<article> <p style="text-align: justify;">রেলপথে দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ ঘটে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে। এর পর দুর্ঘটনা বেশি ঘটে ভুল সংকেতের কারণে। গত শুক্রবার সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুরে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে মূলত ভুল সংকেত থেকে। এই ভুলের মূলে রয়েছে অদক্ষ জনবল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটারের সংঘর্ষে বগিগুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। কমিউটার ট্রেনটি ওই দিন যাত্রী বহন না করায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরদিন গত শনিবার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে আবার ভুল সংকেতের কারণে দুটি ট্রেন একটি লাইনে চলে আসে। ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ও ঢাকা-রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস এক লাইনে এলেও অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কিন্তু এমন রক্ষা পাওয়ার ঘটনা খুব বেশি নেই। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর নরসিংদীতে চট্টগ্রাম থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস এবং বিপরীত দিক থেকে আসা মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় মহানগর ট্রেনের ওপর উঠে যায় চট্টলা। ওই দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটি জানায়, ভুল সংকেতের কারণে ওই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টলা এক্সপ্রেস মূল লাইন দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুল সংকেতের কারণে ট্রেনটি লোকাল লাইনে ঢুকে যায়। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল মহানগর গোধূলি।</p> </article> <p style="text-align: justify;">গত বছরের ১৭ এপ্রিল কুমিল্লায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে একটি মালবাহী ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। ভুল সংকেতের কারণে মূল পথে না গিয়ে মালবাহী ট্রেনটি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর সংরক্ষিত লাইনে ঢুকে পড়ে। আবার গত বছরের ২৩ অক্টোবর ভৈরবে ঘটা ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য ভুল সংকেতকে দায়ী করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়।</p> <article> <p style="text-align: justify;">প্রশ্ন হচ্ছে, রেলে বারবার কেন এই ভুল সংকেত?</p> <p style="text-align: justify;">নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রেলের এই খাতে চুক্তিভিত্তিক অদক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের দায়বদ্ধতা কাজ করে কম। এসব চুক্তিভিত্তিক লোক দিয়ে এত সেনসেটিভ কাজ করানো ঠিক না।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, আবার রেলস্টেশনগুলো ও লাইনের মানোন্নয়নের কাজ চলছে। ফলে সব কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। সব সংযোগ নতুন নকশায় পরিবর্তন করা হয়েছে। চুক্তিতে আসা এসব অদক্ষ লোকজন এই পরিবর্তনের লাইন সংযোগের বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে ভুল করে। ফলে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।</p> <p style="text-align: justify;">বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজ করলে কোনো একসময় ভুল হবে। এ জন্য সংকেতে কম্পিউটারবেইসড ইন্টারলিংক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা জরুরি। এখনো বেশির ভাগ স্টেশনে সনাতন পদ্ধতির নন-ইন্টারলিংক ব্যবস্থায় মানুষ সংকেত দেয়।</p> <p style="text-align: justify;">আবার নতুন নিয়োগ পাওয়া জনবল পুরনো সংকেত পদ্ধতিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ঠিকাদারের সরবরাহ করা পয়েন্টসম্যান রেলের বিশেষায়িত কাজ জানেন না। এসব কারণে ভুলের সংখ্যা আরো বেড়ে যাচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা এই কাজের জন্য দক্ষ নন। সংকেতের ভুল বন্ধে এখন থেকে কর্মকর্তারা কাজ করবেন।</p> <p style="text-align: justify;">২০২০ সালে প্রকাশিত রেলের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোট ৪৮৯টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৯টিতে সংকেতব্যবস্থা আছে। ৩৫৯টি স্টেশনের মধ্যে উন্নত সংকেতব্যবস্থা আছে মাত্র ১১২টিতে। অর্থাৎ প্রায় ৬৯ শতাংশ রেলস্টেশনে উন্নত সংকেতব্যবস্থা নেই।</p> <p style="text-align: justify;">রেলের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলে ১৭০টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৮৯টি স্টেশন আছে। কিন্তু সব স্টেশনে সংকেতব্যবস্থা একই রকম নয়। এতে এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়ে আছে। শুধু ২০২০ সালে রেলে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে তার ৬.২৫ শতাংশ ভুল সংকেত বা সংকেতের ত্রুটির কারণে ঘটেছে।</p> <p style="text-align: justify;">যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রেল এই খাতে জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তুলছে না। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দিলে শুধু ঠিকাদারের পকেট ভারী হয়। তাঁরা যেহেতু রেলের স্থায়ী কর্মী নন, তাই তাঁদের দায়িত্ববোধ কম থাকে। অন্য কোথাও বেশি বেতন পেলে চলে যান। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে দক্ষ জনবল তৈরি করা কঠিন হবে।</p> <p style="text-align: justify;">শুধু রেলওয়ের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ১২ বছরে রেললাইনে দুই হাজার ৬০১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৪৩ জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে ট্রেনের যাত্রী মাত্র ৩২ জন। রেলের কর্মী ৪৩ জন। এসব দুর্ঘটনায় ট্রেনের বাইরের মানুষের মৃত্যু হয় সবচেয়ে বেশি ২৬৮ জনের।</p> </article>