<p style="text-align:justify">নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। এই সরকারে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৬ জন উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">শপথ গ্রহণের পরদিন আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টোদের দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ৪৩টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। </p> <p style="text-align:justify">এরই মধ্যে সরকারকে সমর্থন দিতে শুরু করেছেন বিশ্বনেতারা। ইতোমধ্যে একে একে সমর্থন জানিয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাতিসংঘ। </p> <p style="text-align:justify"><strong>ভারত</strong> : সবার আগে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার রাতে নরেন্দ্র মোদি এক্সে লিখেছেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমার শুভ কামনা। আমরা হিন্দু ও অন্য সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আশা করি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের জনগণের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>যুক্তরাষ্ট্র</strong> : অন্তর্বর্তীকালীন নতুন এই সরকারের শপথগ্রহণের পরই নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাদের যোগাযোগ হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে নিজেদের চাওয়ার কথাও সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।’</p> <p style="text-align:justify">তাহলে আপনি কি স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন? জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমাদের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে স্বাগত জানাই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’</p> <p style="text-align:justify">ড. ইউনূস বা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঠিক কী ধরনের যোগাযোগ হয়েছে জানতে চান ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ প্রকৃতি কেমন ছিল? আমি স্পেসিফিকেশন চাইছি না, কিন্তু এটা কি বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নাকি মার্কিন স্বার্থের বিষয়ে কথা হয়েছে?’ জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কূটনৈতিক কথোপকথনের কথা বিশদভাবে বলতে যাচ্ছি না, তবে স্পষ্টতই একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করবে এবং আমরা এটিই দেখতে চাই।’ </p> <p style="text-align:justify"><strong>ইউরোপীয় ইউনিয়ন</strong> : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শুক্রবার (৯ আগস্ট) ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে এ স্বাগত জানান। বিবৃতিতে জোসেপ বোরেল বলেন, ইইউ বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল এ কাজে তাদের সহায়তা করা হবে। এ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত, যে মৃত্যু ও সহিংসতা ঘটেছে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক পথ এবং বাংলাদেশের জনগণ ও তার যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।  </p> <p style="text-align:justify"><strong>চীন</strong> : বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে তারা। আজ শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাদের মুখপাত্র এ কথা জানান।</p> <p style="text-align:justify">ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ৮ আগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়েছে। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার নিয়ে চীনের মন্তব্য কী? জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি চীন অবহিত এবং তারা এই সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনে অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>জাতিসংঘ : </strong>বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণ প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে জাতিসংঘ। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক এ কথা বলেছেন।</p> <p>ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কি না বা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কি না। জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র বলেন, ‘তিনি (মহাসচিব) তাঁর (ড. ইউনূস) সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়ক আজকের (বৃহস্পতিবার) শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যেন শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি ও কান্ট্রি টিম সক্রিয় রয়েছে।’<br />  </p> <p style="text-align:justify"><strong>মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়</strong> : এদিকে ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজ থেকে এই শুভেচ্ছা বার্তা পোস্ট করেন তিনি। নতুন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।</p> <p style="text-align:justify">শুভেচ্ছা বার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশে যারা কার্যভার গ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা রইলো। আশা করি, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে।’</p> <p style="text-align:justify">মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নতি, শান্তি, প্রগতি ও সর্বস্তরের মানুষের আরো ভালো হোক- এই কামনা করি। ওখানকার ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক, মহিলা থেকে শুরু করে সকলের প্রতি আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।’</p>