<p>আলোই রঙের উৎস। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে আলো ব্যবহার করি—যেমন, সূর্যের আলো, বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো কিংবা টর্চ বা সার্চ লাইটের আলো—সবই সাদা রঙের।</p> <p>কিন্তু পৃথিবীর বুকে এতো এতো রং—সবুজ, হলুদ, সোনালি ফসলের খেত, নীল আকাশ, নানা রঙের ফুল, প্রজাপতি—এগুলো কোত্থেকে এলো?</p> <p>একটু খেয়াল করলেই কিন্তু ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নিশ্চয় এগুলো কোনো এক উপায়ে সাদা আলোকে ভেঙে ফেলতে পারে।</p> <p>আমাদের চারপাশের সব বস্তুতে (কালো বস্তু বাদে) কোনো না কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে। সেই রঞ্জক পদার্থগুলো সাদা আলো ভাঙতে পারে। সাদা আলো হলো সাত রঙের মিশ্রণ- বেগুনি, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুন, কমলা ও লাল।</p> <p>কিন্তু শুধু সাদা আলো ভাঙলেই তো কোনো একটা নির্দিষ্ট রং সৃষ্টি হবে না। এটা ঠিক, প্রিজমও সাদা আলো ভাঙতে পারে। কিন্তু প্রিজম থেকে ভেঙে যে আলো বের হয় তা কোনো একটা নির্দিষ্ট রঙের নয়। বরং সাত রঙের একটা বর্ণালী রেখা দেখা  বের হয়। অনেকটা রঙধনুর মতো।</p> <p>তাহলে কোনো একটা বস্তু একটা নির্দিষ্ট রঙের হয় কীভাবে?</p> <p>ধরা যাক, গাছের পাতার কথা। গাছের পাতায় ক্লোরোফিল নামের এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে। সূর্যের সাদা আলো গাছের পাতায় পড়লে ক্লোরোফিল সাদা আলোকে বিশ্লেষণ করে ফেলে। তারপর বিশ্লিষ্ট আলো থেকে সবুজ বাদে বাকি ছয় রঙের আলো শোষণ করে খাদ্য ও শক্তি তৈরি করে। অশোষিত সবুজ আলো তখন প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে বলে আমরা গাছের পাতা সবুজ দেখি।</p> <p>অন্যান্য বস্তুতেও এমন রঞ্জক পদার্থ থাকে। যে পদার্থের রঞ্জক পদার্থ যে রংটা শোষণ করতে পারে না সেই পদার্থকে সেই রঙের দেখা যায়।</p> <p>কালো রঙের বস্তুর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটা অন্যরকম। যে বস্তুর রং কালো তাতে এমন একটা রাসায়নিক পদার্থ থেকে যে প্রায় সূর্যের সাদা রঙের প্রায় সবটুকু শোষণ করে ফেলে। খুব কম আলোই সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়। তাই সেই বস্তুর কোনো রং থাকার কথা নয়। আর রং না থাকা মানে কালো রঙের হওয়া।</p> <p>মানুষের চুলের কথাই ধরা যাক। মস্তিস্কের একেবারে উপরিভাগের স্তরের নাম কর্টেক্স। এতে এমন একটা রঞ্জক পদার্থ আছে, যেটা চুল কী রংয়ের হবে সেটা নির্ধারণ করে। দক্ষিণ এশিয়া, মানে আমাদের অঞ্চলের মানুষের কর্টেক্সে যে রঞ্জক পদার্থ থাকে, সেটা সূর্যের সব আলো গিলে ফেলে। তাই আমাদের চুল কালো।</p> <p>কিন্তু ইউরোপিয়ানদের চুলের রঞ্জক পদার্থ সব রংয়ের আলো শোষণ করতে পারে না। তাই তাদের কারো চুলের রং সোনালি কারো বা বাদামি, কারও আবার সাদা। সাদা-চুলোদের কর্টেক্সে যে পদার্থ থাকে, তা কোনো রংই শোষণ করতে পারে না।</p>