<p>অবসরের ছয় মাসের মধ্যে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরোত্তর আর্থিক সুবিধা পরিশোধ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।</p> <p>বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেন। চূড়ান্ত শুনানির পর এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেওয়া হয়। </p> <p>আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুন চৌধুরী।<br />   <br /> বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার করার জন্য ১৯৯০ সালে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে সরকার। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরোত্তর সুযোগ-সুবিধা (পেনশন) নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে গঠন করা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড।</p> <p>২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ কেটে নিত। আর বোর্ড কেটে নিত ৪ শতাংশ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট্র প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর ৬ প্রবিধান এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর ৮ প্রবিধান অনুসারে মূল বেতনের মোট ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হত।</p> <p>২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল এ দুটি প্রবিধানমালার সংশ্লিষ্ট প্রবিধান সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংশোধিত প্রবিধান অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন থেকে ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ এবং বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশ, মোট ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া শুরু করে। প্রথমে ৪ শতাংশ বাড়তি কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এক পর্যায়ে এ নিয়ে তারা আন্দোলনেরও নামে। পরবর্তীতে বাড়তি ৪ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বাড়তি আর্থিক সুবিধার দাবি তোলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে সংক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারীরা সংশোধিত প্রবিধানের প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।</p> <p>ওই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপনের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুলটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অবসরোত্তর আর্থিক সুবিধাসহ যাবতীয় সুবিধা ছয় মাসের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করা হয়। এ সম্পূরক আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। অবসরের ছয় মাসের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরোত্তর সুযোগ-সুবিধা পরিশোধ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া রুলে। এসব রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর তা নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।</p> <p>আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন থেকে যে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে, সে হারে তাদের অবসরোত্তর আর্থিক সুবিধা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এবং অবসরের ছয় মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>এ আইনজীবী বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার পর তাদের অবসরোত্তর সুযোগ -সুবিধা পেতে তিন-চার বছর কেটে যায়। প্রাপ্য টাকা পেতে তাদের নানা জায়গায় ধর্না দিতে হয়। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন ছয় মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে।’</p> <p>ট্রাস্ট এবং বোর্ডের আইনজীবী মামুন চৌধুরী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ২৫ বছর চাকরি করে অবসরে গেলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ৭৫টি মূল বেতনের সমান (সুদসহ) আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। আগে তাদের মূল বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। এখন ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে যেহেতু ৪ শতাংশ বেশি কেটে নেওয়া হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই আনুপাতিক হারে তারা আর্থিক সুবিধা বেশি পাবেন।’</p> <p>এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘রায়ের লিখিত অনুলিপি পেলে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবসর সুবিধাটা পান সে জন্য হাইকোর্ট একটি নীতিমালা করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী।</p>