<p style="text-align:justify">আকস্মিক বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের ১০ জেলার ৬৫টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৪০টি পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫২ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানানো হয়।</p> <p style="text-align:justify">বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে স্থানীয় সূত্রে কুমিল্লা ও কক্সবাজারে আরো পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ৬৫ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব এলাকায় তিন কোটি ৩২ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ১৯ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ হাজার বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পানিবন্দি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুই হাজার ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৯৪ জন আশ্রয় নিয়েছে। সাত হাজার ৭৫৫টি গবাদি পশুকেও আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১০ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় ৪৯২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বন্যাকবলিত বিভিন্ন জেলার আট লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুত্হীন অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।</p> <p style="text-align:justify">বিতরণকারী সংস্থা দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুরের বেশ কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিক্যাল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। যেকোনো তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—</strong></p> <p style="text-align:justify"><strong>ফেনী : </strong>মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বন্যায় ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় তিন লাখ লোক। বন্যার পানিতে ডুবে জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৭৮টি। মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ৭৬টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন ২০ হাজার জন।</p> <p style="text-align:justify">জেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০টি উদ্ধারকারী যান জেলায় পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এ ছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে জেলায়।</p> <p style="text-align:justify">বন্যাকবলিতরা বলছে, ফেনীতে এমন ভয়াবহ বন্যা আগে দেখেনি কেউ। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন।</p> <p style="text-align:justify">বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ২৪টি বোট নিয়োজিত। তাদের পাশাপাশি বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরাও উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবং পানির প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">সকালে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল ফেনীর মুহুরী নদীর পানি। ফুলগাজীর সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৫০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যাকবলিত। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় বানের পানি মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালও ছুঁয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বিকেলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হান মেহেবুব বলেন, তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, বেশির ভাগ এলাকায় পানির নিচে। এ ছাড়া ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঁইয়া উপজেলার অনেক এলাকাও বন্যাকবলিত।</p> <p style="text-align:justify">তিন উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, স্থানীয় লোকজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজারের মতো মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই।</p> <p style="text-align:justify">পরশুরামের মির্জানগর এলাকা থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে গতকাল সকালে ফেনী শহরের স্টেশন রোডের একটি হোটেলে এসে উঠেছেন ইসমাইল হোসেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, বুধবার রাতভর আতঙ্ক, মানুষের আর্তি আর বন্যার বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি।</p> <p style="text-align:justify">ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে লোকালয় রক্ষা করতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুহুরী রেগুলেটরের (জলকপাট) ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ফেনীর জেলা প্রশাসক সেলিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, বন্যাকবলিতদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও মাঠে আছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চট্টগ্রাম : </strong>চট্টগ্রামের ৯ উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৯১৬। ক্ষতিগ্রস্ত দুই লাখ চার হাজার ৮৫০ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৮৪টি। ১১১টি মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রামে কখনো ভারি আবার কখনো অতিভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফেনীর পাশের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।</p> <p style="text-align:justify">ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়ি হেয়াকো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হালদা ও ধুরুং খালের অন্তত ১৬টি পয়েন্টে ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। হালদা নদীর গড়দুয়ারা এলাকায় স্লুইস গেট ভেঙে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">পাহাড়ধস ঝুঁকি, জলাবদ্ধতা ও বন্যাঝুঁকিজনিত দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও সদর হাসপাতাল মিলে মোট ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।</p> <p style="text-align:justify">কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রাউজানের বেশির ভাগ এলাকা ডুবে গেছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নোয়াখালী :</strong> জেলার আট উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার এক লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৯ লাখ ৮০ হাজার জন।  জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৮৮টি, আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৬ হাজার ১১৫ জন। আশ্রিত গবাদি পশু চার হাজার ৭১৪টি।  জেলায় মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ৮৮টি।  </p> <p style="text-align:justify">নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘৩৮৮ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আমরা শুকনা খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>কুমিল্লা :</strong> কুমিল্লা জেলার ১২ উপজেলার ১২৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত জনসংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫৮৭টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন চার হাজার ৩০২ জন।</p> <p style="text-align:justify">উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গোমতী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের তথ্য মতে, গত বুধবার ভিন্ন সময়ে ওই তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। একজন বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে, একজনের মাথায় গাছ পড়ে এবং একজন পানিতে তলিয়ে মারা গেছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কক্সবাজার :</strong> জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। রামুর গর্জনিয়ায় দুই যুবক মারা গেছেন। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গতকাল সকালে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্বজুমছড়ি এলাকায় দুজন ভেসে যায়। পরে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন পূর্বজুমছড়ি গ্রামের আমজাদ হোসেন (২২) ও রবিউল আলম (৩৫)।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সিলেট :</strong> সিলেট জেলার তিন উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫ হাজার মানুষ। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬৫১টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১৮ জন।</p> <p style="text-align:justify">খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রামগড় : খাগড়াছড়ি জেলার আট উপজেলায় পানিবন্দি পরিবার ৩৩ হাজার ৫২২টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৭১৮ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৯৯টি। কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৯ হাজার ১৩ জন। আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা এক হাজার ৮৩৪। মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ১৮টি।</p> <p style="text-align:justify">জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ির ১৮টি এবং দীঘিনালার ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছে। সবার জন্য শুকনা খাবার ও খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>হবিগঞ্জ :</strong> হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেল সেতু ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী ছয়টি ট্রেনই বন্ধ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ : মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৭১১টি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার ৪২৫ জন।</p> <p style="text-align:justify">কমলগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত। শতাধিক পুকুরে মাছ ভেসে গেছে। ছয় হাজার হেক্টর জমির আমন ও দুই হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ডুবেছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রাঙামাটি :</strong> রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্থানে ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে এখনো কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সকালে ঘাগড়ার কলাবাগানসহ বেশ কিছু এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন।</p> <p style="text-align:justify">ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দুই উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা এক হাজার ১৯০। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা চার হাজার ৯৯১ জন। মৃত্যু হয়েছে একজনের। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১১টি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>লক্ষ্মীপুর :</strong> লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচ উপজেলার ৫৮ ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবার এক লাখ ২০ হাজার ৯০০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ছয় লাখ চার হাজার ৫০০ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮৫টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে চার হাজার ৯০৫ জন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মুন্সীগঞ্জ :</strong> মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে গত দুই দিনে দুই ফুটের বেশি পানি বেড়েছে। গতকালও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গতকাল এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পানি দ্রুত বাড়ছে। দুই দিন আগে আমাদের যে এলাকা শুকনা ছিল, এখন সেখানে হাঁটু পানি।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>চাঁদপুর :</strong> মাত্র তিন দিনের ভারি বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। এতে ভেসে গেছে শত শত খামারের মাছ, ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রকল্পের ভেতরের ছয়টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।</p> <p style="text-align:justify"><strong>জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) :</strong> সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে গ্রামীণ সড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ গ্রামের বাসিন্দারা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে আজ</strong></p> <p style="text-align:justify">গতকাল দুপুরের পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বৃষ্টি কমায় আজ শুক্রবার দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। </p> <p style="text-align:justify">পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে। পাউবো গতকাল বিকেল ৩টায় জানিয়েছে, ১৮ ঘণ্টা পরবর্তী সময়ে (আজ সকাল ৯টার পর) নদীগুলোর পানি কমতে পারে এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।</p>