<p>দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার আগ্রাসনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে খুলনা-সাতক্ষীরা সমুদ্রের অংশ হবে। রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত লবণ পানি চলে আসবে। এমনকি ঢাকা শহরের চারপাশও লবণাক্ত হয়ে যাবে।’</p> <p>শনিবার (৩০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ আয়োজিত ‘উপকূলের জীবন-জীবিকা : সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক  জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p>তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে লবণাক্ততা আরো ভেতরে প্রবেশ করবে। এমনকি ঢাকা শহরের কাছে পৌঁছে যাবে। ঢাকা শহর অনেক উঁচু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঢাকা শহরের উচ্চতা ২৫ ফিট। কিন্তু ঢাকা শহরের পাশে কামরাঙ্গীর চর ও জিঞ্জিরার উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট। ফলে ওই এলাকায় আগামীতে লবণ পানিতে প্লাবিত হবে।  যা আমাদের সংকটকে বাড়িয়ে দেবে।</p> <p>ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রকৃতি বদলাচ্ছে। আমাদের এই প্রকৃতিকে বুঝতে হবে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশ আজ চার ঋতুতে পরিণত হয়েছে। আষাঢ়েও এখন বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না। ফলে জীবন-জীবিকায় সংকট বাড়ছে। তাই উপকূলের মানুষ ভালো নেই। আগামীতে উপকূলে জলোচ্ছ্বাস ও দুর্যোগ বাড়বে। যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। এই কাজে কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>রোমান ক্যাথলিক চার্চ ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজের সভাপতিত্বে ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্যসচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় জাতীয় সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী এবং ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভের গবেষণা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল ফারুক।</p> <p>সংলাপে বক্তৃতা করেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সহ-আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, উপকূল রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক নূর আলম শেখ, চুনতি রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক সানজিদা রহমান, স্কুল শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা নূর প্রমুখ।</p> <p>সংলাপে সাবেক সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, যারা নদী ধ্বংস করছেন, যারা খাল দখল করছেন তারা এই সমাজেরই, আমাদেরই পরিবারের, সমাজের। এরা সব সময় ক্ষমতার আশপাশেই থাকেন। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় সুধীজনসহ সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।</p> <p>ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদী ও জলাশয় দখল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না। নদীর দখল করে তৈরি করা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী বাঁচাতে হবে। অবৈধ দখলদার ও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।</p> <p>শরীফ জামিল বলেন, দেশের অন্যান্য পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকাগুলোর মধ্যে উপকূল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির ফলে উপকূলের মানুষসহ বাস্তুসংস্থান আজ সংকটের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি নানাবিধ অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে উপকূলীয় মানুষের টিকে থাকা এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাই একত্রে কাজ করতে হবে।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেন, উপকূলের মানুষের কান্না আমরা শুনতে পাই। তাদের কান্না যেন আমাদের হৃদয়েও বাজে। সৃষ্টিকর্তার এই পৃথিবীর সব মানুষ ভাই ভাই। আমরা সংঘাতে না জড়িয়ে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।</p>