<article> <p style="text-align: justify;">গতকাল শনিবার সকাল ১১টা। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে কয়েকজনের কান্নাকাটি। কাছে গিয়ে জানা যায়, তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত মনসুর আলীর স্বজন।</p> <p style="text-align: justify;">বুক চাপড়ে এক নারী চিৎকার করছিলেন, ‘সারা দিন রোজা রাইখা বাসায় ইফতার করতে চাইছিল। কইলো আগুন নিভাইয়া আহি, কিন্তু নিজেই পুইড়া মরলো।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনসুর আলী। পেশায় তিনি ছিলেন রাজমিস্ত্রি। মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন স্ত্রী দীনা আক্তার। বলছিলেন, ‘স্বামী মইরা গেল, তারে ছাড়া কেমনে চলমু? গরিব মানুষ। দুই মাইয়া এহনো শিশু। তাগো কেমনে মানুষ করুম?’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় চার বছরের শিশু তৈয়বা। গত শুক্রবার সোলেমান মোল্লার (৪৫) মৃত্যুর পর গতকাল শনিবার মারা গেলেন মনসুর আলী ও তৈয়বা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত বুধবার ইফতারের আগে কোনাবাড়ী এলাকার টিনশেড কলোনিতে আগুন লাগে। এতে নারী-শিশুসহ ৩৬ জন দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৮ জনের অবস্থাই সংকটাপন্ন। এই তথ্য দিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল।</p> </article> <p style="text-align: justify;">চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তি থাকাদের সাতজনের বয়স ১০ বছরের মধ্যে, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী আছে ছয়জন। ১৬ জন দগ্ধ হয়েছে ৫০ শতাংশেরও ওপরে। ২৬ জনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ১২ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনজন রোগী আইসিইউ এবং দুজন এইচডিইউয়ে ভর্তি।</p> <article> <p style="text-align: justify;">বার্ন ইনস্টিটিউটে তাদের স্বজনরা প্রিয়জনের সুস্থ হওয়ার প্রার্থনায় অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। তাদের নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই। পাশাপাশি কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটল, এ ঘটনায় দায় কার—এসব প্রশ্নও তুলছে তারা।</p> <p style="text-align: justify;">চারতলার আইসিইউয়ের সামনে দেখা যায় অনেক মানুষের ভিড়। সেখানে থাকা জমিলা খাতুন (৭৫) বলেন, তাঁর ছেলে আরিফুলও ৭৬ শতাংশ দগ্ধ হয়ে আইসিইউয়ে ভর্তি আছেন। আরিফুলের স্ত্রী সুমি, দুই সন্তানসহ স্বজনরা সেখানে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে সুমি জানান, তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির ওষুধ, চিকিৎসা খরচ জোগাতেন একমাত্র ছেলে আরিফুল। ওই দিন আগুন নেভাতে গিয়েই দগ্ধ হন তাঁর স্বামী।</p> <p style="text-align: justify;">ইনস্টিটিউটের বারান্দায়ও বসা ছিল দগ্ধদের স্বজন। মেঝেতে বসা এক নারী বলেন, ‘খবর পাইয়া সিরাজগঞ্জ থাইকা আইয়া হুনি আমার পোলা লালনের অবস্থা ভালা না। পোলার টাহায় আমাগো সংসার চলে। এহন কী হইব?’</p> <p style="text-align: justify;">পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. নাদেন (২২)।  ওয়ার্ডের বাইরে বসে বাবা আব্দুর রহিম ছেলের সুস্থতা কামনা করছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলের শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সঙ্গে শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">পোশাক কারখানার শ্রমিক আরিফুল ইসলাম (৩৫) এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। আরিফুলের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, তিনিও গার্মেন্টসকর্মী। এখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তাঁর সামনেই তাঁর স্বামী দগ্ধ হন। ওই সময় সন্তান নিয়ে ঘরের ভেতর থাকায় তাঁরা রক্ষা পান।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত শুক্রবার এই আগুনে নিহত সোলাইমান মোল্লার মরদেহ এলাকায় চাঁদা তুলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় তাঁর নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।</p> </article>