<p>বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন একাডেমির কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক বিবেচিত হওয়ায় চলতি বছরের জন্য এটিকে আইসিএও ট্রেইনার প্লাস ব্রোঞ্জ সদস্য হতে সিলভার সদস্যে উন্নীত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) সিভিল এভিয়েশন একাডেমিকে এ সাফল্য প্রদান করে।</p> <p>আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন একাডেমি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।</p> <p>বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত সফলভাবে আইসিএও মান বজায় রেখে বাংলাদেশে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোর্স পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উন্নয়ন কার্য গ্রহণের প্রেক্ষিতে আইসিএও ট্রেইনার প্লাস অতি সম্প্রতি সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সদস্য পদ ব্রোঞ্জ থেকে সিলভারে উন্নীত করে। যা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। </p> <p>আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ২মে ডমিনিকান রিপাবলিকে আইসিএও গ্লোবাল ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট সিম্পোজিয়াম-২০২৪ এ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিলভার সদস্য সনদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন একাডেমির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের পক্ষে উক্ত সনদ গ্রহণ করবেন।</p> <p>উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের জনবলকে স্মার্ট মানবসম্পদে পরিণত করার মধ্যদিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে দিক নির্দেশনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সিভিল এভিয়েশন একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।</p> <p>আইসিএও ট্রেইনার প্লাস পৃথিবীর সকল দেশের সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টার/একাডেমির মাধ্যমে এভিয়েশন সেক্টরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি ট্রেনিং প্রণয়ন, প্রদান ও তার মান নিশ্চিত করে থাকে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষক তৈরিতে প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান করে। আইসিএও নির্ধারিত মান অনুযায়ী ট্রেনিং কার্যক্রম সন্তোষজনকভাবে পরিচালিত হলে সদস্য রাষ্ট্রের সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টার/একাডেমির সদস্য ক্যাটাগরি নির্ধারিত করা হয়ে থাকে।</p> <p>২০২১ সালে সরকার কর্তৃক সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টারকে (সিএটিসি) সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে রূপান্তর করা হলে বেবিচক আইসিএও ট্রেইনার প্লাস সদস্যপদ লাভের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে। ২০২১ সালে আইসিএও সিভিল এভিয়েশন একাডেমির ট্রেনিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে একাডেমির মানব সম্পদ বৃদ্ধি, উন্নয়ন, প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য ইন্সট্রাক্টর কোয়ালিফিকেশন ট্রেনিং সিস্টেম প্রবর্তন, আধুনিক ট্রেনিং স্থাপনা নির্মাণ, ট্রেনিং মেটারিয়ালস প্রস্তুত, ট্রেনিং এ ব্যবহৃত সিমুলেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং আধুনিক ও অডিও-ভিজ্যুয়াল সুবিধাসহ ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপনের পরামর্শ প্রদান করে। সে প্রেক্ষিতে বেবিচক চেয়ারম্যানের ঐকান্তিক উদ্যোগে সিভিল এভিয়েশন একাডেমির বর্তমান পরিচালকের তত্পরতায় স্বল্পতম সময়ে একাডেমির সকল ক্লাসরুম ডিজিটালাইজডকরণ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও এভিয়েশন সিকিউরিটির ব্যবহারিক ট্রেনিংয়ের জন্য যথাক্রমে এটিসি সিমুলেটর এভিএসইসি সিমুলেটর স্থাপন এবং সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সকল প্রশিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আইসিএও এর তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সিভিল এভিয়েশন একাডেমির গৃহীত কার্যক্রম আইসিএও অডিট টিমসরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং তার মান সন্তোষজনক বিবেচিত হওয়ায় সিভিল এভিয়েশন একাডেমিকে প্রাথমিকভাবে ২০২২ সালে ব্রোঞ্জ ক্যাটাগরিতে সদস্যপদ প্রদান করে।</p> <p>মাত্র দুই বছরের কম সময়ে বেবিচকের পূর্ণবিন্যাসিত নতুন অর্গানোগ্রামের নব-নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ১,৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির শর্তানুযায়ী বাধ্যতামূলক ট্রেনিং এই একাডেমি হতে সম্পন্ন করা হয়। এ সময়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাধ্যতামূলক ট্রেনিং হিসেবে যথাক্রমে ৪ সপ্তাহব্যাপী ফাউন্ডেশন কোর্স, ৩ সপ্তাহব্যাপী বেসিক অফিস ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ১ ও ২ সপ্তাহব্যাপী এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি কোর্স, ৩ সপ্তাহব্যাপী এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ম্যানেজার কোর্স, ১ সপ্তাহব্যাপী এভিয়েশন সিকিউরিটি স্ক্রিনার কোর্স, ১ সপ্তাহব্যাপী কার্গো সিকিউরিটি কোর্স, ২৬ সপ্তাহব্যাপী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কোর্স, ২ সপ্তাহব্যাপী ফ্লাইট সেইফটি কোর্স, ১২ সপ্তাহ ব্যাপী এয়ারক্রাফট ফায়ার ফাইটিংকোর্স, ৩ সপ্তাহব্যাপী এয়ারক্রাফ্ট মার্শালার কোর্স, ১৪ সপ্তাহব্যাপী নেভিগেশনাল কোর্স প্রদান করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত স্বল্পতম সময়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রায় সকলকেই স্ব-স্ব কর্মস্থলে কর্ম-উপযোগী করা সম্ভব হয়েছে।</p> <p>এ ছাড়া, দেশের সবকটি বিমান বন্দরে কর্মরত বেবিচকের প্রায় ২,৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর বাধ্যতামূলক সেইফটি ও সিকিউরিটির ওপর গুরুত্বপূর্ণ রিফ্রেশার ট্রেনিং সমূহ প্রদান করা হয় এই একাডেমির মাধ্যমে। গত ১ বছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা তথা দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সসমূহ, কাস্টমস্, ইমিগ্রেশন, নিরাপত্তা বাহিনী তথা আনসার, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও এপিবিএন এর প্রায় ৭০০ সদস্যদের যাত্রী-সেবা মানোন্নয়নে আইকাও প্রণীত বিশেষায়িত ট্রেনিং প্রদান করা হয়েছে এই একাডেমিতে।</p> <p>আইসিএও টেনিং প্লাসে এর তত্ত্বাবধানে সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে ২০২২ হতে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মানের আইসিএও কোর্সসমূহ পরিচালনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, কানাডার এয়ারপোর্টে কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল (এসিয়াই), ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন, বোয়িংসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আইকাও সার্টিফাইড বিদেশি প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বেবিচকের বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীর পাশাপাশি নেপাল, ভারত, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, কাতার, চীন, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীগণ এতে অংশগ্রহণ করেছে। যার ফলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষে কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিমান বন্দর ও এয়ারক্রাফ্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ট্রেনিং এবং বিমান বন্দরের সুষ্ঠু অপারেশন ও ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত ট্রেনিং গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিষেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছে।</p> <p>এ ছাড়া, এই একাডেমি হতে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সিএএবির কর্মকর্তা-কর্মচারী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশন কার্যক্রমে নিয়োজিত হবে। বর্ণিত ট্রেনিং সমূহ সম্পন্নের ফলে আসন্ন আইসিএও অডিট এবং এফএএ অডিট এ সিএএবি-এর মানব সম্পাদ উন্নয়নের পর্যবেক্ষণটি সমাধান হবে। তাছাড়া, অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে বাংলাদেশি জনবলের আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং প্রদান করা এবং একই সাথে ট্রেনিং সমূহ বাংলাদেশে আয়োজনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথও সুগম হলো।</p> <p>ইতিমধ্যে সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সকল ইন্সট্রাক্টর স্টাফদের কোয়ালিফিকেশন বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ট্রেনিং ডেভেলপার কোর্স, কম্পিটেন্সি বেজশ ট্রেনিং কোর্স প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিভিল এভিয়েশনে কর্মরতসকল অপারেশন্স ইন্সপেক্টর, এয়ারক্রাফ্ট ইন্সপেক্টর ও লাইসেন্সিং ইন্সপেক্টরদের জন্য প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আইসিএও গভ. সেফটি অপারেটর (অপারেশন, এয়ারওর্দিনেস এবং পার্সোনাল লাইসেন্সিং) কোর্স আয়োজন করা হয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রেনিং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুটি ভিন্ন বিষয়ে আইসিএও-এর কোর্স পরিচালনার জন্য আইসিএও সিস্টেম ডিজাইন (আইএসডি) এর আওতায় সিভিল এভিয়েশন একাডেমির পরিচালক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছে। ফলে এখন থেকে দেশে-বিদেশে বর্ণিত কোর্স দুটি বাংলাদেশি প্রশিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হবে।</p> <p>অত্যন্ত সফলভাবে আইসিএও মান বজায় রেখে বাংলাদেশে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোর্স পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উন্নয়ন কার্য গ্রহণের প্রেক্ষিতে আইসিএও ট্রেনিং প্লাস অতি সম্প্রতি সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সদস্য পদ ব্রোঞ্জ থেকে সিলভারে উন্নীত করে। যা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের জনবলকে স্মার্ট মানবসম্পদে পরিণত করার মধ্যদিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে দিক নির্দেশনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সিভিল এভিয়েশন একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।</p>