<p>মাদকের মামলায় দণ্ডিত প্রকৃত আসামি নাজমুল হাসান হয়ে মিরাজুল ইসলামের সাজা খাটার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী, দুই কারা কর্মকর্তা এবং পলাতক প্রকৃত আসামিকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।</p> <p><strong>যে ঘটনায় এ আদেশ</strong><br /> ‘মাদক মামলায় যুবলীগ নেতার আয়নাবাজি/ভয়ঙ্কর প্রতারণা’ শিরোনামে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরায় একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদক চক্রের মূল হোতা। মাদক উদ্ধারের এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ওই আসামি মাদক কারবারের মূল হোতা মো. নাজমুল হাসান। ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই নেতার বাবার নাম আবুল হাসেম চেয়ারম্যান। কিন্তু গত বছর ৯ আগস্ট নাজমুল পরিচয়ে আদালতে যিনি আত্মসমর্পণ করেন তার নাম মিরাজুল ইসলাম। তার বাড়ি গাজীপুর। আত্মসমর্পণের পর আদালত নাজমুল পরিচয় ধারণ করা মিরাজুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ১১ দিন জেল খাটার পর ২০ আগস্ট তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার বিনিময়ে রীতিমতো চুক্তি করে নাজমুল হয়ে জেলে যান মিরাজুল। জামিনে বেরিয়ে এসে চুক্তির টাকা চাইতে গেলে উল্টো ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় মিরাজুলকে।</p> <p><strong>যেভাবে হাইকোর্টের নজরে আসে বিষয়টি</strong><br /> বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হাইকোর্টে আপিল করেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি আতাউর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আপিলের শুনানি চলছিল। আপিলকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রমজান খান।</p> <p>শুনানির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনে বলেন, যে আপিলের শুনানি হচ্ছে সে আপিলের আপিলকারী প্রকৃত আসামি নন। তখন হাইকোর্ট এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। দণ্ডিত নাজমুল হাসান হয়ে মিরাজুল ইসলাম সাজা খেটেছেন কিনা, তা তদন্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।</p> <p>হাইকোর্টের এ আদেশ নিয়ে খবর লিখতে গিয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আইনজীবী মোহাম্মদ রমজান খানের। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কিভাবে নাজমুল হাসানের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। জবাবে রমজান খান সেদিন কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘আমাকে এই মামলাটা দিয়েছে জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট নজরুল (সৈয়দ নজরুল ইসলাম)। উনার চেম্বার থেকে আসামি আত্মসমর্পণ করেছে। ওই আইনজীবীর চেম্বার থেকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি আমাকে দেওয়ার পর আমি হাইকোর্টে আপিল করেছি। আমি আসমিকে চিনি না।’</p> <p><strong>এরপর হাইকোর্টের বেঞ্চ পরিবর্তন</strong><br /> আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশের পর নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। পরে প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য তা বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চে পাঠান। সে ধারাবাহিকতায় বিষয়টিতে শুনানির পর আদেশ হলো।’</p> <p>আরো পড়ুন- <a href="https://www.kalerkantho.com/online/business/2024/04/24/1381931"><u><span style="color:#e74c3c;">সোনার দাম ভরিতে কমল ২১০০ টাকা, আজ থেকেই কার্যকর</span></u></a></p> <p>আজ বুধবার শুনানি সময় নাজমুল হাসানের আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মোহাম্মদ রমজান খান মামলা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে আবেদন করেছেন বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। </p> <p><strong>যাকে যে ব্যাখ্যা দিতে হবে</strong><br /> <strong>এক.</strong> ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. মোরশেদ আলমকে বলা হয়েছে, নাজমুল হয়ে মিরাজুল যেদিন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেদিন কী দেখে বা বুঝে তিনি আসামিকে সনাক্ত করেছিলেন। তাঁকে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।</p> <p><strong>দুই.</strong> নিম্ন আদালতে প্রকৃত আসামি নাজমুল হাসানের আইনজীবী ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম। এ ঘটনার বিষয়ে তাঁদের অবস্থান কী, হলফনামা করে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। </p> <p><strong>তিন.</strong> আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছেন, প্রমাণপত্রসহ তার লিখিত ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার দিতে বলা হয়েছে। আর ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলীকে বলা হয়েছে, তিনি কিভাবে আসামির স্বাক্ষর কীভাবে সত্যায়িত করেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে।</p> <p><strong>চার.</strong> দণ্ডিত প্রকৃত আসামি নাজমুল হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ রমজান খানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে। সবাইকে সাতকার্য দিবসের মধ্যে হলফনামা করে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।</p>