<p>এ বছর ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে আজকের (২ নভেম্বর) ভূমিকম্পের মাত্রায় সবেচেয়ে বেশি —৫.৬ মাত্রার। গত দুই দশকে এটাই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। যদিও হতাহতের ঘটনা তেমন ঘটেনি বললেই চলে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোতে। কিন্তু নিয়মিত ভূমিকম্প আসলে বড় ধরনের ভূমিকম্পেরই বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।</p> <p>বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ দুটি টেকটোনিক প্লেট। একটা ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট, অন্যটা বার্মা টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেট দুটি পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। শুধু এ দুটি নয়, ভারতীয় প্লেট উত্তর দিকে ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গেও লেগে আছে।</p> <p>টেকটোনিক প্লেটগুলো কী—এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই মনে উঁকি দিচ্ছে?</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/02/1341757"><span style="color:#c0392b;">আরো পড়ুন : ভূমিকম্প কেন হয়?</span></a></p> <p>পৃথিবী একটা গোলক। এর কেন্দ্রে রয়েছে গলিত-গরম লাভা। এর ওপরে নানা স্তরে বিভক্ত শীলাস্তর। একেবারে ওপরে ভূপৃষ্ঠ। এই ভূপৃষ্ঠ আসলে অবিচ্ছিন্ন নয়, বেশ কয়েকটি চলনক্ষম প্লেটে বিভক্ত। এই প্লেটগুলোকেই বলে টেকটোনিক প্লেট। এর মধ্যে বড় আকারের সাতটা মহাদেশীয় প্লেট যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু ছোট প্লেট। বাংলাদেশ যে প্লেটের ওপরে অবস্থান করছে, এর নাম ভারতীয় প্লেট। </p> <p>আসলে পৃথিবীর সবগুলা মহাদেশ একসঙ্গে যুক্ত ছিল। কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে এগুলো একসময় আলাদা হয়ে যায়। নড়াচড়া করার শক্তিও অর্জন করে। আমাদের ভারতীয় প্লেট একসময় ছিল আফ্রিকার কাছাকাছি। চলতে চলতে এই প্লেট একসময় ইউরেশিয়া আর বার্মা প্লেটের কাছাকাছি চলে আসে। ধাক্কা লাগে ওই দুটো প্লেটের সঙ্গে। তার ফলেই জন্ম হিমালয় পর্বতশ্রেণির।</p> <p>যখন একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখনো ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে দুটি প্লেটেই। আবার প্লেটগুলো যদি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় তাহলেও ভূমিকম্প হবে। বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রধান কারণ ভারতীয় প্লেটের সঙ্গে বার্মা প্লেটের এই সংযোগ।</p> <p>কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে বঙ্গোপসাগরে আন্দামানের পাশ দিয়ে এই দুই প্লেটের সংযোগ রেখা বয়ে গেছে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে ধাক্কা লাগার ফলে ভারতীয় প্লেট বার্মা প্লেটে বেশ খানিকটা ওপরে উঠে গেছে। ফলে এখানে জমা হয়েছে প্রচুর শক্তি।</p> <p>একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের ওপর উঠে গেলে কেন শক্তি জমা হয় তার উদাহরণ আপনি পাবেন বাস্তব জগতেই। আমরা একটা সাধারণ প্লেটের কথাই ভাবি। একটা প্লেটের কিনারা আরেকটা প্লেটের তলা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন। প্লেট দুটো চাপা দেওয়ার সময় একটু কেঁপে উঠবে। কিন্তু চাপা দেওয়ার পর একেবারে স্থির থাকবে দুটো প্লেটই, যতক্ষণ না নড়াচড়া করা হচ্ছে।</p> <p>কিছুক্ষণ পর ওপরের প্লেটটা সরিয়ে নিন। যত সাবধানেই সরান, নিচের প্লেট কেঁপে উঠবেই। কারণ যে শক্তিটা দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল নিচের প্লেট, সেটা এতক্ষণ জমে ছিল। কিন্তু ওপরের প্লেট সরানোর পর সেই শক্তি মুক্ত হবে, কম্পন উঠবে নিচের প্লেটে। ওপরের প্লেটেও কম্পন হয়। কিন্তু আপনি হাত দিয়ে ধরছেন বলে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।</p> <p>টেকটোনিক প্লেটেও এমন ঘটনা ঘটছে। ভারতীয় প্লেট একটু একটু করে উত্তর ও পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে বার্মা প্লেটটি সরে আসছে পশ্চিমের দিকে। অর্থাৎ ভারতীয় প্লেটটি ওপরে উঠে যাচ্ছে আর নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বার্মা প্লেট। ফলে দুই প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি জমা হচ্ছে শক্তি। </p> <p>দুই প্লেটের সংঘর্ষের কারণেই এখন ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। এটাকে বড় ভূমিকম্পের আভাস মনে করছেন গবেষকরা। কারণ দুই প্লেটের কাছাকাছি হয়ে স্থির হওয়ার আগ পর্যন্ত শক্তি জমা হচ্ছে। এর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে স্বল্প আকারে শক্তি অবমুক্ত হচ্ছে। তার কারণেই এই ভূমিকম্পগুলো হচ্ছে। কিন্তু শক্তি যখন অনেক বেশি করে অবমুক্ত হবে, দুটো প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে চাইবে, তখন বড় বড় ভূমিকম্প হবেই। সেটার মাত্রা হতে পারে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার। </p> <p>ভূমিকম্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এটা ঠিক কবে কখন ঘটবে সেটা নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো প্রযুক্তি বা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় যতটা সাফল্য এসেছে আমাদের, ভূমিকম্পে সেটা সম্ভব নয়। শুধু সচেতনতা, সঠিক নগর পরিকল্পনা ও সুপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণই পারে ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে।</p> <p>তথ্যসূত্র : নেচার জিও</p>