<p style="text-align: justify;">ছুটির দিনে পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা কিংবা প্রকৃতির মাঝে কিছু সময় কাটানো—এসবের মধ্যেই ফুটে ওঠে উৎসবের আসল আনন্দ। কিন্তু এবারের ঈদের ছুটিতে কিছু ঘটনা আমাদের গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। দেখা যাচ্ছে, কোথাও সিনেমা প্রদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে, ঈদের এই আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারা? কেন?</p> <p style="text-align: justify;">গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে ঈদের ছুটিতে ‘তাণ্ডব’ নামে একটি সিনেমা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল। স্থানীয় তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় আলেম সমাজের আপত্তির মুখে। আয়োজকদের অভিযোগ—তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, আর সে কারণেই অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে, সিলেটের সীমান্তবর্তী উৎমাছড়া এলাকায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের হঠাৎ করেই চলে যেতে বলেন একদল ব্যক্তি। তারা সেখানে গিয়ে পর্যটকদের বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর হামলা, মৌলভীবাজারে একটি রিসোর্টে তালা দেওয়া, এমনকি টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজবোট ও নৌকা ভ্রমণের সময় গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ঘটনাও সামনে এসেছে। </p> <p style="text-align: justify;">এর আগেও মানিকগঞ্জ ও পাবনায় রিসোর্টে বাধা দেওয়ার নজির রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘মাদক সেবন’ বা ‘অশ্লীলতা’ প্রতিরোধের কথা বলে ‘তৌহিদি জনতা’ নামে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসব বাধার সৃষ্টি করছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।</p> <p style="text-align: justify;">অথচ ঈদের সময় বা ছুটির সময় এমন স্থানে মানুষজনের ভিড় ও আনন্দ-আয়োজন একেবারে স্বাভাবিক বিষয়। কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার প্রতিকার আছে আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে। কিন্তু বিচার-বিবেচনা ও তদন্ত ছাড়াই এমন ‘সাধু উদ্যোগ’ সমাজে ভয় আর নিষেধের সংস্কৃতি গড়ে তোলে।</p> <p style="text-align: justify;">আমাদের সামাজিক পরিসরে এখন যেন বিনোদনের অধিকার এক ধরনের চাপে পড়ে গেছে। অথচ সংবিধান নাগরিকদের মতপ্রকাশ, চলাফেরা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা দিয়েছে। যদি কেউ আইন ভঙ্গ না করেন, পরিবেশের ক্ষতি না করেন কিংবা অন্যের বিশ্বাসে আঘাত না করেন, তাহলে তার আনন্দ করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার কার?</p> <p style="text-align: justify;">বিনোদন কোনো বিলাসিতা নয়। এটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সুস্থতা এবং সংস্কৃতির বিকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা ধর্মীয় নেতা যদি নিজেদের বিশ্বাসকে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চান, তবে তা কেবল ব্যক্তি স্বাধীনতাকে রুদ্ধই করে না, বরং সমাজে এক ধরনের বিভেদ ও শঙ্কার বাতাবরণ তৈরি করে।</p> <p style="text-align: justify;">এই সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সহনশীলতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ। যখন কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা মূল্যবোধ অন্যের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে, তখন রাষ্ট্রকে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে হতে হবে সজাগ ও দায়িত্বশীল, যেন কোনো পক্ষ নিজেদের মতাদর্শের নামে জনজীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।</p> <p style="text-align: justify;"><em>(মতামত লেখকের নিজস্ব)</em></p>