<p>কার্ডিওলজিস্টদের নিজেদের সুস্থ ও ফিট থাকার প্রতি নজর দিতে হবে। চিকিৎসক হিসেবে আমি নিজে যদি ফিট না থাকি কিংবা আমার জীবনযাপন যদি স্বাস্থ্যকর না হয় তাহলে রোগীকে কিভাবে পরামর্শ দেব? কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে আমরা কিন্তু অনেক চাপযুক্ত জীবন যাপন করি। কার্ডিওলজিস্টরা মানুষের হার্ট নিয়ে কাজ করে। তাদের নিজেদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা ভালোভাবে রোগীদের চিকিৎসা করতে পারি।</p> <p>এখন রোগীদের প্রসঙ্গে আসি। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কাজকর্ম। আমরা রোগীদের হার্টের বা হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা করি, এনজিওপ্লাস্টি করি, বাইপাস করি, পেসমেকার বসাই—অনেক কিছু করি। কিন্তু দিন শেষে যখন রোগী বাসায় যায় তখন সবাই আমাদের কাছে একটাই প্রশ্ন করে, কী খাব? মানুষের মধ্যে এ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে।</p> <p>খাওয়ার তিনটা ভাগ আছে। একটা হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, একটা হলো প্রোটিন বা আমিষ, আরেকটা হলো ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাবার। অবাক করার মতো বিষয়, আমার ৫০ শতাংশ রোগী শর্করা কী তা কোনো দিন শোনেইনি। আবার আমি যদি বলি ভাত, তাহলে বুঝতে পারে।</p> <p>আমাদের দেশে আরেকটা ভুল ধারণা আছে যে হার্ট অ্যাটাক হলে আর জীবনে কোনো দিন গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। অবশ্যই আপনি গরুর মাংস খেতে পারবেন। আমি আমার সব রোগীকে বলি, আপনার যদি গরুর মাংস খেতে ভালো লাগে তাহলে আপনি সপ্তাহে এক দিন তা খেতে পারেন। আপনি তো এক কেজি গরুর মাংস খাবেন না একবেলায়, বড়জোর চার-পাঁচটি টুকরা খাবেন। এটা আপনাকে মেরে ফেলবে না।</p> <p>মূল কথা হলো, একজন হৃদরোগীর যে খাদ্য পরিকল্পনা তা পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই। শুধু বেড়ে ওঠা শিশু ছাড়া। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে একটা ভারসাম্যপূর্ণ খাবারের মধ্যে থাকতে হবে। এর মধ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবার থাকতে হবে।</p> <p>শর্করার ক্ষেত্রে যাদের স্থূলতা আছে, তাদের ভাত খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে। ভাত সবচেয়ে খারাপ জিনিস। কারণ এতে প্রচুর সুগার বা চিনি থাকে। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। এটাকে আমরা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা বলি। লাল চাল, মোটা চাল, লাল আটা, ওটস—এগুলো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। লাল আটা শিশুদের জন্যও ভালো। সে জন্যই আমি বলছি পরিবারের সবার জন্য যা ভালো ও স্বাস্থ্যকর তা হার্টের রোগীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।</p> <p>এবার আমিষের কথা বলি। আমরা সবাই বলি উদ্ভিজ্জ আমিষ খুব ভালো। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতেই এটা নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। যেমন—সব ধরনের ডাল, বুট, রাজমা, বীজ ইত্যাদি। এ ছাড়া মাছ প্রাণিজ আমিষের খুব ভালো উৎস। আমাদের দেশে তো মাছের কোনো অভাব নেই। মাংসের মধ্যে মুরগি থেকে পাওয়া প্রোটিনও খুব ভালো। কিন্তু আমি মনে করি পোল্ট্রি মুরগি খুব ভালো কিছু নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশি মুরগি খেতে পারে।</p> <p>তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শাক-সবজি। বলা হয়ে থাকে, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যতালিকায় অন্তত শাক-সবজি ও ফলমূল থাকা উচিত। আমাদের দেশের মানুষ সবজি খেতেই চায় না। তারা মনে করে, আলু, কচু এগুলো সবজি। আসলে এগুলো সবজি নয়, কার্বোহাইড্রেট। আমাদের দেশে লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, ঢেঁকিশাক, কলমিশাক, পাঁচমিশালি শাকসহ বহু ধরনের শাক আছে। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্টের জন্য খুব ভালো। এ ছাড়া যত রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল আমরা আমাদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারব তত ভালো। যেমন—টমেটো, গাজর, বিট, ডালিম এগুলো আমরা সহজেই পাই। হার্টের রোগীদের এমন কিছু ওষুধ খেতে হয় যেগুলোর ফলে শরীর থেকে লবণ, পটাসিয়াম ইত্যাদি কমে যেতে পারে। সবুজ শাক-সবজি, ডাল, মাল্টা, কমলালেবু, টমেটোতে পটাসিয়াম থাকে।</p> <p>আমাদের দেশে আমরা সব কিছু বেশি রান্না করে ফেলি। প্রয়োজনের বেশি রান্না করা উচিত নয়। আমরা কাঁচা খাবার খেতে চাই না। যেমন—শীতে আমরা গাজর খেতে পারি।  এ ছাড়া আমরা জাতি হিসেবে অনেক বেশি লবণ খাই। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।</p> <p><strong>লেখক : </strong>সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, <a href="https://uhlbd.com/departments/cardiology"><span style="color:#3498db">ইউনাইটেড হাসপাতাল</span></a></p>