<p>রসায়নে যাঁরা অসামান্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের অন্যতম পুরোধা একজন গ্লেন থিওডোর সিবর্গ। দিমিত্রি মেনডেলিভের পর পর্যায় সারণিতে তাঁর শ্রম সবচেয়ে বেশি। ১৮৬০ দশকের শেষের দিকে মেনডেলিভ পর্যায় সারণি প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে সেই সারণির অজানা মৌলগুলো ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় পেয়েছেন। সিবর্গ প্লুটোনিয়ামের সহ-আবিষ্কারক-সহ মোট দশটি মৌলের আবিষ্কার। বাকি নয়টি মৌল ইউরোনিয়াম-উত্তর মৌল। অর্থাৎ ইউরিনিয়ামের পর নয়টি মৌলের একক আবিষ্কারক তিনি। সিবর্গ নতুন মৌলের সেটটিকে অ্যাক্টিনাইড বর্ণনা করেন।</p> <p>১৯১২ সালের ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে সিবর্গের জন্ম, সুইডিশ অভিবাসী পরিবারে। পড়াশুনো করেছেন লস-এঞ্জেলস ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি এই বার্কলেতেই কাটিয়েছেন। এখানেই তিনি রসায়নের অধ্যাপনা করেছেন। হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় চ্যান্সেলর। লরেন্স সাইক্লোট্রনসহ তাঁর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলো এখানেই করেছেন।</p> <p>১৯৪১ সাল। তিনি ও তাঁর গবেষণা দল প্লুটোনিয়াম আবিষ্কার করেন। দলে ছিলেন এডউইন ম্যাকমিলান, জোসেফ কেনেডি এবং আর্থার ওয়াহল। নাগাসাকি শহরে যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল তার মূল উপাদান ছিল প্লুটোনিয়াম। বোমা তৈরিতেও সিবর্গ সরাসরি জড়িত ছিলেন। যুদ্ধের সময়, তিনি ও তাঁর সমকালীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষরিত পিটিশন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে পাঠান। তাঁদের পরামর্শ ছিল, জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার না-করা। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনো পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে না। এই আবেদনপত্রটিকে বলা হয় ‘ফ্যাঙ্ক রিপোর্ট’। বিজ্ঞানীদের অনুরোধ ছিল, জাপানকে পারমাণবিক বোমার নমুনা বিস্ফোরণ দেখিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। যদিও সে আবেদন কানে তোলেননি ট্রুম্যান প্রশাসন। </p> <p>১৯৪০ সাল। এডউইন ম্যাকমিলান নেপচুনিয়াম আবিষ্কার করেন। এরপর প্রায় ১৬ বছরে সিবর্গ ও তাঁর এই দল নয়টি মৌল আবিষ্কার করেছেন। বার্কলে যেন আস্ত একটি গবেষণাগার হয়ে গেল। ইউরোনিয়ামোত্তর মৌলগুলো পরপর সেজে গেল সারণিতে। নেপচুনিয়াম (৯৩) থেকে নোবেলিয়াম (১০২) ইউরেনিয়ামের তুলনায় ভারী মৌলগুলো।</p> <p>সাল ১৯৪৪। সিবর্গ অনুমান করেন, ১৪টি উপাদান অ্যাক্টিনিয়াম থেকে ভারী। এবং এগুলোর অ্যাক্টেনিয়ামের সাথে কিছু সাদৃশ্যতা থাকবে। দেখা গেল, এই ক্রমতেই ইউরেনিয়াম-উত্তর মৌলগুলো রয়েছে। সিবর্গের অনুমানটিই বর্তমান সারণির একটি প্রধান পুনঃর্নিমাণ গড়ে দেয়। ল্যানথেনাইড সিরিজের ঠিক নীচে স্ট্রিপ আকারে অ্যাক্টিনাইডকে স্থান দেওয়া গিয়েছে। ১৯৫১ সালে সিবর্গ রসায়নে নোবেলে পুরস্কার পান।</p> <p>বর্ণাঢ্য জীবনে সিবর্গ অনেকটা সময় ধরে নিউক্লিয়ার মেডিসিন নিয়ে পড়াশুনো ও গবেষণা করেন। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ আয়োডিন-১৩১ আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর মায়ের থাইরয়েড রোগ পুরোপুরি নির্মূল করেন এই আইসোটোপ প্রয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের দশম রাষ্ট্রপতির পারমাণবিক উপদেষ্টা ছিলেন সিবর্গ। তিনিই একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি নিজের নামে একটি মৌলের নামকরণ করেছিলেন- সিবর্জিয়াম (১০৬)। এ সমন্ধে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেকে দেওয়া এটি আমার সবচেয়ে বড়ো সম্মান।’</p> <p><br /> <strong>১৮ এপ্রিল ১৯১২</strong><br /> ইশপেমিং, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে জন্ম।</p> <p><strong>১৯৩৭</strong><br /> রসায়ন ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে।</p> <p><strong>১৯৩৭-১৯৪৬</strong><br /> একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষক। অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৪৫ সালে।</p> <p><strong>১৯৪১</strong><br /> তিনি ও তাঁর গবেষণা দল প্লুটোনিয়াম আবিষ্কার করেন। দলে ছিলেন এডউইন ম্যাকমিলান, জোসেফ কেনেডি এবং আর্থার ওয়াহল।</p> <p><strong>১৯৪২</strong><br /> মানহাটন প্রজেক্টে যোগদান।</p> <p><strong>১৯৪৪-১৯৫৮</strong><br /> গবেষণা দলের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেন। আবিষ্কার করেন:<br /> ১৯৪৪: কুরিয়াম ও অ্যামেরিসিয়াম।<br /> ১৯৪৯: বার্কেলিয়াম।<br /> ১৯৫০: ক্যালিফোর্নিয়াম।<br /> ১৯৫২: আইনস্টেনিয়াম ও ফারমিয়াম।<br /> ১৯৫৫: মেন্ডেলেভিয়াম।<br /> ১৯৫৮: নোবেলিয়াম।</p> <p><strong>১৯৫১</strong><br /> রসায়নে নোবেল অর্জন।</p> <p><strong>১৯৫৮-১৯৬১</strong><br /> ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের আচার্য।</p> <p><strong>১৯৬১-১৯৭১</strong><br /> চেয়ারম্যান, যুক্তরাষ্ট্রন পারমাণবিক শক্তি কমিশন।</p> <p><strong>১৯৯৭</strong><br /> জীবিত একমাত্র বিজ্ঞানী হিসেবে রচনা করলেন এক নতুন ইতিহাস। নিজের নামে একটি মৌলের নামকরণ। </p> <p><strong>২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯</strong><br /> লাফায়েট, ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্রোকে মৃত্যু।<br />  </p>