<p>প্রশ্নটা বেয়াড়া। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে ‘বেয়াড়া’ বলে কোনো প্রশ্ন নেই। যেকোনো প্রশ্ন করতেই পারেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের জবাবই বিজ্ঞানের কাছে আছে!</p> <p>তাই বলে সূর্য নিভিয়ে দেওয়া! অবাক ব্যাপারই বটে। সূর্যকে অত সহজে নেভানো সম্ভব নয়। পানি দিয়ে কি সম্ভব?</p> <p>ধরে নিলাম সম্ভব, তাহলে কোথায় দাঁড়িয়ে পানি দেবেন? অতবড় বালতিই বা পাবেন কোথায়? সূর্যের অত কাছেই বা যাবেন কীভাবে?</p> <p>ধরে নিলাম, কোনো এক প্রক্রিয়ায় এ সবই সম্ভব হলো। তাখন কি সূর্য নিভে যাবে?</p> <p>সূর্যকে যে অগ্নিগোলক হিসেবে দেখি, এটা কিন্তু সাধারণ আগুন নয়। সাধারণ আগুন জ্বালানোর জন্য তিনটি শর্তের দরকার হয়। দাহ্য পদার্থ, পর্যাপ্ত তাপমাত্রা আর অক্সিজেন। সূর্যের ভেতর দাহ্য পদার্থ আছে, যেমন হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। পর্যাপ্ত তাপমাত্রাও আছে। কিন্তু নেই আগুন জ্বালাবার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন।</p> <p>অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। পৃথিবীতে যত আগুন জ্বলে, এগুলো থেকে তিনটি শর্তের যেকোনো একটা যদি সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে আগুন নিভে যাবে। ধরা যাক, কোথাও আগুন জ্বলছে। এক সময় সেখানকার জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে, তখন যদি নতুন করে আর জ্বালানি সরবরাহ না করা হয়, আগুন যাবে নিভে। এজন্যই কোনো একটা বাড়িতে যদি আগুন লাগে, আশাপশে যদি আর কোনো বাড়ি পোড়ানোর মতো না থাকে, তাহলে প্রথম বাড়িটা পুড়িয়েই নিভে যেতে হবে আগুনকে। আর যদি পাশে আরও বাড়ি থাকে পোড়ানোর মতো, তাহলে আগুন সহজে নিভবে না।</p> <p>এবার আসা যাক তাপমাত্রায়। আগুন নেভানো যাবে যদি যে জিনিসটা জ্বলছে সেটার তাপমাত্রা কমিয়ে দেওয়া যায়। আগুনে পানি দিলে দাহ্য বস্তুটির তাপমাত্রা কমে যায়। তাই পানি ঢেলে সাধারণ আগুন নেভানো সম্ভব হয়।</p> <p>অক্সিজেনের প্রবাহ যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে আগুন নিভে যাবে। ধরা যাক, বাঁশ কিংবা কাঠে আগুন লেগেছে। আপনি যদি এর ওপর পানি ঢালেন, তাহলে তাপমাত্রা তো কমবেই, তার ওপর কিছু পানি বাষ্পিভূত হয়ে আগুনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে। বাষ্পের সেই বেড়া ডিঙিয়ে অক্সিজেন পৌঁছুতে পারবে না আগুনের কাছে। আগুন নিভে যাবে তখন। তাই বলে প্রেট্রোল বা বিদ্যুতের আগুন পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করবেন না, হিতে-বিপরীত হবে।</p> <p>সূর্যকেও পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করা বৃথা। সূর্যের ভেতরকার যে অগ্নিগোলা, সেটা আসলে সাধারণ আগুন নয় এবং এর জন্য অক্সিজেনেও দরকার হয় না। সূর্যের ভেতরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুদের মধ্যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটে। একাধিক নিউক্লিয়াস এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে আরও ভারী মৌলের পরমাণু তৈরি করে। এ বিক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন।</p> <p>ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে, সেই তাপ এতটাই বেশি সূর্যের ভেতরকার পরমাণু ও মুক্ত কণাগুলি উৎপত্ত হয়ে আলো বিকিরণ করে। তাই কোনোভাবেই সাধারণ আগুনের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।</p> <p>সূর্যের ভেতরকার তাপমাত্রার কথা বাদ দিলাম। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রাই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৯০০ পিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেই কঠিন সোনা বাষ্পে পরিণত হয়। পানির তাহলে কী অবস্থা হবে, ভাবুন। </p> <p>এই তাপমাত্রায় পানি রাসায়নিকভাবে বিশ্লষ্ট হয়ে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন আলাদা হয়ে যাবে। হাইড্রোজেন দাহ্য পদার্থ। অর্থাৎ নিজে জ্বলে। অন্যদিকে অক্সিজেন নিজে না জ্বললেও জ্বলতে সাহায্য করে। সুতরাং সূর্যে পানি ঢাললে তখন পৃথিবীর মতো সেখানে আগুন লেগে যেতে পারে।</p> <p>এর চেয়ে অবশ্য নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটা সহজ। আগেই বলেছি সূর্যের ভেতরে নিউক্লিয়ার ফিউশন হচ্ছে অনবরত। অর্থাৎ ফিউশনের জন্য পর্যাপ্ত তাপমাত্রা সেখানে আছে। সুতরাং হাউড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসও সেই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় অংশ নেবে। পানি ঢাললে নেভার বদলে বেশি বেশি ফিউশন হবে সূর্যের ভেতরে। অর্থাৎ সুর্যের প্রজ্জ্বলন বেড়ে যাবে আরও।</p> <p>সূত্র: পপুলার সায়েন্স<br />  </p>