<article> <p style="text-align: justify;">৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি স্থায়ী দুর্নীতিও এগিয়েছে। সাফল্যের বিপরীতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অনেক বেশি। তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আপাত স্ববিরোধী বিষয় নয় এবং এই উন্নয়ন বিস্ময়করভাবে হয়নি, বরং প্রথাগতভাবেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে সম্প্রতি সরকার উদ্যোগী হয়ে একীভূত করার নামে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই দুই অংশের মধ্য থেকে সরকারি দলের নেতৃত্বে, সরকারের অভ্যন্তরে, সংসদে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও মন্ত্রিসভায় স্থান পান। </p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ-ইকোনমি, পলিটিকস, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনু্ষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। বইটি সম্পাদনা করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রওনক জাহান।</p> <p style="text-align: justify;">সিপিডির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রফেসর রওনক জাহান বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। উন্নয়ন কিংবা পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়েছে। গত ৫১ বছরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন হয়েছে। সেসব বিষয়ে বইয়ের লেখকরা ডাটা অ্যানালিসিস করে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো। এর আগে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই করা হয়েছিল। তখন ২৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এতটা উচ্চাশা ছিল না। সেখানে তৈরি পোশাক খাতে কতটুকু মূল্য সংযোজন হতে পারে সে বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। রেমিট্যান্স নিয়ে এত চিন্তা-ভাবনা করা হয়নি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির বাইরে আরো কিছু বিষয় দেশের উন্নয়নে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। সেটা হলো, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিপ্লব; মানুষের মধ্যে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই প্রবণতার কারণে দেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জগতে বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে। সেটা হলো, অন্তর্ভুক্তিমূলক দূরদৃষ্টি থেকে বর্জনকামী দূরদৃষ্টি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বইটির বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ব্যবসা এখন আগ্রহী রাজনৈতিক ও এলিটদের সঙ্গে চক্র গড়ে তুলে সুবিধা নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখন রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করে এবং সমন্বিত রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলে তাঁরা নীতিমালার গতিমুখ নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। </p> <p style="text-align: justify;">সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাই-টেক খাতে রপ্তানি হয় মাত্র ১ শতাংশ। যেখানে ভিয়েতনামে ৪৫ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, তবে শ্রমনির্ভর সক্ষমতা অর্জনে আমরা পিছিয়ে। নিম্ন আয় ও মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ব্রাজিল ৩৫ বছর ধরে আটকে আছে। ফিলিপাইন ৩৩ বছর ধরে একই জায়গায় আটকে আছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি, দক্ষতা ও মানবসম্পদের উন্নয়ন প্রয়োজন।’</p> <p style="text-align: justify;">বইটির বিভিন্ন অধ্যায় যাঁরা রচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনেকে বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইনে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতবিষয়ক সাবেক প্রধান সৈয়দ আখতার মাহমুদ অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের শস্য উৎপাদন বেড়েছে; উন্নতি হয়েছে গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থার; এসেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়। এগুলোর সম্মিলিত ফল হচ্ছে উন্নয়ন।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, দুর্নীতির চক্র ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তা না হলে সংস্কার হবে না; সরকারের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতাও বাড়বে না।</p> <p style="text-align: justify;">অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, দেশের উন্নয়ন নিয়ে যখন কথা বলা হয়, তখন গড় সূচক নিয়ে কথা বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। দেশে যেমন অসমতার হার সবচেয়ে বেশি, তেমনি ধনীদের ধন সঞ্চয়ের হারও অনেক বেশি। সে জন্য ধনী ও গরিবের সূচক পৃথকভাবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল হাসান বলেন, শিল্প খাতের শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিকরা অনেক কষ্ট করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পশ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমেছে। যাঁরা প্রবাস আয় পাঠাচ্ছেন, তাঁরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হচ্ছে না, এখন সেটা বুঝতে হবে। এই সময় নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে প্রধানতম হলো বৈষম্য। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি যুগ মিলে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমানে বৈষম্য তাকেও ছাড়িয়ে গেছে।</p> </article>