<p style="text-align:justify">জন্মের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া এক ফোঁটা পানিও দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকরা এমন পরামর্শ দিলেও তা মানছেন না ৪৫ শতাংশ মা। তাঁরা ঝুঁকছেন ফর্মুলা দুধের (কৌটাজাত গুঁড়া দুধ) দিকে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ বিডিএইচএসের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ সালে ৬৫ শতাংশ শিশু মায়ের বুকের দুধ পেলেও বর্তমানে এ হার কমে হয়েছে ৫৫ শতাংশ।</p> <p style="text-align:justify">এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ ও কর্মজীবী নারীর হার বেড়ে যাওয়া এবং কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশসহ বুকের দুধ পান করানোর পর্যাপ্ত কর্নার না থাকা।</p> <p style="text-align:justify">এ অবস্থায় দেশব্যাপী আজ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশনের (ডাব্লিউএবিএ) দেওয়া এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সকল বাধা দূর করি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি’। দিবসটি উপলক্ষে গর্ভবতী মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাতৃদুগ্ধ দান, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য এবং পুষ্টিবিষয়ক অবহিতকরণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং) শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা কমায় এবং ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শিশুমৃত্যু কমায়। দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়ার মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বাড়ে। এ ছাড়া অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের পরিচালক খুরশীদ জাহান বলেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে শুরু করে অনেক কর্মস্থলে বা বাস, রেলস্টেশনে  ব্রেস্টফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। কিন্তু এ নিয়ে মায়েরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। তাই সব ধরনের কর্মস্থলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং মাতৃদুগ্ধদানের স্থান থাকা জরুরি।</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় পুষ্টিসেবা প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. সুপ্তা চৌধুরী বলেন, একটা শিশুর যতটুকু পুষ্টি দরকার, তার সবটুকুই মায়ের দুধে বিদ্যমান। আমরা বলি, প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া যাবে না। যখন একটা শিশু মায়ের গর্ভে থাকে তখন থেকেই তার মস্তিষ্কের বিকাশের কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মের পর শিশুর মস্তিষ্কে আর নতুন করে কোনো কোষ (সেল) তৈরি হয় না। একটা শিশু ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) মস্তিষ্কের কোষ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর এই কোষগুলোর মাত্র ২৫ শতাংশের যোগাযোগ বা সংযোগ থাকে নিউরনে (স্নায়ুকোষ)। বাকিগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশের সংযোগ স্থাপনের কাজ জন্মের তিন বছরের মধ্যে হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খেয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় ৩৫ শতাংশের বেশি মেধাবী হয়। তাই এখানে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক শাহ গোলাম নবী বলেন, শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। জন্মের পর শিশুর বেঁচে থাকা এবং স্বাভাবিকভাবে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের বুকের দুধের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে গড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার ও  ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় তা নেই। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।</p>