<p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p><strong>ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি, ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ বা কিডনি বিকল প্রারম্ভিকভাবে শনাক্ত হলে প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান বর্জন, ওজন কমানো, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ডায়েট, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রস্রাবে এলবুমিন নির্গমন প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের অষুধ আছে, যেগুলো একই সঙ্গে কিডনির উন্নতির পাশাপাশি হৃদরোগজনিত জটিলতা কমায়। প্রেসার কমানোর কিছু ওষুধ, ডায়াবেটিসের কিছু ওষুধ, নন-স্টেরয়েড এমআরএ এই রোগে কার্যকর। একই সঙ্গে পুরনো চিকিৎসার পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।</strong></p> <p>কিডনি বিকলের কারণ হিসেবে বিশ্বে ডায়াবেটিস শীর্ষে। স্থায়ী কিডনি বিকলের কারণে ডায়ালিসিস করছে এমন প্রতি তিনজনের একজন রোগী ডায়াবেটিক। যদিও অনেক ক্ষেত্রে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হলে ডায়াবেটিসের ওষুধ প্রয়োজন পড়ে না, বা অল্প মাত্রায় লাগে। শুরুতেই কিডনি আক্রান্ত কি না জানতে পারলে কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধযোগ্য।</p> <p><strong>ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি</strong></p> <p>এটি শুরু হয় কিডনি দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে এলবুমিন প্রোটিন নির্গত হওয়া দিয়ে। দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিসে প্রথমে কিডনির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছাঁকনি (গ্লোমেরুলাস) অতিরিক্ত মাত্রায় রক্ত ফিল্টার করে (হাইপার ফিল্ট্রেশন)। এক পর্যায়ে প্রস্রাবের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে এলবুমিন প্রোটিন নির্গত (মাইক্রো এলবুমিন ইউরিয়া) হওয়া শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে উচ্চ রক্তচাপ, অধিক মাত্রায় এলবুমিন নির্গত হওয়া (ম্যাক্রো এলবুমিন ইউরিয়া) এবং কিডনির রক্ত ফিল্টার করার ক্ষমতা (জিএফআর বা গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট) কমা শুরু হয়।</p> <p>পুরো ব্যাপারটিকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বলে, যা ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি)। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী ক্রনিক কিডনি ডিজিজে (ধীরগতির কিডনি বিকল) আক্রান্ত হয়।</p> <p><strong>ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ (ডিকেডি)</strong></p> <p>ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি শব্দটির পরিবর্তে এখন ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ পরিভাষা বেশি ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিসের কারণে যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়, তাই ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ (ডিকেডি)। সব ডায়াবেটিক রোগীর ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির মতো এলবুমিন নির্গত হয়ে কিডনি বিকল হয় না, একটা বড় অংশের প্রস্রাবে এলবুমিন যায় না, কিন্তু জিএফআর কমতে থাকে।</p> <p>এদের নন-এলবুমিন ইউরিক ডিকেডি বলে। অর্থাৎ ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ বলতে এলবুমিন যাওয়া (এলবুমিন ইউরিক ডিকেডি) বা এলবুমিন না যাওয়া, কিন্তু কম জিএফআরের রোগীদের (নন-এলবুমিন ইউরিক ডিকেডি) বোঝানো হয়। এলবুমিন যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ২০ থেকে ২০০ গুণ বেশি।<br /> টাইপ ১ ডায়াবেটিসের (অল্প বয়সে, ইনসুলিন ঘাটতির জন্য ডায়াবেটিস) ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর এই এলবুমিন যাওয়া শুরু হলেও ক্লিনিক্যাল ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বা ডিকেডির জন্য সাধারণত ১০ বছর সময় লাগে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের (ইনসুলিন প্রতিরোধী হওয়ার জন্য, বেশি বয়সে হওয়া ডায়াবেটিস) ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার সময়ই কিডনি আক্রান্ত থাকতে পারে।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>কিডনি বিকল হলে সাধারণত প্রস্রাব কমে যায়, তবে ডায়াবেটিসের কারণে এবং ছাঁকনিতে রক্ত অধিক ফিল্টারের কারণে (হাইপার ফিল্ট্রেশন) ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বা ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজে শুরুতে প্রস্রাব কমে না, এমনকি বেশি হতে পারে। পর্যায়ক্রমে প্রস্রাবে প্রোটিন বেশি যাওয়া শুরু হলে উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাব কমা, পা ফোলা, রুচি কমাসহ কিডনি বিকলের (সিকেডি) অন্যান্য লক্ষণ স্পষ্ট হতে পারে। কিডনির আকার বড় হতে পারে। এ সময় চোখ পরীক্ষায় রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায় (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি)। সাধারণত দুই কিডনির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। সে ক্ষেত্রে প্রস্রাবের পরীক্ষায় মাইক্রো এলবুমিন বা এলবুমিন-ক্রিয়েটিনিনের অনুপাত নির্ণয় করে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি শুরুতেই শনাক্ত করা যায়।</p> <p><strong>শনাক্তকরণ</strong></p> <p>প্রস্রাবে এলবুমিন যাওয়া শনাক্ত করার জন্য রোগের শুরুতেই মাইক্রো এলবুমিন, এলবুমিন-ক্রিয়েটিনিন অনুপাত এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা উচিত। এলবুমিন বেশি পরিমাণ গেলে প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষায়ও এলবুমিন বা প্রোটিন ধরা পড়ে। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং জিএফআর (গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট) কমে যাওয়া কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া নির্দেশ করে।</p> <p><strong>স্ক্রিনিং</strong></p> <p>কোনো রোগ হওয়ার আগে বা লক্ষণ দেখা যাওয়ার আগেই শনাক্ত করার জন্য যে পরীক্ষা করা হয়, তাকে স্ক্রিনিং বলে। ডায়াবেটিসে নেফ্রোপ্যাথি শনাক্তকরণের জন্য নির্ধারিত সময় আছে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পর প্রথম এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর প্রস্রাবে এলবুমিন পরীক্ষা করতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রোগ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর পরীক্ষা করতে হয়।</p> <p>লেখক : সহযোগী অধ্যাপক</p> <p>নেফ্রোলজি বিভাগ</p> <p>শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুর</p>