১৬ ডিসেম্বর সকালে সুইডেনের স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় যথাযোগ্য মর্যাদায় আয়োজিত ওয়েবিনারে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি ছাড়াও সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি অনলাইনে আয়োজিত এই বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে দুপুর ২টায় দূতাবাস মিলনায়তনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও অংশগ্রহনকারীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর দূতাবাস প্রাঙ্গনে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত প্রতীকী জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছাবার্তার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব সায়মা রাজ্জাক।
ওয়েবিনারে 'মুজিববর্ষের কূটনীতি, প্রগতি ও সম্প্রীতি' শিরোনামে এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড থেকে অংশগ্রহনকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অতিথিরা। আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা ছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির পিতার অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার অঙ্গিকারের কথা বলেন। সুইডেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তী তুলে ধরতে দূতাবাসের সঙ্গে একযোগে কাজ করারও কথাও বলেন তারা।
সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেই সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রাম ও তৎপরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অনন্য নেতৃত্ব ও অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, এ বছরের বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সুগভীর তাৎপর্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে উন্নয়ন ও অগ্রগতির কয়েকটি মাইলফলক। জাতির পিতা যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলেন, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বপ্নযাত্রা গতি পেয়েছে, যার অন্যতম নিদর্শন আজকের পদ্মা সেতু। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপম নেতৃত্ব ও পরিশ্রমে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং সেই সাথে আর্থসামাজিক উন্নয়নের নানা বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রদূত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান। সেই সাথে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভাবমূর্তি সমুন্নত করার লক্ষ্যে দূতাবাসের সবার নিরলস প্রচেষ্টার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা ও বিজয়ের কবিতা আবৃত্তি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
মন্তব্য