<p>সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ঘিরে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাজীবী, শিক্ষক, শিল্পী ও চিকিৎসকদের একাংশ যোগ দেওয়ায় আন্দোলনের পরিধি বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণমিছিলসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর উত্তরাসহ দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য ও হবিগঞ্জে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়।</p> <p><img alt="সুমন" height="245" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/2024/August-2024/03-08-2024/Sumon-01_kalerkantho_pic.jpg" style="float:left" width="200" />এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল রাতে এই প্ল্যাটফরমের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ এক বার্তায় সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিল ও আগামীকাল রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।</p> <p>গতকাল রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে সকাল ১০টা থেকে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেয়।</p> <p>জুমার নামাজের পর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৪টার পর মিছিল নিয়ে গিয়ে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১১টার পর রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের আফতাবনগর থেকে মিছিল বের হয়। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে রামপুরা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যারা নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচার এবং আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেয় তারা।</p> <p>বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা মিরপুর-২, অরিজিনাল-১০ ও কাজীপাড়ায় মিছিল করে। ইসিবি চত্বরেও জড়ো হয় কিছু আন্দোলনকারী।</p> <p>তবে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। বিকেল সোয়া ৪টার পর আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।</p> <p><strong>‘দ্রোহযাত্রা’ থেকে চার দফা দাবি</strong></p> <p>শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা’য় অংশ নিতে বিকেল ৩টার আগে থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভিড় জমতে থাকে। এরপর কয়েক হাজার মানুষের মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।</p> <p>দ্রোহযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চার দফা দাবি তুলে ধরেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, ‘গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে, গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’ এসব দাবি পূরণ না হলে রবিবার আবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সবাই একটা মুক্ত বাংলাদেশের জন্য লড়াই করছে। সরকারের কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। অনেক বিচার জমে আছে। এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।’</p> <p>এই কর্মসূচিতে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।</p> <p><strong>বায়তুল মোকাররমে জুমার পর ঝটিকা মিছিল</strong></p> <p>কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা ছাত্র ঐক্য। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে ঝটিকা মিছিল দ্রুত শাহবাগের দিকে যায়। এ সময় মিছিলকারীরা কোটা আন্দোলনে নিহতদের হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।</p> <p><strong>সহনশীলতার পাশাপাশি সতর্ক পুলিশ</strong></p> <p>গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য হামলা, নাশকতা ও অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মাঠ পর্যায়ে সতর্ক ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্তত ৩০ হাজার সদস্য। সাদা পোশাকে তৎপর ছিলেন গোয়েন্দারাও। তবে যেসব এলাকায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেখানে সহযোগিতা করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।</p> <p>রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের একটি এপিসির (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) সামনের কাচ ও বডিতে লাল রং দিয়ে ‘ভুয়া’ লিখে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশ এখানেও সহনশীল ছিল।</p> <p>ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে।’</p> <p>গতকাল উত্তরার সংঘর্ষে একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার সুমন কর জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বা চিকিৎসা নিয়েছে—এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।</p> <p><strong>ধানমণ্ডিতে শিল্পীদের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ</strong></p> <p>গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ করেছেন শিল্পীরা। সমাবেশের শুরুতে ছিল দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন। এরপর পরিবেশন করা হয় ‘আস্থা-অনাস্থা’ শীর্ষক একটি পারফরম্যান্স আর্ট। এই পরিবেশনায় সড়কের ওপর মিছিলের আবহ তৈরি করেন শিল্পীরা। এরপর গুলিবর্ষণ ও রক্তে রঞ্জিত হওয়ার দৃশ্য তৈরি করা হয়। এ সময় মাইকে আন্দোলনে শহীদের নাম ধরে ডাক দিলে একজন করে শিল্পী ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দেন। সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপক গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আর ছিল প্রতিবাদী স্লোগান।</p> <p>সমাবেশে শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হচ্ছে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া, কারফিউ তুলে নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ।</p> <p>সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন চিত্রশিল্পী মোস্তফা জামান, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার, উন্নয়নকর্মী শারমিন মুর্শিদ, লেখক রেহেনুমা আহমেদ, কবি সাখাওয়াত টিপু ও শিল্পী সুমনা সোমা। আয়োজকদের পক্ষে সমাবেশের বিবৃতিপত্র পাঠ করেন সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও এই সমাবেশে অংশ নেন।</p> <p><strong>উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ</strong></p> <p>কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে। তারা বক্তব্যের পাশাপাশি গান, কবিতা ও বিভিন্ন স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানায়।</p> <p>উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলন এখন সাধারণ মানুষের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে বাংলার মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলনে আমরা সন্তান ও বন্ধুদের হারিয়েছি। সরকার এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।’</p> <p><strong>কবি-লেখকদের প্রতিবাদসভা</strong></p> <p>গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করেন কবি-লেখকরা। এতে বক্তারা বলেন, দেশের পরিস্থিতি দেখে আমরা হতবাক। এই মুহূর্তে রাষ্ট্র সংস্কারের বিকল্প নেই। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জি, তরুণ কবি ও লেখক সাদাত হোসাইন প্রমুখ।</p> <p><strong>চিকিৎসকদের সমাবেশ</strong></p> <p>গতকাল সকাল ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ করেন শিক্ষক, চিকিৎসক ও মেডিক্যাল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে চলমান আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বেরিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।</p> <p>সমাবেশে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস শাকুর খান বলেন, সমাজ আজকে ক্ষতবিক্ষত। নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলিতে সাধারণ শিক্ষার্থী আর জনতাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হতে হয়। এ কারণে পুরো জাতি ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে দিন পার করছে।</p> <p><strong>হবিগঞ্জে নিহত ১, আহত শতাধিক</strong></p> <p>হবিগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মোস্তফা মিয়া (২৪) নামের একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। তিনি সিলেটের টুকেরবাজারের বাসিন্দা এবং হবিগঞ্জ পিডিবি অফিসের কর্মচারী। জুতা কিনতে গিয়ে তিনি আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়। আন্দোলনকারীরা আগুন দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস পুড়িয়ে দেয়। তারা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপির বাসভবনে হামলার চেষ্টা চালায় এবং ইটপাটকেল ছোড়ে। সংসদ সদস্যের বাসভবনের পাশে একটি গ্যারেজে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে অন্তত তিনটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। আন্দোলনকারীরা জেলা শিক্ষা অফিস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বানিয়াচং সার্কেল অফিস ও তাঁর বাসভবনেও ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।</p> <p>হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান জানান, বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেলা শহরের প্রধান সড়কে এসব ঘটনা ঘটে। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সংঘর্ষে যোগ দেন।</p> <p>সন্ধ্যা ৭টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ সময় শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।</p> <p><strong>খুলনায় সংঘর্ষ, এক পুলিশ সদস্য নিহত</strong></p> <p>ছাত্র-জনতার গণমিছিলকে কেন্দ্র করে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় সুমন কুমার ঘরামি নামের একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল রাতে খুলনা মহানগর পুলিশ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। খুলনা মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, সংঘর্ষে আরো ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ২টায় খুলনা নিউ মার্কেট এলাকা থেকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা গণমিছিল শুরু করে। মিছিলটি বিকেল ৩টার দিকে গল্লামারী মোড়ে পৌঁছায়। তখন বিপরীত দিকে থাকা জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে। বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আরো এক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর গল্লামারী এলাকায় একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়।</p> <p><strong>কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে সিলেট রণক্ষেত্র</strong></p> <p>গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। তাদের মিছিল আখালিয়া এলাকায় এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।</p> <p>এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েক ভাগ হয়ে নগরের মদিনা মার্কেট-বাগবাড়ী রোড, লতিফ মঞ্জিল ও মদিনা মার্কেট কালীবাড়ি রোডে অবস্থান নেয়। আরেক অংশ মাউন্ট এডোরার গলিতে অবস্থান নেয়। এসব অবস্থান থেকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।</p> <p>সংঘর্ষে আন্দোলনকারীরা ছাড়াও শিশু, সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের মধ্যে ‘কালবেলা’ পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি মিঠু দাশ আহত হন।</p> <p>[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা]</p> <p><img alt="গণমিছিল" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/2024/August-2024/03-08-2024/mass march-01_kalerkantho_pic.jpg" width="1000" /></p> <p>খুলনায় পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়লে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ</p>