রচিলত আছে আমাদের সমাজে। এটা দিয়ে বোঝােনা হয়, শনি অপয়া গ্রহ। অথচ এটাই সৌরজগতের সৌরজগতের সুন্দরতম গ্রহ। চারপাশে উজ্জ্বল বলয় একে সুন্দরতম করেছে।</p> <p>আকারে-প্রাকােরও এই গ্রহ বিশাল। বৃহস্পতির পর এটা দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। চারপাশের বলয়গুলোকে হিসেবের বাইরে রাখলেও এর আকৃতি বিশাল। গ্যাস দানব শনির ভেতরে সাত শ পৃথিবী আরামসে জায়গা করে নিতে পারবে। কারণ এর ব্যাস পৃথিবীর প্রায় ৯ গুণ—৫৮ হাজার ২৩২  কিলোমিটার। আর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ৪২ বিলিয়ন কিলোমিটার।</p> <p>বৃহস্পতির পর প্রতিটা গ্রহই গ্যাসীয়। ইউরেনাস গ্যাস দানব। কিন্তু আকারে বিশাল, যদিও বৃহস্পতির ধারে কাছে নয়। এরও বলয় আছে। তবে বলয় বাদেই এর চেহারাখানা কেমন দশাসই দেখে নিতে পারি। এর গড় ব্যাসার্ধ পৃথিবীর প্রায় চা রগুন—২৫ হাজার ৩৬২ কিলোমিটার। পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ৮১১ কোটি ৫৬ লাখ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় ১৫ গুন। ৬৩টা পৃথিবী অনায়াশে এর ভেতর জায়গা করে নিতে পারবে।</p> <p>সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ হলো নেপচুন। এটাও গ্যাস দানব। তাই ভরের তুলনায় আকারে একটু বেশিই বড় দেখায় একে। তবে ইউরেনাসের সঙ্গে এর আকৃতিগত মিল অনেক। এর গড় ব্যাসার্ধ ২৪ হাজার ৬২২ কিলোমিটার—পৃথিবীর গড় ব্যাসের প্রায় ৪ গুন। পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ৭১৬ কোটি ৪৩ লাখ বর্গকিলোমিটার। অবশ্য বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাসের মতো এর কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই। প্রায় ৫৮টা পৃথিবী এঁটে যাবে, নেপচুনের ভেতরে।</p> <p>আট গ্রহতেই সীমাবব্ধ থাকতে পারে আমাদের হিসাব। কিন্তু বহুদিন গ্রহের খেতাব ধরে রাখা, সদ্য খেতাব হারানো বামনগ্রহ প্লুটোকে বাদ দিলে অন্যায় হবে। প্লুটো কিন্তু অন্য যেকোনো গ্রহের তুলনায় খুব ছোট। এর ব্যাস ১ হাজার ১৮৮ কিলোমিটার। পৃথিবীর ছয় ভাগের ১ মাত্র! আর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর ভেতরই ১৫৪টা প্লুটোর জায়গা হয়ে যাবে। সূর্যের ভেতর জায়গা হয়ে যাবে ২০ কোটি প্লুটের।</p> <p>চাঁদ মামা আকাশে যত বড়ই দেখান না কেন, আসলে আকারে তিনি খুব বেশি বড় নন। তবে প্লুটের চেয়ে বড়। চাঁদের গড় ব্যসার্ধ ১ হাজার ৭৩৭ কিলোমিটার। পৃথিবীর প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ। পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল অবশ্য অনেক কম। মাত্র ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার।</p> <p>এবার সূর্যের হিসাটা চুকিয়ে ফেলা যায়। সূর্য মানেই বৃহত্তের প্রতীক। যদিও সূর্যের চেয়ে ঢের বড় নক্ষত্র আছে মহাকাশের অলিতে গলিতে, কিন্তু আমাদের জগতে সূর্যই রাজাধিরাজ।</p> <p>এতগুলো গ্রহের হিসাব দেখালাম, এছাড়াও কয়েক শ উপগ্রহ রয়েছে, রয়েছে লাখ লাখ বামনগ্রহ, ধূমকেতু, ছোট-বড় পাথর রয়েছে সৌরজগতে। সব মিলিয়ে তাদের ভর কত জানেন?</p> <p>গোটা সৌরজগতের মাত্র ০.১%। বাকি ৯৯.৯৯ শতাংশ ভর দখল করে আছে সূর্য একাই। তেমনি আকারেও বিশাল। এর ব্যাসার্ধ ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪২ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুন! অন্যদিকে আগুনে পৃষ্ঠতলের ৬.০৯×১০<sup>১২</sup> বর্গ কিলোমিটার। প্রায় ১৩ লাখ পৃথিবীর জায়গা হয়ে যাবে সূর্যের পেটের ভেতর। অন্যদিকে বৃহস্পতির মতো অতিকায় গ্যাস দানবও প্রায় ১ হাজারটি এঁটে যাবে সূর্যের ভেতরে।</p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম<br />  </p>