<p style="text-align:justify">সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থী মারা যায় তাদের ৫৩ শতাংশই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বাকি পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে, এমন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ৪৩ শতাংশ। চলতি বছরের গত ছয় মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬১১ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আর ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার আটজনের মৃত্যু হয়। </p> <p style="text-align:justify">সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের মাত্রা খুবই উদ্বেগজনক। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। যা মোট নিহতের ১৬.২৯ শতাংশ। একই সময়ে মোট নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন।’ </p> <p style="text-align:justify">সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে দুই হাজার ৬৪১ জন, যা মোট নিহত শিক্ষার্থীর ৪৭ শতাংশ। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭৮ জন, যা মোট নিহত শিক্ষার্থীর ৫৩ শতাংশ। </p> <p style="text-align:justify">দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পথচারী হিসেবে যানবাহনের চাপা/ধাক্কায় নিহত হয়েছে এক হাজার ৫৩৪ জন (২৭.৩০%) শিক্ষার্থী। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২১ জন (১২.৮৩%)। মোটরসাইকেরলের চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে দুই হাজার ৭৮৩ জন (৪৯.৫২%)। বাইসাইকেল আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৯৭ জন (৮.৮৪%) এবং অটোরিকশার চাকায় ওড়না/পোশাক পেঁচিয়ে নিহত হয়েছে ৮৪ জন (১.৪৯%)।</p> <p style="text-align:justify">সড়কভিত্তিক নিহতের চিত্রে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে এক হাজার ৩৩৯ জন (২৩.৮২%), শহরের সড়কে নিহত হয়েছে এক হাজার ৪৮৬ জন (২৬.৪৪%), আঞ্চলিক সড়কে ১৬৫১ জন (২৯.৩৮%) এবং মহাসড়কে এক হাজার ১৪৩ জন (২০.৩০%) নিহত হয়েছে। পথচারী হয়ে গ্রামীণ সড়কে ৭০৪ জন (৪৫.৮৯%), শহরের সড়কে ৪৭৯ জন (৩১.২২%), আঞ্চলিক সড়কে ২১৩ জন (১৩.৮৮%) এবং জাতীয় মহাসড়কে ১৩৮ জন (৯%) নিহত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সড়কে শিক্ষার্থী নিহতের কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ত্রুটিপূর্ণ সড়ক এবং অনিরাপদ যানবাহন, নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা এবং অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি উল্লেখযোগ্য।</p> <p style="text-align:justify">দুর্ঘটনা কমাতে সাতটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বছরে একবার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা; সরকারি উদ্যোগে শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া; ক্লাস পরীক্ষায় সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশ্ন রাখা; অনিরাপদ যানবাহন বন্ধ করা এবং কোনোভাবেই যেন অপ্রাপ্ত বয়স্করা মোটরসাইকেল চালাতে না পারে সে জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।</p>