দেশের মাটিতে মরতে চেয়েছিলেন হায়দার আলী

&lt;p&gt;পুঁজিবাদী রাজনীতির কাঠামোতে স্থান পাননি হায়দার আলী। তাই বেদনাহত চিত্তে, এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে অকালে বড় অভিমান করে চলে গেছেন ওপারে। আজ থেকে ১১ বছর আগে ৬ মে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময়েও তার প্রিয় মুজিব কোটটি গায়ে ছিল। &lt;/p&gt; &lt;p&gt;তাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়া হয়েছিল। যেতে চাননি। লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি জানতেন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অনেকটা জোর করেই সুহৃদরা তাকে ভারতে নিয়েছিলেন। ভারতের হাসপাতালে থাকতে সন্তানদের কাছে শুধু একটি প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন; ছেলে-মেয়েদের বলেছিলেন, &lsquo;তোরা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে চল। যে দেশটার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি-সেই প্রিয় স্বদেশেই আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।&rsquo; অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ছেলে-মেয়েরা তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে একবার চোখ মেলে শুধু জানতে চেয়েছিলেন, &lsquo;আমরা এখন কোথায়?&rsquo; গাড়িতে থাকা স্বজনরা জানিয়েছিলেন, &lsquo;আমরা এখন সীমান্ত পার হয়ে যশোরে।&rsquo; আর কোনো কথা বলেননি, কয়েক মিনিট পরেই তিনি নীরবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;ফরিদপুর হাইস্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ছিলেন সুবক্তাও। সে জন্য নেতাদেরও পছন্দের কর্মী হয়ে ওঠেছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারে যান ফরিদপুরে। ফরিদপুর থেকে লঞ্চে নগরকান্দা, ভাঙ্গা হয়ে বরিশাল তারপর ভোলা যাওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর। আগের রাত থেকেই মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। ফরিদপুরের জনসভা শেষ করে পুরোটা ভিজে বঙ্গবন্ধু লঞ্চে ওঠেন। কুমার নদের দুই পাড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য। লঞ্চের সামনে মাইক বাঁধা, সে মাইকে অনর্গল বক্তৃতা দিচ্ছেন স্কুলের ছাত্র হায়দার আলী। বক্তৃতা মানে দু&rsquo;পাড়ের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর আগমন বার্তা জানাচ্ছেন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;বঙ্গবন্ধু ছোট্ট লঞ্চটির সামনের কেবিনে বসা। হায়দার আলীর বক্তৃতা শুনে একপর্যায়ে তাকে কাছে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। একটি গামছা দিয়ে তার মাথাটা মুছিয়ে দিয়ে বললেন, &lsquo;তুমি এত ভালো বক্তৃতা করো।&rsquo; বঙ্গবন্ধু তার মাথায় হাত দিয়েছেন, আদর করে দিয়েছেন -তা নিয়ে অসীম গর্ব ছিল হায়দার আলীর। পরবর্তীকালে হায়দার ভাই এমনভাবে সে ঘটনার কথা বলতেন যেন তার জীবনে শত শত কোটি টাকার চেয়ে ওটাই মহামূল্যবান। আসলেই সেটাই ছিল তার অন্তরের বিশ্বাস। &lt;/p&gt; &lt;p&gt;১৯৭১ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যান ভারতে। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসেন দেশের ভেতরে। প্রথমে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে চাননি ভারতীয় সেনারা, বয়সে কম বলে। পরে হায়দার আলীর জিদ এবং দেশপ্রেমের কাছে নত হয়ে ভারতীয় সেনারা তাকে প্রশিক্ষণ দেন। সে সময়ে হায়দার আলীর উচ্চতা ছিল ঠিক &lsquo;থ্রি নট থ্রি&rsquo; রাইফেলের সমান।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হায়দার আলীর দায়িত্ব পড়ে ঈদের দিনে ফরিদপুর সিনেমা হলে গ্রেনেড ছোড়ার। ঈদের দিনে পাকিস্তানি সেনারা সিনেমা হলে গিয়েছিল উর্দু সিনেমা দেখতে। টুপি মাথায় পাঞ্জাবি পরা হায়দার আলী গ্রেনেড বেঁধে নেন পায়জামার আড়ালে। ঠিকঠাক মতো অপারেশন শেষে পৌঁছে যান নিরাপদে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;মুক্তিযুদ্ধের শেষে ফিরে যান পাঠশালায়। এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। কলেজের জিএস নির্বাচিত হন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এর মধ্যে ঘটে যায় পঁচাত্তর সালের বিয়োগান্তক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদীদের দলে সামিল হন হায়দার আলী। পঁচাত্তরের পরে ছাত্র থাকা অবস্থায় মুজিব কোট পরা শুরু করেন তিনি। যে সময়ে ভয়ে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতেন না; সে সময়ে নিয়মিত মুজিব কোট পরে হায়দার আলী জানান দিতেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর লোক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন তিনি।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;শিক্ষা জীবন শেষে রাজনীতির পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কোনো দিন লুটপাটের রাজনীতিতে জড়াননি। বিশ্বাস করতেন, পুঁজিবাদী রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের মুক্তি নেই বলেই বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে এগিয়েছিলেন। বাকশাল করেছিলেন। বাকশাল কোনো দল ছিল না-বাকশাল একটি জাতীয় প্লাটফর্ম। সবদলের প্রতিনিধি ছিল সেখানে। হায়দার ভাই বলতেন, &lsquo;দেশের সাধারণ মানুষ বাকশাল বুঝে ওঠার আগেই তা বুঝেছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সে কারণেই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।&rsquo; &lt;/p&gt; &lt;p&gt;হায়দার ভাই আশাবাদী মানুষ ছিলেন। তবে মাঝে মধ্যে দুঃখ করে বলতেন, &lsquo;বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।&rsquo; আজ চারদিকে চোখ মেলে তাকালে হায়দার ভাইয়ের কথা মনে পড়ে; যখন দেখি বিশেষ করে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এক সময়ের আওয়ামী লীগবিরোধী পরিবারগুলোর সন্তানেরা ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ভিড় জমিয়েছে আওয়ামী লীগে। তাদের লুটপাটের দায় পড়ছে বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর। অন্যদিকে দূর থেকে আরো দূরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়তো জানেন সে কারণে তিনি মাঝে মধ্যে বলেন দলে অনুপ্রবেশের কথা। কিন্তু শেখ হাসিনা বাদে আওয়ামী লীগের অন্য যারা এমপি-মন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন চ্যালেঞ্জ করে বলা যায়; তারাই দলে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছেন টাকা দিয়ে, নিজেদের স্বার্থে। &lt;/p&gt; &lt;p&gt;হায়দার ভাই মাঝে মাঝে বলতেন বঙ্গবন্ধু মানে হিমালয়ের চেয়ে বড় কিছু। কোনোভাবেই তাঁকে ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। আমার এতোটুকু জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গেই তো পরিচয় হলো, কথা হলো কিন্ত আমি হায়দার ভাইর মতো দেশপ্রেমিক, মুজিবভক্ত নীতির প্রশ্নের অটল মানুষ খুব কমই দেখেছি। তিনি আমার-আমাদের নেতা ছিলেন, রাজনীতির শিক্ষক ছিলেন। কখনো ব্যক্তি জীবনে বা রাজনীতির ভাবনায় হতাশ হয়ে হায়দার ভাইয়ের কাছে গেলে ফিরে আসতাম উজ্জীবিত হয়ে। প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি হায়দার ভাইকে। উপরে ভালো থাকুন হায়দার ভাই। হয়তো কিছু হতে পারিনি, তবে আপনার মতোই আছি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়িনি। আপনি দেখে যেতে পারেননি হায়দার ভাই, তবে বড় আশার বিষয় বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে এগিয়ে যাচ্ছে আপনার-আপনাদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীন করা বাংলাদেশে। পূরণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।&lt;/p&gt;

দেশের মাটিতে মরতে চেয়েছিলেন হায়দার আলী

লায়েকুজ্জামান

লায়েকুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

রাষ্ট্রপতির পাবনা সফর

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ : বাঙালির দিকনির্দেশনামূলক এক গ্রন্থ

মো. ফারুক হোসেন চৌধুরী

মো. ফারুক হোসেন চৌধুরী

সর্বশেষ সংবাদ

ব্যাটিং নিয়েই ভাবনা বাংলাদেশের

পিরোজপুরে আহত কলেজছাত্রের মৃত্যু

৬ দি‌নের ব্যবধা‌নে একই গাড়ির চাপায় চালক ও সহকারীর মৃত্যু

পঞ্চগড় বৃষ্টি চেয়ে কাঁদলেন মুসল্লিরা

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আবু জাফর

ড্যানিশ নীটওয়্যার চালু ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে শ্রম ভবন ঘেরাও

সোনার দাম ভরিতে কমল ২১০০ টাকা, আজ থেকেই কার্যকর

সওজের জায়গা দখল : যাত্রীছাউনিতে সেলুন, ব্রিজে চা দোকান

তীব্র দাবদাহে পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করল বিএনপি

নামাজ পড়ে সড়কে হাঁটছিলেন, বেপরোয়া পিকআপের তলায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু

‘নির্মীয়মাণ ভবনে লার্ভা পেলে প্রয়োজনে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হবে’

বলিউডে ফিরছেন প্রীতি জিনতা, নতুন সিনেমার শুটিং শুরু

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাবোওকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করল ইন্দোনেশিয়া

ধর্ষণের অভিযোগে প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার গ্রেপ্তার

ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদল

রঘু ডাকাত কে ছিলেন?

‘চরম ন্যক্কারজনক, বিচার চাই’, এফডিসির ঘটনায় রিয়াজ

হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দুষছেন এজেন্সি মালিকরা

আগুন নিয়ে খেলা ও চুরি করার বাসনা

অভয়নগরে এলজিইডির বেহাল সড়ক, দুর্ভোগে মানুষ

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ের দল ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করতে সিনেটে বিল পাস

‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন অভিনেত্রী!

কুবির আরো এক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

লুপ্ত খেলা কুতকুত

পঞ্চগড়ে ট্রাক-ট্রাক্টর সংঘর্ষে নারীসহ প্রাণ গেল ২ জনের

গোয়ালন্দে হিটস্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি কক্সবাজারে

২০ বছর পর কোচ ছাড়া খেলবেন জোকোভিচ!

সর্বাধিক পঠিত

লাশের ওপর আক্রোশ জাহাঙ্গীরের!

‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা শুরু হলো মারামারি দিয়ে

আদালতের রায়ে ‘মা’ হিসেবে ইতিহাস গড়লেন বাঁধন

বিচ্ছেদের ১৪ বছর পর হিল্লোল: তিন্নির সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন খুব ভালো

ইরানে ফের হামলা করলে ইসরায়েলের ‘কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না’

দেবদাসের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মনোজ!

মুস্তাফিজের শেষ ওভারে ম্যাচ হারল চেন্নাই

উপজেলা নির্বাচন : প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৫ জন

‘দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি’

অবৈধ সম্পদের পাহাড়ে দুই ভাই, সাভারের রাজীব ও সমর

নুডলসের প্যাকেট কাটতেই বেরিয়ে এলো সোনা-হীরা!

স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জরিপের বিষয়ে প্রচারের নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

মেট্রো রেল-৫ : সাউদার্ন রুটে ব্যয় করা হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি

তাপপ্রবাহে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

শপথ নিলেন শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সদস্যরা

পাবনায় ৫ লক্ষাধিক টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক!

ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ : সৌদি মন্ত্রী

‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন অভিনেত্রী!

ক্যামেরায় শরীর জুম করার অভিযোগ, খেপলেন নোরা

স্পিন বিভাগে পার্থক্য তৈরি করতে চান বাংলাদেশের নতুন কোচ

রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনেও গ্রামে লোডশেডিং

তেলেঙ্গানায় বাতাসে ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ সেতু

৫ লক্ষাধিক টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক

কোরআন থেকে শিক্ষা

প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ২৫ প্রার্থী

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

‘চরম ন্যক্কারজনক, বিচার চাই’, এফডিসির ঘটনায় রিয়াজ

জিবুতিতে ফের অভিবাসীদের নৌকাডুবি, ১৬ জনের মৃত্যু

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে সিলেটে ভারতের মেয়েরা

দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন