<article> <p style="text-align: justify;">দেশে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হেরোইনের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এতে জড়িত। বিদেশি নাগরিকদের সহযোগিতায় বাংলাদেশকে তারা মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।</p> <p style="text-align: justify;">সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া তিন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ডিএনসি, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের জব্দ করা মাদকদ্রব্যের তালিকা বিশ্লেষণে জানা যায়, দেশে গত এক বছরে চোরাপথে আসা ৭০০ কেজি ৯২৮ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়। একই সময়ে কোকেন জব্দ করা হয়েছে ১৩ কেজির বেশি।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকেই চোরাপথে আসা বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইনের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি হেরোইন জব্দ করা হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">হেরোইনের মূল উৎস আফিম। মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়ে যাওয়ায় এই নেশার দ্রব্য সীমান্তপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে।</p> <p style="text-align: justify;">ডিএনসির একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, গত বছর যে পরিমাণ হেরোইন জব্দ করা হয়েছে, তা গত ১৫ বছরের যেকোনো সময়ে চেয়ে দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি।</p> <p style="text-align: justify;">তদন্ত সূত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানায়, রাজধানীর গুলশান, বানানী, ধানমণ্ডিসহ চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় হেরোইন বিক্রি করা হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ধনীর দুলালরা এই মাদকে আসক্ত। দেশে অবস্থানকারী অনেক বিদেশিও এসব মাদকদ্রব্যের ক্রেতা।</p> <p style="text-align: justify;">দেশে কোকেনের চাহিদা হেরোইনের চেয়ে কম জানিয়ে সূত্র বলছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পের পাশাপাশি মতিঝিল, গুলশান, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় সাম্প্রতিক সময়ে হেরোইন বিক্রি বাড়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।</p> <p style="text-align: justify;">সর্বশেষ গত ২০ মার্চ মতিঝিল এলাকা থেকে ছয় লাখ টাকার হেরোইনসহ রাবেয়া বেগম ও মিম রেজা নামের দুই নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০। এ ব্যাপারে গতকাল র‌্যাব-১০-এর পরিচালক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁরা হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক এনে রাজধানীর ধনীর দুলালদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ ও র‌্যাবের তথ্য মতে, হেরোইন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী। সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকায় হেরোইন তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে হেরোইন ঢুকছে দেশে।</p> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় হেরোইন তৈরির কারখানা রয়েছে। এই তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। </p> <p style="text-align: justify;">ডিএনসি সূত্র বলছে, রাজশাহী ও ঢাকায় তিন শতাধিক হেরোইন ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হেরোইনের পাশাপাশি কোকেন ব্যবসায়ও জড়িত। এরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না হেরোইনের ব্যবসা। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম, জহিরুলসহ আরো অনেকের নাম রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">রাজশাহীর চারঘাটের টাঙন এলাকা থেকে গত ১৯ মার্চ রাতে ফরিদ আহমেদ নামের এক মাদক কারবারিকে ৭২ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার হেরোইনের ব্যবসা করছিলেন বলে জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম।</p> <p style="text-align: justify;">গত ১১ মার্চ সিরাজগঞ্জে ৫০০ গ্রাম হেরোইনসহ রফিকুল ইসলাম এবং তাঁর ছেলে মমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ধামরাই এলাকা থেকে ৯৮০ গ্রাম হেরোইনসহ সাদ্দাম হোসেন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।</p> <p style="text-align: justify;">গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার এবং গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকা থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা মূল্যমানের হেরোইনসহ জামিল হোসেন, মিজানুর রহমান মিজান, তারিফ হোসেন ও শহিদুল হক নামের চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। এই তথ্য দিয়ে র‌্যাব-৪-এর পরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, তাঁরা সীমান্ত এলাকা থেকে হেরোইন এনে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বিত্তশালীদের সন্তানদের কাছে বিক্রি করতেন।</p> <p style="text-align: justify;">বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। </p> <p style="text-align: justify;">মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সায়েন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স থাকলেও দিন দিন এর ছোবল বাড়ছে। এ জায়গায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও কিছু বেসরকারি সংস্থার আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।</p> </article>