<p style="text-align:justify">শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে জাতীয় সংসদ ভবনের অভ্যন্তর এখনো লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনের মধ্যে কোনো দপ্তরেই বসার পরিবেশ নেই। ফলে সংসদ সচিবালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। কখন চালু হবে, তা কেউ বলতে পারছে না।</p> <p style="text-align:justify">কারণ জাতীয় সংসদ এই মুহূর্তে অভিভাবকহীন অবস্থায় আছে। সংসদ না থাকায় চিফ হুইপ ও হুইপরা নেই। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকার জেলখানায়। সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে প্রত্যাহার করায় পদটি শূন্য আছে। এ ছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে হাজারো ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপদের কক্ষসহ ৯ তলা ভবনের প্রায় সব কক্ষ তছনছ করে।</p> <p style="text-align:justify">অনেকে সংসদের অধিবেশনকক্ষে গিয়ে সংসদ নেতা, স্পিকার, সংসদ সদস্যদের চেয়ারে বসে উল্লাস প্রকাশ করে। সংসদ এলাকায় অবস্থিত মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কার্যালয়, সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কর্মকর্তাদের অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর-তছনছ করা হয়। তাঁদের বাসভবনও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় জনতা কম্পিউটার, আসবাবসহ সব জিনিস লুট করে নিয়ে যায়। এমনকি রুমের বালতি, বদনা পর্যন্ত নিয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">টেলিফোন লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ফলে পুরো সংসদ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, যে কারণে সংসদ সচিবালয়ে অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাঙচুরের পর সচিবালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ঘটনার দুই দিন পর সংসদ সচিব কে এম আব্দুস সালামে সংসদ ভবনের বাইরে মন্ত্রী হোস্টেলে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর কোনো কোনো কর্মকর্তাকে মাঝেমধ্যে যাওয়া-আসা করতে দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">এত দিন অফিশিয়াল কার্যক্রম পুরোটাই বন্ধ ছিল। তবে গত ১৮ আগস্ট থেকে অফিস করার জন্য সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেকে এর পর থেকে নিজ নিজ দপ্তরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন। তবে এখনো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। অনেকেই হাজিরা দিয়ে দিন পার করছেন। কবে চালু হবে, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংসদ সচিবালয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। অফিসের সরঞ্জামগুলো নতুন করে সাজাতে হবে। সে ক্ষেত্রে চেয়ার-টেবিল-এসিসহ লুট হওয়া মালপত্র কিছু পাওয়া গেলেও তার বেশির ভাগই ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক মালপত্র কেনাকাটার প্রয়োজন হবে।</p> <p style="text-align:justify">এ ক্ষেত্রে বরাদ্দও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো কেউ নেই। কারণ সংসদ বহাল না থাকায় চিফ হুইপ ও হুইপদের পদ শূন্য। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু দায়িত্বে থাকলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ৫ আগস্টের পর অফিস করেননি। সর্বশেষ তিনি গত ২ সেপ্টেম্বর স্পিকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর সংসদ সচিব কে এম আব্দুস সালামকে গত ১৪ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে কর্মকর্তাদের অনেকেই আতঙ্কে অফিস এলাকায় আসছেন না। কারণ সংসদ সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সংসদ ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের নির্যাতিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা জাতীয় সংসদ থেকে নিয়মবহির্ভূত ও অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধনও করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">তাঁদের অভিযোগ, অবৈধভাবে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অনেককে তাঁরা চাকরি দিয়েছেন। তাঁরা এখন উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে চলে গেছেন। তাঁদের চাকরির কোনো ভিত্তি নেই। অথচ নিময়তান্ত্রিকভাবে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংসদ সচিবালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছেন।</p>