<p style="text-align:justify">আট বছরের একরত্তি শিশু। বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। কে জানত, সেখানেই অপেক্ষা করছিল ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন? বোনের স্বামী ও শ্বশুর মিলে তাকে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়ে তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। গলায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন যেন পিশাচের নখের আঁচড়। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে শিশুটি। এই ঘটনা আমাদের সমাজের এক বীভৎস রূপ উন্মোচন করে।</p> <p style="text-align:justify">এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। কখনো মোটরসাইকেলে ঘোরানোর কথা বলে সাড়ে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ, কখনো ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেওয়া, আবার কখনো মাদরাসার শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ। এই তালিকা যেন ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন জাগে, কেন এমন হচ্ছে? কেন শিশুদের ওপর এমন পাশবিক অত্যাচার? এর পেছনে রয়েছে বহু কারণ। সামাজিক অবক্ষয়, দারিদ্র্য, পারিবারিক সহিংসতা, মাদকাসক্তি, আইনের দুর্বল প্রয়োগ- এমন অনেক কিছুই এর জন্য দায়ী। শিশুদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে এই পরিস্থিতি বদলাবে না।</p> <p style="text-align:justify">শিশু নির্যাতনের শিকার হলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের মনে গভীর ক্ষত তৈরি হয়, যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। তারা ভয়, আতঙ্ক, লজ্জা ও ঘৃণার মতো নেতিবাচক অনুভূতিতে ডুবে যায়। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।</p> <p style="text-align:justify">এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? প্রথমত, আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে, তাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তৃতীয়ত, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের পাশে থাকতে হবে। চতুর্থত, সামাজিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">আসুন, আমরা সবাই মিলে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলি। তাদের স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখি, তাদের হাসিগুলোকে অমলিন রাখি। মনে রাখবেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষা মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা।</p>