<p style="text-align:justify">‘অবৈধ’ ও ‘আইনি কারণে অবৈধ’ ঘোষিত হওয়া অস্ত্রের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের কবজায় থাকা বেআইনি অস্ত্র প্রশাসনের ওপর বাড়তি চাপ ফেলছে। আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্র। এমনকি যাঁরা বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়েছিলেন তাঁদেরও সহস্রাধিক অস্ত্র এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="হাজারের বেশি বৈধ অস্ত্র যেভাবে অবৈধ" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/28/1727468667-edfb1b183f3b1fdd574acf8ff26b1b86.jpg" style="float:left" width="400" />ফলে দেশে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানো হয় কি না তা নিয়ে প্রশাসনকে ভাবতে হচ্ছে। ভাবার আরেকটি কারণ হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানকালে কারাগার থেকে কৌশলে পালিয়েছে একদল জঙ্গি। জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত ৯ জঙ্গিসহ ৭০ জঙ্গি পলাতক রয়েছে। দেশে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান।</p> <p style="text-align:justify">এই অভিযানে গত বুধবার পর্যন্ত ২১৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হন ৯২ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র, অবৈধ হয়ে যাওয়া বৈধ অস্ত্র এবং আগের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। উদ্ধারের পর এগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে ৫১ হাজার ৭৫৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮৪৫টি অস্ত্রের লাইসেন্স। আওয়ামী লীগ আমলে দেওয়া লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলার থানাগুলোতে ১৫ বছরে নেওয়া ১০ হাজার ৮৪৫টি অস্ত্রের মধ্যে ৯ হাজার ১৯১টি জমা পড়ে। এক হাজার ৬৫৪টি অস্ত্র জমা পড়েনি। এই অস্ত্রগুলোই এখন অবৈধ হিসেবে গণ্য।</p> <p style="text-align:justify">এআইজি ইনামুল হক বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনেই উল্লেখ করা হয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈধ অস্ত্র জমা দেবে না তাদের অস্ত্র অবৈধ হয়ে যাবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যারা জমা দেয়নি তাদের বৈধ অস্ত্র এখন অবৈধ।’</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, যাঁরা জমা দেননি তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে তাঁরা কেন অস্ত্র জমা দেননি তা ভাবিয়ে তুলছে গোয়েন্দাদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে গণ-অভ্যুত্থানের পর তাঁদের অনেকেই হয়তো পলাতক থাকার কারণে অস্ত্র জমা দিতে পারেননি। এ ছাড়া অনেকের নামে হত্যা মামলা রয়েছে, তাঁরাও হয়তো গ্রেপ্তার এড়াতে থানায় অস্ত্র জমা দিতে যাননি। তবে যাঁরা অস্ত্র জমা দেননি তাঁদের ক্ষতিই হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">পুলিশের তথ্য মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত ৫ ও ৬ আগস্ট পিস্তল, রিভলভার, শটগানসহ ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট হয়। এর বেশির ভাগই পুলিশের। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্রও রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পুলিশ জানায়, গণ-অভ্যুত্থানকালে অস্ত্রের পাশাপাশি গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেলও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়, যার মধ্যে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৮২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ৩১ হাজার ৪৪টি টিয়ার শেলের মধ্যে ৯ হাজারের বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। লুট হওয়া চার হাজার ৬৯২টি সাউন্ড গ্রেনেডের মধ্যে অর্ধেকের মতো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">পুলিশ জানায়, যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের লেকপারে ময়লার স্তূপ থেকে জার্মানির তৈরি একটি পিস্তল, ২৯ রাউন্ড গুলি এবং ৩৮ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গুলশান থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, পিস্তলটি পুরনো। তবে এই পিস্তল ও গুলি কারা সেখানে ফেলে গেছে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।</p>