<p>গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ১ হাজার ৩০০ কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশের জনপ্রশাসন ইতিহাসে নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। অনুমোদিত পদের বাইরে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পদোন্নতির কারণে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে সিভিল প্রশাসন। </p> <p>জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৫০ জনকে অনুমোদিত পদের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং ৭৬৪ জন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা পদোন্নতি পাননি— এই কারণ দেখিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদের আগের তারিখ থেকে পদোন্নতি এবং এর সঙ্গে আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভারতের তীব্র সমালোচনায় শহীদ আফ্রিদি" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/04/26/1745658731-df5eb2fbf43df3e74a60a38d9f034904.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভারতের তীব্র সমালোচনায় শহীদ আফ্রিদি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2025/04/26/1509419" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বিশেষজ্ঞ ও কর্মরত অফিসাররা বলছেন, এই ধরনের পদোন্নতি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী এবং এতে প্রশাসনিক দক্ষতা ও ন্যায্যতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে।</p> <p>সাবেক সচিব ও গবেষক আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, 'এভাবে নির্বাচারে পদোন্নতি দেওয়া সিভিল সার্ভিসের মান পতনের অন্যতম কারণ। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।' তিনি যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে একটি কাঠামোগত পদোন্নতি ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দেন।</p> <p>সুপারনিউমারারি পদ হচ্ছে পদোন্নতি বা জনবল সমন্বয়ের সুবিধার্থে নিয়মিত কাঠামোর বাইরে তৈরি অস্থায়ী পদ।</p> <p>জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত পদের সংখ্যা এবং পদোপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদের মধ্যে বড় অমিল রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে ৩৮২ জন কর্মরত, যদিও অনুমোদিত পদ মাত্র ১২১টি। এর মধ্যে ১৪২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাতের সময় নির্ধারণ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/04/26/1745657476-89137e8bb5a2f85c5213072523708686.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাতের সময় নির্ধারণ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/04/26/1509417" target="_blank"> </a></div> </div> <p>যুগ্ম সচিব পর্যায়ে এই বৈপরীত্য আরো স্পষ্ট, মাত্র ২৭২টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১ হাজার ৩৫ জন কর্মকর্তা এই পদে অধিষ্ঠিত। তার মধ্যে ৪১৯ জন গত আট মাসে পদোন্নতি পেয়েছেন।</p> <p>এছাড়া ৩৫০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে এখন ১ হাজার ৪০৪ জন কর্মকর্তা উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।</p> <p>সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয়ের বাইরেও প্রকল্প পরিচালক, দপ্তরের প্রধান  বা অনুরূপ ভূমিকা পালন করতে হয়।</p> <p>এ কারণে কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে পদোন্নতি দিতে হয়,' নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন এই সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মন্ত্রণালয়গুলোতেও প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুন বেশি অফিসার কাজ করছেন। যেমন—জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মাত্র দুটি অনুমোদিত পদের বিপরীতে আট জন অতিরিক্ত সচিব কর্মরত আছেন।</p> <p>স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ক্ষেত্রেও মাত্র দুটি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১১ জন কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে রয়েছেন। এই বিভাগের প্রশাসনিক শাখায় যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ না থাকলেও, এখন সাতজন কর্মকর্তা ওই শাখায় কর্মরত আছেন।</p> <p><strong>অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা</strong></p> <p>সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে, প্রশাসন ক্যাডারই সবচেয়ে বেশি সুপারনিউমারারি পদোন্নতি পায়। পুলিশ, পররাষ্ট্র এবং ট্যাক্স ক্যাডারও কিছু পদোন্নতি পেয়ে থাকে।</p> <p>ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন যে, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি সরকারের অতিরিক্ত অনুকম্পা অন্য ক্যাডারের অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। এর ফলে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা জুলাই অভ্যুত্থানের পর সুপারনিউমারারি পদোন্নতির প্রতিবাদ করেছেন। তারপরও প্রশাসন ক্যাডারে পদোন্নতি অব্যাহত আছে।</p> <p>তারা অভিযোগ করেন যে তাদের নিয়মিত পদোন্নতির দাবি উপেক্ষা করা হলেও, প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা ধাপে ধাপে পদোন্নতি পাচ্ছেন।</p> <p>তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন, অনেকটা রাজনৈতিক সরকারের মতোই, একটি ক্যাডারকে অন্য ক্যাডারের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।'</p> <p>'৬ হাজার প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তার সুবিধার্থে, সরকার বাকি ২৫ ক্যাডারের প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তাকে বৈষম্যের শিকার করছে, তাদের ন্যায্য পদোন্নতি উপেক্ষা করছে,' বলেন সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের সমন্বয়কারী ফারুক।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে (ভিডিওসহ)" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/04/26/1745657179-6f141dc79da67f258ac5b4f9a6bce6b3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে (ভিডিওসহ)</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/business/2025/04/26/1509415" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে, জানুয়ারিতে শিক্ষা ক্যাডারের ৭৬৫ জন কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারি ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৭ হাজারের বেশি ডাক্তারকে পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।</p> <p>কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর, অন্যান্য ক্যাডারের প্রতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, 'তারা আর আমাদের পদোন্নতির বিরোধিতা করেন না। এখন তারা বলে, 'আপনাদের পদোন্নতি নেন, কিন্তু আমাদের বিরোধীতা করবেন না।'</p> <p>তথ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিনের এই প্রথাকে 'করদাতাদের অর্থ অপচয়ের স্পষ্ট উদাহরণ' বলে অভিহিত করে বলেন, 'আমি জানি না, বিশ্বের আর কোনো দেশে এমনভাবে প্রশাসন চলে কি না।'</p>