<article> <p style="text-align: justify;">দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির ফলে কোনো কোনো অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচ জেলা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত এসব অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। তবে কাল বা পরশু থেকে বৃষ্টিপাত কমে আবার এসব অঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি সামগ্রিকভাবে বাড়ছে, যা আজ সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। তবে মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে আজ সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ফলে এ সময় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বেড়ে কিছু পয়েন্টে স্বল্প সময়ের জন্য বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপত্সীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিলেট বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বুধবার সকাল পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে। ফলে এ সময় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বেড়ে কোথাও কোথাও স্বল্প মেয়াদে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। এটি আবার বুধবার রাতের মধ্যেই বিপত্সীমার নিচে নেমে যেতে পারে। তবে এরপর বৃষ্টিপাত কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকায় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।’</p> <p style="text-align: justify;"><b>৭ নদীর পানি ১১ পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপরে</b></p> <p style="text-align: justify;">পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ছয়টি। এগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, শেরপুর ও ফেনী।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এসব জেলায় সাতটি নদ-নদীর পানি ১১টি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।</p> <p style="text-align: justify;">সুরমা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে এবং কুশিয়ারার পানি চারটি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া মনু, খোয়াই ও সোমেশ্বরীর পানি একটি করে পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপরে ছিল। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী নদীর পানিও ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গতকাল সন্ধ্যায়।</p> <p style="text-align: justify;">সিলেটে টানা দুই দিন ভারি বর্ষণের পর গতকাল বৃষ্টিপাত কম ছিল। পাহাড়ি ঢলের গতিও কমে এসেছে। তবে বৃষ্টি ও ঢল কমায় জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কানাইঘাটে অবনতি হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর, ভার্তখলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও গতকাল বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক এলাকা থেকেই পানি নেমে গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার আজমপুর খেয়াঘাটে সুরমা নদীতে খেয়া নৌকা ডুবে মা-মেয়েসহ তিনজন নিখোঁজ হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল বন্ধ থাকায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">দোয়ারাবাজার ইউএনও মেহের নিগার জানান, আজমপুর গুচ্ছগ্রামের নূর আলীর স্ত্রী গুলু বিবি, আইনুদ্দিনের স্ত্রী জোছনা বেগম এবং মেয়ে ময়না বেগম দোয়ারাবাজার যাচ্ছিল। তারা আজমপুর খেয়াঘাটে খেয়া নৌকায় সুরমা নদী পাড়ি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ঢলের পানিতে নৌকাটি ডুবে গেলে তারা নিখোঁজ হয়।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সোমবার সারা রাত ভারি বর্ষণ হয়েছে। এই বছরের এক দিনের রেকর্ড ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সুনামগঞ্জে। একই দিন তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় পয়েন্টে ২১১ মিলিমিটার এবং ছাতকে ২২৯ মিলিমিটার ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। গতকাল ভোর থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী ও ভোগাই এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি বেড়ে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এসব নদীর তীর রক্ষা বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে দুই উপজেলার প্রায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">গতকাল ভোর থেকে মহারশি নদীর বেড়িবাঁধ উপচে ঝিনাইগাতী বাজার তলিয়ে গেছে। বাজারের দোকানপাট, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন অফিসের ভেতরে এবং অনেক বাড়িতে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। নিচু এলাকার বিভিন্ন সবজিক্ষেত ও বীজতলা ডুবে গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে নালিতাবাড়ী শহরের শিমুলতলা এলাকায় ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে শহরে পানি ঢোকায় বিপাকে পড়েছে মানুষ।</p> <p style="text-align: justify;">কয়েক দিনের টানা বর্ষণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত দুই হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচালং নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সদর, বারবিন্দুঘাট, লাইল্যাঘোনা, মাস্টারপাড়া, উলুছড়ি, এফ ব্লক, মুসলিম ব্লক, রূপকারি, পুরাতন মারিশ্যা, বাঘাইহাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">বাঘাইহাটে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পর্যটন উপত্যকা সাজেক।  সেখানে ভ্রমণে যাওয়া কয়েক শ পর্যটক আটকে পড়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে বাঘাইহাটে পানি ওঠায় সাজেকে অবস্থানরত সব পর্যটক আটকা আছে। তবে তারা সুস্থ আছে।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে কয়েক দিন টানা বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্র্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট।</p> <p style="text-align: justify;">চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বেড়েছে। পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাত হলেও গতকাল অতিভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিপাতে গণপরিবহনসংকটকে পুঁজি করে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার প্রভাবে চট্টগ্রামে আরো দু-তিন দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানান।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে আগের রাত থেকে বৃষ্টি কম হলেও গতকাল সকাল থেকে বেড়ে গেছে। এ সময় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের ছয়-সাতটি পয়েন্টে, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, কার্পাসগোলা, কাতালগঞ্জ, ওয়াসা, জিইসি মোড়, প্রবর্তক, বাকলিয়া, চকবাজার, যোলশহর, বিবিরহাট, আতুয়ার ডিপো, আমানবাজার, বালুছড়াসহ বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় পানি ওঠে। তবে কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত আবার কখনো ভারি বৃষ্টিপাত হলেও স্থায়িত্ব কম থাকায় পানি নেমে যায়।</p> <p style="text-align: justify;">সাম্প্রতিক বন্যায় মৌলভীবাজারের হাওর এলাকায় মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও গত দু-তিন দিন ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় আবার যেই সেই। এদিকে নদ-নদীর পানিও বেড়েছে। জেলার জুড়ী, বড়লেখা, কুলাউড়া, রাজনগর, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল, হাওর তীরবর্তী বন্যাকবলিত মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভাটি শাহপুর গ্রামের লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।</p> <p style="text-align: justify;">টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে নেত্রকোনার প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকে জেলার প্রধান নদী উপদাখালি, কংশ, সোমেশ্বরী, ধনুসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলার উপদাখালি নদীর পানি বিপত্সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। এই পয়েন্টে বিপত্সীমা ৬.৫৫ মিটার। এ ছাড়া কলমাকান্দা উপজেলার স্থানীয় মহাদেও, গণেশ্বরী, মঙ্গেলশ্বরী, বৈঠাখালী ও বাখলা নদীর পানি ক্রমেই বেড়ে চলেছে।</p> <p style="text-align: justify;">[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট অফিস এবং সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর ও নেত্রকোনা প্রতিনিধি]</p> </article>