<p>ভারত বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা স্থগিত করে দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো আগামীকাল রবিবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।</p> <p>শনিবার (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বাসসকে এই তথ্য জানান। </p> <p>তিনি বলেন, সিলেট থেকে প্রথম মালবাহী বিমান চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, যা ঢাকার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় কার্গো পরিচালনাকারী বিমানবন্দর হবে।</p> <p>গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের মাধ্যমে পরিচালিত একটি চার্টার্ড এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০ মালবাহী বিমানের রবিবার সন্ধ্যায় স্পেনের উদ্দেশে ৬০ টন তৈরি পোশাক পণ্য নিয়ে রওনা দেবে। ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।</p> <p>ভূঁইয়া জানান, প্রথম ফ্লাইটের জন্য কার্গো চেক-ইন এবং নিরাপত্তা মোতায়েনসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান। ফ্লাইটের নির্ধারিত ছাড়ার আগে বিকাল ৭টা ১০ মিনিটে বেবিচক চেয়ারম্যান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে এবং মালবাহী বিমানের সম্মানে জল কামান স্যালুট প্রদান করা হবে।</p> <p>ভূঁইয়া আরো জানান, সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজস্ব পণ্য রপ্তানির জন্য উৎসাহিত করতে তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।</p> <p>তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই কার্গো ফ্লাইট চালু হবে, যা তৃতীয় কার্গো সুবিধাপ্রাপ্ত বিমানবন্দর হবে।</p> <p>বিমান বাংলাদেশের কার্গো পরিচালক শাকিল মিরাজ নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটের জন্য আমরা ঢাকা থেকে গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছি এবং ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।</p> <p>বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেসামরিক বিমান চলাচল ও গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং চার্জ হ্রাস করে কার্গো সেবা আরও সাশ্রয়ী করতে কাজ করছে।</p> <p>ভূঁইয়া বলেন, ‌‌‘কার্গো সংক্রান্ত চার্জ সহজীকরণ এবং কমানোর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা শিগগিরই কম টারিফ ঘোষণা করব।’</p> <p>হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবলও মোতায়েন করা হয়েছে, কারণ তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।</p> <p>ভূঁইয়া বলেন, ‘বিদ্যমান অবকাঠামো শিগগিরই দুই থেকে তিনগুণ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করবে। অন্যদিকে, সিলেটের আধুনিকায়নকৃত কার্গো টার্মিনাল ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্গো পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’</p> <p>এইচএসআইএ'র বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এটি চালু হলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং আঞ্চলিক ট্রানজিট হাবে নির্ভরতা কমবে বলে কর্মকর্তারা আশাবাদী।</p> <p>তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্গো সক্ষমতা বছরে ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত হবে, যেখানে ৩৬,০০০ বর্গমিটার জায়গার একটি বিশেষ কার্গো জোন থাকবে।</p> <p>ভূঁইয়া বলেন, ‘নতুন টার্মিনালে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ও বিস্তৃত সংরক্ষণ সুবিধা স্বাধীন এবং দক্ষ কার্গো পরিচালনা নিশ্চিত করবে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’</p> <p>এ মাসের শুরুতে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের, তাদের বিমানবন্দর হয়ে ট্রানজিটের চার বছরের চুক্তি বাতিল করে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের উপর ব্যাপক চাপ পড়ে।</p> <p>কোভিড-১৯ মহামারির সময় শুরু হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে, কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করে দ্রুত এবং তুলনামূলক কম খরচে রপ্তানি সম্ভব হতো।</p> <p>বাংলাদেশ ফ্রেট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাপ্তাহিক প্রায় ৬শ’ টন বা ১৮ শতাংশ তৈরি পোশাকের রপ্তানি ভারতীয় রুটে পরিচালিত হতো।</p> <p>বর্তমানে বাংলাদেশ সাপ্তাহিক প্রায় ৩ হাজার ৪০০ টন পোশাক বিমানযোগে রপ্তানি করে, যেখানে এইচএসআইএ'র কার্গো ভিলেজ দৈনিক ৩০০ টন ধারণক্ষমতার হলেও পিক সিজনে ১২শ টন পর্যন্ত পরিচালনা করে।</p> <p>বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইট বর্তমানে এইচএসআইএ’র মোট কার্গো ভলিউমের প্রায় ১৬-১৭ শতাংশ পরিচালনা করে এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকটি প্রধান বিদেশি ক্যারিয়ারের জন্য গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সেবাও প্রদান করে।</p> <p>বর্তমানে এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের মতো বড় এয়ারলাইনগুলো কেবলমাত্র এইচএসআইএ থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে।</p>
